:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
রোমেল রহমান

কবি, গল্পকার

পেলাস্‌টিক ও বাঘডাসা
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

পেলাস্‌টিক ও বাঘডাসা

পুন্নিমার চান্দের দুইদিন আগের রাত্রে গল্লামারি ব্রিজের আগের চেকপোস্টে তিনজন যুবক পুলিশের হাতে ধরা খায়। শোনা যায়, শহর খুলনার সাম্প্রতিক ইতিহাসে রোজ ধরা খাওয়া যুবকদের মধ্যে এই তিন যুবককে পুলিশদের ভাল্লাগে! বহুদিন পর পুলিশেরা এই তিনজনকে বা এই তিন যুবক এইরকম পুলিশ পেয়ে আরাম পায়। গতানুগতিক চোর ডাকাত মাদকের কারবারি কিংবা সাধারণ আদমি ধরে ধরে পুলিশের যখন একঘেয়ে অবস্থা তখন এই তিনজন উদয় হয় পুন্নিমার দুইদিন আগের রাত্রে। পুলিশ চেকপোস্ট থেকে ব্যাটারি চালিত ইজিবাকের এগিয়ে আসার দিকে টর্চের আলো ফেলতেই ইজিবাইক থামে। পুলিশ এগিয়ে এসে ঝুঁকে টর্চ মেরে বলে, বাইরে আসেন। তারা তিনজন বাইরে আসা মাত্র, পুলিশদের একজন জিজ্ঞাস করে, কই যান আপনারা এতো রাইতে? যুবকদের একজন বলে, ব্রিজের অইপার! পুলিশদের একজন বলে, ঐপার কোথায় যান, ভার্সিটি? ভার্সিটির স্টুডেন্ট? যুবকদের একজন বলে, জী না! তখন পুলিশেরা পালে অধিক হাওয়া পায়। ফলে পুলিশদের একজন জিজ্ঞাস করে, এতো রাইতে বাইরে কেন? যুবকদের একজন বলে, এম্নেই! পুলিশরা পরস্পরের দিকে চোখাচুখি করে বলে, এম্নেই? এতো রাইতে? যুবকদের অন্য একজন বলে, না ধরেন যাইয়ে হুতাশে… হুদাহুদাই! পুলিশদের একজন কেউ নিচু স্বরে বলে, খায়া আসছে! তখন যুবকদের একজন বলে, এই ধরেন আচুইক্কা মন চাইলো ঘুল্লা খাইতে, তাই বাইরাইলাম! পুলিশেরা আবার নিজেদের মধ্যে চোখাচুখি করে তারপর বলে, তা ব্রিজের ঐপারে ক্যান? ভার্সিটি এলাকায়? তামাক খাইতে যান? যুবকদের একজন বলে, পামরুটি কিনতি কি আপনি ভার্সিটি যান?
পুলিশরা বিরক্তি নিয়ে তাকায়! সেই যুবক বলে, যেই মাল অলিগলিতে পাওয়া যায় সেই জিনিস টানতে এইখানে আসবো কোন দুঃখে? পুলিশদের একজন বলে, তাইলে এতো রাইতে যান কই? যুবকদের একজন বলে, …হতি পারে জিরো পয়েন্ট যাইয়ে কামরুলের চুঁইঝাল দিয়ে রান্দা গরুর গোস্ত দিয়ে ভাত খাতি পারি, আবার ভার্সিটির খানজাহান আলী হলের রাস্তায় যাইয়ে পরাটা আর বেগুন ভাজা খাতি পারি কিংবা ধরেন যাইয়ে, রূপসা ব্রিজ চইলে গেলাম! বিরিজের উপরেরতে রূপসা নদীর দিকি তাকায় থাকতি ভাল্লাগে! আবার ধরেন যাইয়ে ইজিবাইক নিয়ে বইঠেকাঠার দিকি যাতি পারি কিংবা পানখালি গেলাম! এই শীতির রাইতি হেব্বি পিনিক! আবার হতি পারে যাইয়ে বেশি পিনিক উইঠে গেলি চুকনগরও চইলে যাতি পারি, সেইখানে যাইয়ে আব্বাসের বিখ্যাত খাসি খায়ে আসলাম!

পুলিশদের একজন বলে, ইয়ার্কি হয়ে যাচ্ছে না বেশি? আমাদের কি ইয়ার্কি ইয়ার্কি লাগে? যুবকদের একজন বলে, ইয়ার্কি করলাম কই সত্যি কথা কলাম! সত্যি যদি ইয়ার্কি মনে হয় তালি আপনার অন্তরে পাপ! পুলিশদের একজন যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে বলে, বাড়ি কই আপনাদের? যুবকদের একজন বলে, আমার বাড়ি টুটপাড়া! যুবকদের অন্যজন বলে, আমার বাড়ি বাইনেখামার! পুলিশ বলে, কোন বাণিয়াখামার? যুবক বলে, পূর্ব বাইনেখামার! যুবকদের অন্যজন বলে, আমার বাড়ি পশ্চিম বাইনেখামারের হিন্দুপাড়ায়! পুলিশদের একজন বলে, একবারে ঐ মাথারতে শুরু কইরে এই মাথা পর্যন্ত পরপর তিনজন! বিরক্ত অফিসার বলে, তিন জাগার তিনজন এই শীতের রাইতে একজায়গায় হয়ে বের হইস পিনিক নিতি তাই না? এই এনাদের বডি সার্চ করো!
ফলে পুলিশেরা এগিয়ে আসে সার্চ করতে! যুবকদের একজন বল ওঠে, গা না হাতালি হয় না? আমার আবার সুড়সুড়ি জম্মের! পকেটে যা আছে বাইর কইরে দিচ্ছি? পুলিশ বলে, হোলের গোঁড়ায় টেপ মাইরে ইয়াবা নিয়ে যাবা আর আমরা গায়ে হাত দেবো না? যুবক যুক্তি মেনে নিয়ে বলে, আচ্ছা তাইলে একটা রিকোয়েস্ট, একটা পলিথিন পইরে নিলি ভালো হয় হাতে! তাইলে ধরেন যাইয়ে আপনার হাতের জীবাণু আমার হোলে লাগলো না; তারপর যাইয়ে ধরেন আরেকটা পলিথিন পইরে নেলেন তাতে আমার হোলের জীবাণু আমার দোস্তের হোলে ট্রান্সফার হল না আপনার হাতের মারফৎ! বিরক্ত পুলিশটা খেঁকিয়ে উঠে বলে, অনেকক্ষণ কিন্তু আপনি আপনি করছি এইবার কিন্তু তুই-তোকারি লাইনে নিয়ে যাবো! ফলে যুবকরা আর আপত্তি করে না। শুধু সুড়সুড়ি বেশি যুবক একটু খিলখিল করে ওঠে কয়েকবার! তিনজনের বডি সার্চের পর পুলিশ জানায়, স্যার কিছু নাই, পুরাই পিলাস্‌টিক!
বিরক্ত পুলিশ অফসারটি বলে, সন্দেহভাজন হিসাবে তিনটারেই বসায় রাখো! ঝামেলা আছে এদের! ফলে যুবকদের একজন ফোন বের করে কল দিতে যায়, অম্নি এক পুলিশ বলে ওঠে, ফোন রাখেন সোনা! নো ফোনাফুনি! কোন নেতা-পাতিনেতা এলাউ না। যুবক ভ্রু কুঁচকে বলে, আমাগের কি হাফ লেডিস মনে হয় আপনার? তিন দুগুণে ছয়ডা বিচি হাতায় দেখলেন না কেবল? বিরক্ত পুলিশটা তাকিয়ে পরে। যুবক বলে, আমার মা’র প্রেসারের সমস্যা! বাড়ি জানায় দিচ্চি আইজ রাতে আস্পো না বাড়ি তাই ফোন দিচ্চি! পুলিশরা শান্ত হয়। ফলে যুবক তার বাড়ি ফোন দেয়। সম্ভবত তার ভাই ধরে। ফোনে যুবক বলে, আস্পো নানে আজকেরে। বাঘাডাসা ধরিছে! …হয়! …গল্লামারিরতে! …হয় হয় বাঘডাসা!

পুলিশ বলে, হোলের গোঁড়ায় টেপ মাইরে ইয়াবা নিয়ে যাবা আর আমরা গায়ে হাত দেবো না? যুবক যুক্তি মেনে নিয়ে বলে, আচ্ছা তাইলে একটা রিকোয়েস্ট, একটা পলিথিন পইরে নিলি ভালো হয় হাতে! তাইলে ধরেন যাইয়ে আপনার হাতের জীবাণু আমার হোলে লাগলো না; তারপর যাইয়ে ধরেন আরেকটা পলিথিন পইরে নেলেন তাতে আমার হোলের জীবাণু আমার দোস্তের হোলে ট্রান্সফার হল না আপনার হাতের মারফৎ!

ফোনে ছেড়ে দেবার পর, এক পুলিশের মুখে মিচকি হাসি দেখা যায়। রাগান্বিত পুলিশটির চোখ কোঁচকান! সে জিজ্ঞেস করে, বাঘডাশা কি জিনিস? যুবকদের একজন বলে, বাঘাডাসা চেনেন না? তালি বাড়া আপনি কিরাম পুলিশ? বাড়ি কুয়ানে আপনার? সুন্দরবন এলাকায় না তাই না?
পুলিশটি ঈষদ বিব্রত হয়ে বলে, চুপ! ঐ কোনায় গিয়ে বসো! চুপচাপ খিঁচ মেরে বসে থাকবা!
তিন যুবক গিয়ে প্রায় গোল হয়ে হাঁটু মুড়ে বসে মোবাইল টিপতে থাকে। পুলিশরা তাদের দেখে। একজন সিগারেট ধরায়। পুলিশদের হিংসে হয় যুবকদের স্বাধীন স্বাধীন মুখ গুলো দেখে। ফলে একজন পুলিশ বলে, ইহ! দেখেন বদমাইশ গুলানরে! কোন চিন্তা নাই! এক্কেবারে ফুরফুরা ভাবে বইসে মোবাইল টেপাটেপি করতেছে! কোথায় গিয়ে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করবে! পুলিশ ধরছে বলে কথা, হাত পা ধরবে আমাদের! তারপর মীমাংসা হবে! তা না কোন চিন্তা নাই এমন একটা গা ছাড়া ভাব! অন্য একজন পুলিশ বলে ওঠে, শেষ জামানা! আখেরি জামানার পোলাপান গুলাই এরাম! মহা ডেঞ্জারাস! পাত্তা দেয় না, পাত্তা খায়ও না! পুলিশদের একজন কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখে তারা তিনজন একটা মোবাইল অন করে ঝুঁকে কিছু একটা খেলায় ব্যস্ত। কৌতূহলী পুলিশটি এগিয়ে যেতেই তারা বলে ওঠে, আসেন ভাই আমাগের একজন কম পরিছে। আপনি আসেন চাইরজনে মিলে খেলি!
কৌতূহলী পুলিশটার কৌতূহল আরও দ্বিগুণ হয়ে যায় ফলে সে জিজ্ঞাস করে, কি খেল্বা? যুবকদের একজন বলে, লুডু! ফলে কৌতূহলী পুলিশটার কৌতূহল চারগুন হয়ে যায় এবং সে বলে, লুডু? তা আবার মোবাইলে? যুবকদের একজন বলে, হয়! হেব্বি মজা! আসেন একদান খেল্লি টের পাবেন! কৌতূহলী পুলিশটা বলে, এডা কি আসল লুডুর মতন? যুবকদের একজন বলে, বসেন আগে, একদান খেল্লিই টের পাবেন্নে কোন্ডা আসল! ফলে কৌতূহলী পুলিশটার কৌতূহলের বাঁশি বেজে ওঠে এবং সে জার্সি পরা অবস্থাতেই তাদের তিনজনের সঙ্গে হাঁটুমুড়ে বসে লুডু খেলতে নিমগ্ন হয়।

কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশটি ছক্কা ফেলবার তীব্র মাদক উত্তেজনায় ডুবে যায়! ফলে অন্য পুলিশরা ভ্রু কুঁচকে তাকায়, তাদের হিংসে হয়! তারা বুঝতে চেষ্টা করে কাহিনাডা কি? ঠিক তখন একটা ইঞ্জিনের রিক্সা যেন পংখিরাজের মতো ক্ষিপ্র গতিতে ফাঁকা রাতের রাস্তার বুকে উড়ে যাচ্ছিলো! পুলিশদের একজন চালকের মুখে টর্চ মেরে থামার সিগন্যাল দিতেই রিক্সাটা থামে কিছুদূর গিয়ে তারপর ঘুরিয়ে রিক্সা এগিয়ে আসে পুলিশ চৌকির কাছে। পুলিশের একজন জিজ্ঞেস করে, কই যাস? রিকশাওয়ালা বলে, খুলনা মেডিকেল হাঁসপাতালে স্যর! পুলিশদের অন্য একজন বলে, রিক্সায় কে? ঠিক তখন রিক্সার হুড ফেলে দেয় ভেতরে বসে থাকা বোরকা পরা যাত্রীটি! নারী কণ্ঠটি বলে ওঠে, ভাই আমার রোগী হাঁসপাতালে আমি ব্যস্ত! পুলিশদের অন্যজন বলে, ব্যস্ত আমরা সবাই! কিন্তু এতো ব্যস্ত ক্যান? নাকি অন্য লাইন? ফলে মহিলা বিব্রত হয়! তখন আগের পুলিশটি রিকশাচালককে বলে, তোর সিটকভার তোল! তল্লাশি হবে! মাল নিয়া যাইতেছস ভাগ দিবি না তা কি হয়? রিকশাওয়ালা যাত্রীকে বলে, আপা এট্টু নাইমে দাঁড়ান! ফলে বোরকা পরা নারীটি নেমে দাঁড়ায়।
বিরক্ত সেই পুলিশটি বলে, আপনি এতো রাতে একা যাচ্ছেন কেন? লাইনটা কি? মহিলাটি বলে, একা কোথায়? বিরক্ত পুলিশটা বলে, একাই তো! সঙ্গে অন্য কেউ নাই! বোরকা পরা নারীটি বলে ওঠে, কেন আমি একা না তো, তিনজন! ফলে সব পুলিশ বিভ্রান্ত বোধ করে! তখন মহিলাটি বলে, আমি আর আমার দুই কান্ধের দুই ফেরেশতা! আমরা তিনজন যাইতেছি! ফলে একজন পুলিশ এই উত্তরে ফিক্‌ করে হেসে ওঠায় নারীটি বলে ওঠে, ব্যাপারটা হাসির না ভাই! আমারে ছেড়ে দেন আমি ব্যস্ত! আর না হোলে হাঁসপাতালে পৌঁছায় দিয়াসেন আপনাদের গাড়ি দিয়ে। গেলেই দেখতে পারবেন রোগী আছে। আপানাদের সন্দেহের শেষ হবে।

রিক্সার সিট কাভারের নিচে চেক শেষে পুলিশটি বলে, তুই ভাগ! রিকশাওয়ালা বলে, আফারে নিয়ে যাই? পুলিশ বলে, যা ভাগ! রিকশাওয়ালা বলে ফেলে, না ওনারে নিয়ে যাবো আমি, হাসপাতাল দিয়াস্পো! পুলিশটি রিক্সাওয়ায়াকে হাতে থাকা টর্চ দিয়ে একটা ঘা বসিয়ে দেয় এবং নিয়মিত অভ্যাসবশত রিক্সার টায়ারের হাওয়া ছেড়ে দিয়ে বলে, যা বিদায় হ! ফলে অস্রুসজল চোখে রিকশাওয়ালাটি একটু দূরে গিয়ে বসে থাকে পাম ছাড়া রিক্সা নিয়ে। তার কেটে যাওয়া চোখের কোনা দিয়ে রক্ত নেমে আসে। তখন পুলিশদের একজন বলে, শুয়োরের বাচ্চাটা যায় না দেখো! বসে তাকায় আছে! লোকজনের সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, পুলিশ মানে না! ইয়ার্কি করে পুলিশের সাথে! সবার মধ্যে কেমন জানি একটা ইয়ার্কি ইয়ার্কি ভাব! তখন লুডু খেলা পুলিশটাকে একটা ধমক দেয় বিরক্ত পুলিশটা, হেঁই; এদিক আসো? কি করতেছো ওদের সাথে? লুডু খেলার উত্তেজনায় নিমজ্জিত পুলিশটি বলে, আসি স্যার এক মিনিট আর দুইটা চাল দিয়ে আসি! খুব ডেঞ্জারাস সিচুয়েশনে আছি স্যার! সবাই মিলে আমারে খেয়ে ঘরে তুলে দিচ্ছে স্যার! একটাও পাকা করতে পারি নাই স্যার! সবাই মিলে মারতেছে!
তখন নারী কণ্ঠটি বলে ওঠে, আমারে কি দয়া করে ছাড়বেন? আমার রোগী গুরুতর। রিক্সাওয়ালাকে পেটানো পুলিশটা বলে, আপনারে সার্চ করবো তারপর ছাড়াছাড়ি! আপনি এবং আপনার সঙ্গী দুইজনারে! ফলে মহিলাটি বলে, মহিলা পুলিশ ডাকেন তারপর আমার তল্লাশি হবে! তখন রিকশাওয়ালা পেটানো পুলিশটা বলে, তা নয় আনা যাবে! কিন্তু আপনার বাকি দুইজন সঙ্গী কই? তখন মহিলা বলে ওঠে, আপনার কান্ধের দুইজনরে জিজ্ঞাস করেন তারা খুঁজে দেবে! ফলে পুলিশরা সবাই ভির্মি খায়! তখন লুডু খেলা পুলিশটা এসে বলে, কঠিন জিনিস স্যার! লুডু খেলায় যে এতো মজা আগে বুঝি নাই! আসামি ধরার চেয়ে উত্তেজনা বেশি! তখন বিরক্ত পুলিশটি বলে, এই মহিলারে ঐ তিন পিলাস্টিকের সাথে বসায় রাখো! ইনিও সন্দেহভাজন ক্যারেক্টার!

বিরক্ত পুলিশটার ভ্রুভাঁজ পরে। সে বলে, আমারে কি আপনার ইয়ার্কি ইয়ার্কি লাগে? যুবকদের একজন বলে, না ভাই! মাইণ্ড খায়েন না! লোকে আপ্নাগে বাঘডাশা কয়ে ডাকে আবডালে! তাই জিনিসটা দেখায় দিলাম। যেহেতু বাঘ হচ্ছে বিলাই প্রজাতির বড় বিলাই! সেই হিসাবে বিলাই হচ্ছে যায়ে একরকম ছোট বাঘ! ফলে বাঘডাশা হচ্ছে এগের মাঝামাঝির এট্টু আগে মানে ধরেন যাইয়ে না বিলেই না বাঘ আবার মাঝামাঝিও না তার এট্টু আগে!

দূরে তারা তাকিয়ে দেখে আহত রিক্সাওয়ালাটির পাশে একটা কুকুর এসে বসে আছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে কয়েকবার ডাকল সে! হয়তো রিক্সাওয়ালার ব্যথায় কাতর হয়ে কুকুরটা শূন্যতার দিকে ইনসাফের আকুতি জানাচ্ছে! তখন রিক্সাওয়ালাকে আহত করা পুলিশটা বলে, স্যার মহিলার বোরখাটা খোলায় দেখতি পারলে হতো! নির্ঘাত গুটির চালান আছে শরীরে বান্ধা! বিরক্ত পুলিশটা বলে ওঠে, চুপ করো তো! তখন ঠাস করে একটা চড়ের শব্দ হয় আর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশদের একজন বলে বসে, রক্ত! অন্য পুলিশেরা বলে, কই? তখন পুলিশটা নিজের গাল থেকে হাত নামিলে বলে, এ বছর কি কর্পোরেশন মশা মারার কামান চালায় নাই? এতো বড় বড় মশা হইসে যেন চড়ুই পাখির সাইজ! তখন অন্য পুলিশরা কেউ কেউ মশা মারে আর বলে, এইখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না স্যার! চলেন এট্টা রাউণ্ড মেরে আসি! মশা সব রক্ত টেনে নিয়ে যাচ্ছে! তখন বিরক্ত অফিসারটা বলে, হুম! যাবো। কিন্তু এই তিনটারে কি করবো? লুডু খেলে আসা পুলিশটা বলে, ছেড়ে দেন স্যার! তিনটাই এক্কেবারে খাঁটি পিলাস্টিক, ভ্যাজাল নাই! রিকাওয়ালা পুলিশটা বলে, নাহ স্যর! এট্টু দোয়ায় ছাড়ি! তাইলে টাইট হয়ে যাবে। তখন বিরক্ত পুলিশটির পিঠ চুলকাতে থাকে, গলা চুলকাতে থাকে। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ লাগে তার।

বিরক্ত পুলিশটা এগিয়ে যায় তিন যুবকের কাছে। কাছাকাছি যেতেই তিনজনের একজন বলে ওঠে, ভাই আমরা কি পুলিশ ভ্যানের ভিতরে যাইয়ে বস্পো? এহেনে জম্মের শীত! ওস পরতিছে! বিরক্ত পুলিশটা বলে, বসেন। তবে এই খেলাধুলা অফ করেন। তখন তিনজনের একজন পকেট থেকে তার মোবাইল বের করে বলে, ভাই আপনি এট্টু আমার কাছে আসেন এক মিনিট। আপনারে বাঘডাশা দেহাই দি! বিরক্ত পুলিশটা আরো বিরক্ত হয়ে বলে, মানে? তখন যুবকটি বলে, গুগোল কইরে দেহায় দিচ্ছি ফটো! আপনি অন্য এলাকার লোক তো তাই দেখেন নি! আসেন! এই কথা বলতে বলতে যুবক গুগোলে সার্চ করে বাঘডাসার ছবি বের করে বলে, এই দেখেন ভাই! এই জিনিস! দেখিছেন? পুলিশ আগ্রহ নিয়ে বলে, হু! যুবক বলে, উইকিপিডিয়ায় এর সম্পর্কে লেখা আছে পড়বেন নাকি? বিরক্ত পুলিশটার ভ্রুভাঁজ পরে। সে বলে, আমারে কি আপনার ইয়ার্কি ইয়ার্কি লাগে? যুবকদের একজন বলে, না ভাই! মাইণ্ড খায়েন না! লোকে আপ্নাগে বাঘডাশা কয়ে ডাকে আবডালে! তাই জিনিসটা দেখায় দিলাম। যেহেতু বাঘ হচ্ছে বিলাই প্রজাতির বড় বিলাই! সেই হিসাবে বিলাই হচ্ছে যায়ে একরকম ছোট বাঘ! ফলে বাঘডাশা হচ্ছে এগের মাঝামাঝির এট্টু আগে মানে ধরেন যাইয়ে না বিলেই না বাঘ আবার মাঝামাঝিও না তার এট্টু আগে!
বিরক্ত পুলিশ বলে ওঠে, গাড়িতে ওঠ্‌, থানায় গিয়ে কথা হবে ভোর রাইতে! ঠিক তখন একটা এ্যাম্বুলেন্স শাঁকচুন্নির মতো চিৎকার দিয়ে ছুটতে ছুটতে এগিয়ে আসে। বিরক্ত পুলিশটি হাত উঁচু করে থামাতেই ড্রাইভার বলে ওঠে, স্যার সিরিয়াস রোগী! মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছি স্যার! বিরক্ত পুলিশটি বলে, এই বোরকা পরা মহিলারে নিয়ে যাও, সেও মেডিকেল যাবে। ফলে বোরকা পরা মহিলাটিকে তুলে দিয়ে পুলিশ ড্রাইভারকে ইশারা দিতেই, ড্রাইভার সিটে গিয়ে বসে এবং অন্য পুলিশেরা উঠে পরে। ফলে তিনজন যুবককে নিয়ে পুলিশ ভ্যানটি ঘুক্কুর…ঘুক্কুর… সুরে ঝিমাতে ঝিমাতে এগোতে থাকে মধ্যরাতের রাস্তায়।

মাঘ মাসের শীতের মধ্যে দলা দলা কুয়াশা নেমে আসতে থাকে। আর ফাঁকে ফাঁকে বিকট মশার কামড় ঠেলে টহল পুলিশের গাড়িটি এগোয়। হালকা কুয়াশা থেকে গাড় কুয়াশার দিকে। ক্রমশ যেন কুয়াশার ঘনত্ব বাড়তে থাকে। ফলে একজন পুলিশ বলে, এ কেমন কুয়াশা নামতেছে আচমকা? কিছু দেহা যায় না স্যার! অন্য একজন পুলিশ বলে, এরাম কুয়াশা নাম্লি স্যার আমের বোলের গুদমারা হয়ে যাবেনে! কিন্তু তিন যুবক কিচ্ছু বলে না। তাদের দিকে তাকিয়ে রিক্সাওয়ালাকে পেটানো পুলিশটা বলে, কি ভাডি… পিনিক লাগে? হেব্বি পিনিক লাগতেছে না? গুটি খায়ে পিনিক নেয়ার চাইতে পুলিশ ভ্যানে পিনিক বেশি না?
তাদের একজন বলে, তা কাকা কথাডা একেবারে মিথ্যে কন নি! পুলিশটা বলে, কাকা? আমি আবার তোমার কাকা হবো কোন দুঃখে? তখন দ্বিতীয় যুবকটি বলে, এট্টু পরে কেডা কাকা কেডা ভাতিজা সব গুলায় যাবেনে! তখন অন্য পুলিশ তাকিয়ে বলে, কস্‌ কি? তৃতীয় জন বলে, বন্দুক যুদ্ধ! ঘোলা ঘোলা যুদ্ধ! ফলে বিরক্ত সেই পুলিশটি টহল ভ্যানের ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে উঁকি দিয়ে বলে, এই গুলারে থানায় নিয়ে প্রথমে একটা কঠিন ডলা দিয়ে নেবা! তারপর এদের তরিক বের করবা। তখন পুলিশ ভ্যানের মধ্যের সেই লুডু খেলা পুলিশটা বলে ওঠে, ইহ! কি মশা এ, চলন্ত গাড়ির মধ্যেও ধুমায়ে কামড়ায়! ঠিক তখন চারদিকে মশারির মতন নরম একটা ঝাঁপটা নেমে আসে কুয়াশার। ড্রাইভার বলে, স্যার কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না! সাইড করে রাখলাম? অফিসার বলে, এই মধ্য রাস্তায় রাখবা? নাকি নিরালা মোড়ে গিয়ে রাখবা? ড্রাইভার বলে, কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না স্যার! এক হাতের বেশি দূরে কিচ্ছু ঠাওর হচ্ছে না। তখন অফিসার বলে, তাইলে সাইড করে রাখো।

কুয়াশা যখন কেটে গেলো তখন ক্রমশ চোখ মেলে একে একে সব পুলিশ দেখল, তাদের গাড়ি ঘিরে শত শত মানুষের মুখ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে এবং টহল গাড়ির মধ্যে তাদের পায়ের সামনে একটা গুলিবিদ্ধ লাশ। এ জাতীয় লাশ সাধারণত পড়ে থাকে ফাঁকা বিলের মধ্যে, কিংবা পড়ে থাকবার কথা ছিল হাইওয়ের ঢালে কিংবা পাটক্ষেতে! কিন্তু কিভাবে যেন সেটা এই কুয়াশার মধ্যে এখানে এসে পড়েছে।

ক্রমশ গাড় আঠালো কুয়াশার মধ্যে ডুবে যায় শেরে বাংলা রোডের চওড়া বুক। বিরক্ত পুলিশ অফিসারটার চোখমুখ নির্ঘাত কুঁচকে থাকে। সে বলে, কি হইলো গাড়ি থামাবা কয়ে চালায় যাচ্ছ কেন? মারবা নাকি? ড্রাইভার বলে, কি বলেন স্যর! গাড়ি তো ব্রেক করে রাখছি! বিরক্ত অফিসার বলে, ইয়ার্কি কর? গাড়ি চলতেছে আর তুমি কও গাড়ি ব্রেক করা? ড্রাইভার বলে, স্যর! আমি নিজে ব্রেক মারলাম। এই দেখেন ইস্টিয়ারিং ছাড়া। পেছন থেকে একজন পুলিশ বলে, বুজছি কুয়াশায় মনে হচ্ছে গাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে স্যর! ড্রাইভার বলে, নাহ তা সম্ভব না! যুবকদের একজন বলে, এইসব কিচ্ছু না আমার মনে হচ্ছে আমরা কোন একটা ঘেন্টীতে পরিছি! গাড়ি কুয়াশায় ভাসতিছে! খেয়াল কইরে দেহেন! তখন লুডু খেলা পুলিশটা বলে, আমারও তাই মনে হচ্ছে স্যর, বাতাসে ওড়া পলিথিনের মতন গাড়ি ভাসতেছে কুয়াশার মধ্যে! ফলে ড্রাইভার পুলিশটা বলে, এইসব কি কচ্ছেন! গাড়ির পাখা আছে নিকি? তখন বিরক্ত অফিসার বলে, হুম্ম, তাও ঠিক! কিন্তু আমাদের কি হবে? আমরা তো শূন্যে উঠে গেছি! পেছন থেকে সেই পুলিশটা বলে ওঠে, আমের মুকুলের মতো এই কুয়াসার ঠাপে আমাদেরও কি গুদমারা যাবে স্যার? যুবকদের মধ্যে সুড়সুড়ি বেশি যুবকটি খিলখিল করে হেসে ওঠে! অম্নি একজন পুলিশ খেঁকিয়ে বলে ওঠে, হাসি বন্ধ! সবাই দোয়া উইনুস পড়েন! আমরা মহাবিপদে আছি! তখন সবাই শুনতে পায় মশার গুঞ্জন। ক্রমশ যেন লক্ষ লক্ষ মশার গুঞ্জন তীব্র থেকে তীক্ষ্ণ হয়ে এগিয়ে আসে তাদের চারদিকে।

কুয়াশার তীব্র গাড়ত্বের মধ্যে একসময় পুলিশেরা দেখে চারদিকে বিরাট সাইজের একেকটা মশা তাদের হাওয়ায় ভাসমান গাড়ির চারপাশে উড়ছে। পুলিশেরা সন্ত্রস্ত হয়ে পরে, কারণ প্রত্যেকটা মশার শুঁড়ের যায়গায় একেকটা বন্দুকের নল লাগানো। যেন তারা শুঁড়রূপী বন্দুকের নল দিয়ে গুলি করে সবাইকে ঝাঁঝরা করে দেবে। সবাই আতংকে মাথা নিচু করে রাখে কিংবা তারা মশার বন্দুকের বিরুদ্ধে তাদের বন্দুক তাক্‌ করে বন্দুক যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষায়।  দোয়া পাঠ করা এক পুলিশ মুখ ফস্কে বলে, কেমফ্লেজ কেমফ্লেজ,… রক্ষে করো মা… রক্ষে করো মুর্শিদ আমারে,… এইবার পার পাওয়ায় দেও, …আর পাপ করবো না কসম প্রভুর! এর মধ্যে কে যেন চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, রক্তপাত ছাড়া এ মাটি উর্বর হয় নি কখনো! ফলে বিরক্ত পুলিশটা ভীত সুরে বলল, আর হবে না স্যার! আজকেরটাই লাস্ট! মাফ চাই পা বাড়ায় দেন, ধরি! কোথায় আপনার পা স্যার? কুয়াশায় কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না স্যার! প্রতিজ্ঞা করছি বাড়ি ফিরে চাকরি ছেড়ে দেবো! লুডু খেলা পুলিশটা বলে, মই বেয়ে নিচে নামা যাবে, নাকি সাপ খেয়ে ফেলবে? ইসসস! আগে জানলে এ চাকরি নিতাম না! হঠাৎ ড্রাইভার পুলিশটা আঁতকে উঠে বলে, এদিকে দেখুন স্যার! তারা সবাই মাথা তুলে দেখে, এক প্রলয়ংকারী মশা যার শুঁড়টা মর্টারের শেলের মতো। সেই মশাটা ঝিম মেরে উড়তে উড়তে তাক্‌ করে তার শুঁড় থেকে একটা শেল ছুঁড়ে দিলো! আম্নি চারদিকের মশা গুলো গুঞ্জনের তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গে শুঁড় দিয়ে গুলি করতে লাগলো। আর চারদিকে… রক্ত রক্ত… হাহাকার শোনা গেলো।

কুয়াশা যখন কেটে গেলো তখন ক্রমশ চোখ মেলে একে একে সব পুলিশ দেখল, তাদের গাড়ি ঘিরে শত শত মানুষের মুখ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে এবং টহল গাড়ির মধ্যে তাদের পায়ের সামনে একটা গুলিবিদ্ধ লাশ। এ জাতীয় লাশ সাধারণত পড়ে থাকে ফাঁকা বিলের মধ্যে, কিংবা পড়ে থাকবার কথা ছিল হাইওয়ের ঢালে কিংবা পাটক্ষেতে! কিন্তু কিভাবে যেন সেটা এই কুয়াশার মধ্যে এখানে এসে পড়েছে। লাশটার বুক পিঠ থেকে রক্ত বেরিয়ে ভিজে চুকচুকে হয়ে গেছে গাড়ির পাটাতন, ফলে রক্তাক্ত হয়ে গেছে সবার বুটজুতো। তারা সবাই মনে করতে চেষ্টা করে সেই তিন যুবকের মুখ। কিন্তু তারা দেখে তাদের গাড়ি ঘিরে যেই শত শত মানুষের মুখ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে সেই লোকগুলোর মুখ হয়তো সেই তিন যুবকের মতো কিন্তু তারা সংখ্যায় তিনজন নয়, শত শত কিংবা হাজার। প্রত্যেক জোড়া চোখে এক অদ্ভুত কৌতূহল, যেন তারা জ্যান্ত বায়স্কোপ দেখছে।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.