বাসার মিয়ার মজমা
বাসার মিয়া বলে পাখিদের গল্প। তারে আমরা অনেকদিন পর পাই। শহর খুলনার আপার যশোর রোডের পাশে নিউমার্কেটের উল্টা দিকের দশতলার পিছে রেল লাইনের ঝুপড়ি দোকান গুলার একটায়। এইখানে চা খাইতে খাইতে আমরা দেখি বাসার মিয়া তার চোপা চালায় যায়। বাসার মিয়া কয়, কীর্তন পাখির ডাক শুনছ? শুনো নাই। শুনবা কেম্নে দেখোই তো নাই। আমি দেখছি। লোকে কি নামে ডাকে ঐ পাখিরে জানি না তয় পাখির ডাক শুইনা আমার মনে হইলো এইটা কীর্তনের সুর। তহন আমি পাখিডার নাম দিলাম কীর্তন পাখি। আজব এক পাখি ডাক দিলেই দিল গইলা মোম হয়া যায়। ফলে আমরা আগায় যাই বাসার মিয়ার চোপাবাজি শুনতে। বাসার মিয়ার হাতে একটা বিড়ি আগায় দেয় কেউ একজন শ্রোতা। বাসার মিয়া কয়, এইবার গেছিলাম বুধোই শাহ্ আর মাধোই শাহ্র দীঘির গ্রামে। চারিদিকে গাছ গাছালির এক তাজ্জব গ্রাম। মাটি খুঁড়লেই ইতিহাস। পুরানা নগরের ইট পাথর টালি উঠে। সেইখানে আছে আমার ইয়ার কুঞ্জ ওঝা। কামরূপ কামাক্ষায় আছিল অনেকদিন। সেইখান থিকাই আমার সাথে ইয়ারি। এইবার যখন সঙ্গ করলাম তখন একদিন জিগাইল, কি সেবা দিবো তোমারে দোস্ত। আমি ভাইবা পাই না কিছু। তখন একটা নলা পাখি আমার সামনে আইসা নাচানাচি করতে লাগলো। আমি কইলাম পাখির জীবন জানতে ইচ্ছা হয়। কুঞ্জ বলল, পেরেশান নাই। দাড়াও ব্যবস্থা নিতেছি। তারপর সে আমার হাত ধইরা পাখির ডানার মতন ঝাঁপটা দিতেই আমরা পাখি হয়া গেলাম।
শ্রোতাদের একজন ফস করে প্রশ্ন করে বসে, কোন ডিস্টিকের কাহিনী ইডা? বাসার মিয়া তার দিকে তাকায় বলে, ভোঁদাইর মতন কথা বলবা না, বয়ানের মইধ্যে প্রশ্ন আমার পছন্দ না। বয়ান শেষ হইলে জিগাবা বালছাল। তখন অন্যরা তারে চুপ যেতে বলে এবং বাসার মিয়ারে বলে তারপর কি হয় ফকির? তখন বাসার মিয়া বলে, চ্যাট হয়। ফলে পুরানা লোকেরা বুঝতে পারে বাসার মিয়ার গল্প বয়ানে ছেঁদ তৈয়ার হয়েছে, তার মুড নষ্ট করে দেয়ার জন্য তারা সেই প্রশ্নকারীকে তিরস্কার করে এবং বলে, আমান্দা প্রশ্ন কেউ করবেন না, ফকির আইছেন; বয়ান দেবেন তারপর বিস্তর জিগাবেন। ফলে বাসার মিয়া একটু স্থির হন এবং বলেন, পাখি হইয়া আমরা পাখিদের জীবনে চইলা গেলাম। তখন আমরা একটা গাছে গিয়া বসলাম। সেই গাছে বাসা বান্ধা কয়ডা পাখি আমাগোরে ঠোক্কর দিতে লাগলো উইড়া আইসা। আমরা বুঝলাম ওরা আমাগোরে ওগোর গাছে নিবো না। তখন আমরা উইরা অন্য গাছে গেলাম, সেই গাছের ডালে ডালে ডিম পাড়া পাখিগোর বাসা। সেই পাখিরা আমাগোরে দেইখাই যেন ভির্মি খাইল। তারা হাউকাউ লাগায় দিলো। তাগর হাউকাউয়ে আমরা ভয় খায়া ব্যস্ত উইরা গেলাম।
শ্রোতাদের একজন ফস করে প্রশ্ন করে বসে, কোন ডিস্টিকের কাহিনী ইডা? বাসার মিয়া তার দিকে তাকায় বলে, ভোঁদাইর মতন কথা বলবা না, বয়ানের মইধ্যে প্রশ্ন আমার পছন্দ না। বয়ান শেষ হইলে জিগাবা বালছাল। তখন অন্যরা তারে চুপ যেতে বলে এবং বাসার মিয়ারে বলে তারপর কি হয় ফকির? তখন বাসার মিয়া বলে, চ্যাট হয়।
আমরা উড়তে উড়তে একটা লম্বা গাছের ডালে গিয়া বইসা যেই না জিরাইতে লাগলাম তখন একটা পাখি আমাগোরে ঘিরা চক্কর খাইতে লাগলো, যেন এক কঠিন নজরদারি আমাগোর চাইরপাসে নাজেল হইলো, তহন আমারা এক ফাঁকে ফুড়ুৎ কইরা উড়াল দিয়া একটা প্রকাণ্ড ঝুমঝুমির মতন গাছের মইধ্যে আইসা বসলাম। সেই গাছে শকুনের মতন বিরাট বিরাট চুতিয়া আর গুতিয়া নামের দুই পক্ষীর বাস। তারা গুরুগম্ভীর। আমাগোরে যেন পাত্তাই দিলো না। একটু সইরা বসলো। আমরা টের পাইলাম এইখানে থাকা যাবো। তখন এক দলা গু আইসা পড়লো আমাগোর মাথায়। আমরা উপরের দিকে তাকায় দেখলাম, উপরে ডালে বসা একটা পাছা। অনেকক্ষণ নিরিখের পর টের পাইলাম পাছা নড়ে। তারপর টের পাইলাম ঐটা আরও বড় কোন পক্ষী। তখন চুতিয়া আর গুতিয়া পক্ষী দুইটা নইরা চইরা বসলো।
চুতিয়া পাখির পালকের রঙ খাকি, আর গুতিয়া পাখির পালক জলপাই রঙয়ের। তারা বিনবিন কইরা কথা কওয়া শুরু করলো। আমরা বললাম, আমরা ভিন দেশ থেইকা আসছি। আমরা মুহাজের। তহন চুতিয়া আর গুতিয়া পক্ষী দুইটার কেউ একজন বলল, আমরা জানি তোমরা অন্য দেশের অন্য জাতের পাখি। আমাগোর দেশে আসছ ভালো কথা। তখন আমরা কি বলবো সেইটা খুঁইজা পাইলাম না। তখন চুতিয়া বা গুতিয়া পাখিগোর কেউ একজন বলল, যিনি তোমাগর উপর হাইগা দিলেন উনি আমাগোর বস্, আমাগোর প্রধান, রাজা আমাগোর। তহন আমাগোর মনে হইলো মুখ তো দেখলাম না রাজার, যা দেখলাম সেইটা হইলো গিয়া পাছা; তাইলে কি বস্ মানে পাছা? আবার এমনও মনে হইলো, রাজা যহন আছে তার মানে রাণীও আছে আশেপাশে তার মানে এইবার কি রাণী হাইগা দিবো মাথার উপ্রে? তখন চুতিয়া বা গুতিয়া পাখিগোর কেউ একজন বলল, কি চাও এইখানে? আমরা বললাম আপনাদের সঙ্গে থাকতে চাই। আমাগোর দেশ ছিল দেশ নাই। তাড়ায় দিছে হুদাই।
এইসব বিত্তান্ত শুইনা চুতিয়া বা গুতিয়া পক্ষিগোর কেউ বলল, বেশ। তয় কিছু নিয়ম কানুন মানতে হবে তোমাগোর আমাগোর দেশে থাকতে হইলে। আমরা বললাম, আমাগোর কোন উপায় যখন নাই তখন তো আপ্নাগোর কানুন মান্তেই হইব। তখন চুতিয়া কিংবা গুতিয়া কেউ একজন বলল, আমাগোর এইখানে থাকতে হইলে কয়টা শর্ত তোমাগরে মানতে হবে। আর এইটাও মানতে হবে শর্তের সংখ্যা সময়ে সময়ে পরিস্থিতির বিবেচনায় বাড়তে পারে। তহন আমরা বললাম, মানবো। তহন তারা কয় যে, পরথম শর্ত হইলো এইখানে তোমরা কেউ নিজেগর বাইরে বিবাহ কিংবা বাচ্চা পয়দা করবার পারবা না! আমরা বললাম, কবুল। তহন চুতিয়া কিংবা গুতিয়া পক্ষি বলল, দ্বিতীয় শর্ত হইলো, তোমরা ঐ যে ন্যাড়া গাছ ঐ গাছে থাকবা, খাবা হাগবা, বাইরে যাইতে পারবা না! আমরা বললাম, ঐ গাছে তো পাতা নাই খালি ডাল ওইখানে থাকবোই বা কেম্নে খাবোই বা কি আর না খাইলে হাগবো কি? তখন চুতিয়া বা গুতিয়া বলল, বেশি প্রশ্ন করা যাবে না, তোমরা ঐ গাছে থাকবা যাতে আমরা তোমাগরে দিনরাইত নজরদারিতে রাখতে পারি, তোমাগর সারাদিনের কীর্তিকালাপ। আর খাবা হইলো, ঐ ন্যাড়া গাছের বাকলে ঠোক্কর দিলে কষ বাইর হইয়া মিছরির মতন হয়া যায়, সেই জিনিস খাবা খিদা থাকবে না। আর হাগবা গাছের গোঁড়ায়, যাতে গাছ সার পায়।
যে দেশে যে নিয়ম। রাজার গু খাইতে না পারলে সমাজে টিকতে পারবা না। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কঠিন নিয়মে বান্ধা, সেইখানে তোমাগর মতন বিদাসি মুহাজের আইনা আমরা নিজেরা ফাইলে পড়তে রাজি না। তহন আমাগোর গা গুলায় আমরা বলি, গু খাওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নাই?
আমরা বললাম, আমরা যদি উড়তে গিয়া হাইগা দেই কোথাও? তখন চুতিয়া বা গুতিয়া বিরক্ত স্বরে বলল, উড়বা আবার কি, কোন ওড়াউড়ি নাই। তোমাগর সীমানা হইলো ঐ ন্যাড়া গাছের ছায়া দিনের বেলায় যদ্দূর পড়ে তদ্দূর। এর বাইরা ডানা মেলা নিষেধ। সব কাম ঐ ছায়ার মধ্যে। তখন আমরা দুইজনায় দুইজনের দিকে তাকাই। আর চুতিয়া বা গুতিয়া পক্ষি বলে, তিন নম্বর শর্ত হইল, রোজ সকালে আমাগোর রাজা তোমাগোর মগডালে গিয়া বসবো আর দিনের পরথম হাগা হাগবো তোমাগোর মাথায়। তোমরা সেই গু খাবা। তখন আমরা দুইজনাই পেরেশানে ডুবে যাই। তখন চুতিয়া বা গুতিয়া বলে, শর্তে রাজি হইলে থাকবা না হইলে বিদায়। আমরা বলি, তিন নম্বর শর্তডা তো সম্ভব না। তখন চুতিয়া বা গুতিয়া পক্ষি বলে, তাইলে থাকাও সম্ভব না। যে দেশে যে নিয়ম। রাজার গু খাইতে না পারলে সমাজে টিকতে পারবা না। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কঠিন নিয়মে বান্ধা, সেইখানে তোমাগর মতন বিদাসি মুহাজের আইনা আমরা নিজেরা ফাইলে পড়তে রাজি না। তহন আমাগোর গা গুলায় আমরা বলি, গু খাওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নাই? তখন চুতিয়া বা গুতিয়া পক্ষী বলে, আছে আমাগোর রাজ্য ছাইড়া বিদায়।
তখন আমি বিরক্ত হয়া আমার ইয়ার কুঞ্জ ওঝারে বলি, চল মানুষ হই। কুঞ্জ বলে, লাফ দেও ডাল থেইকা মাটিতে। আমরা দুইজনে লাফায় পরি মাটিতে আর মানুষ হয়া যাই। আর তখন খেয়াল করি আমরা রাজা পাখি গুয়ের উপর লাফায় পড়ছি বইলা আমাগোর পায়ে রাজা পাখির গু লাইগা গেছে। তখন আমার গু ধুইতে গাঙয়ের দিকে যাই, গাঙয়ের ঘাটে গিয়ে পিছলা খায়া আমি পড়লাম গাঙের পানিতে, সেইখান থিকা উইঠা আমি হাঁটতে হাঁটতে এইখানে চইলা আসলাম। তাকায় দেখো এহনো আমার পায়ে কিঞ্চিৎ রাজা পাখির গু লাইগা আছে। এই গু মুর্গি হাঁস তিতির কইতরের না, এই গু রাজা পাখির গু আঙুলে মাইখা শুইকা দেখতে পারো তাজ্জব জিনিস।
তখন আমরা সবাই বাসার মিয়ার পায়ের পাতায় তাকায়া দেখি গু মেখে আছে। ফলে কেউ কেউ মজমা ছেড়ে চলে যায়। কেউ কেউ হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ পেরেশান বোধ করে। ফলে পুরানা লোকেরা বোঝে বয়ান শেষ। তখন এক বুড়ি তার কিশোরী নাতনীরে আগায় দিয়া কয়, অর মাথায় একটু হাত বুলায় দেও তো ফকির। বাসার মিয়া কিশোরীর মাথায় হাতে রেখে কয়, কি হইছে তার? বুড়ি বলে, বিবাগী বিমার হইসে। কোন কিছুতে মন নাই খালি উচাটন থাহে। বাসার মিয়া ঝুঁকে এসে মেয়েটার দিকে বলে, কিরে পাখি হবি? হইতে পারলে কিন্তু খারাপ না, মন বিবাগী হইলেই একটু আসমানে উইরা আসতে পারবি। মেয়েটা মিচকি হাসি দেয়। তখন সেই প্রশ্ন ওয়ালা বলে, যেই কাহিনিডা কইলেন সেইটা কোন ডিস্টিকের ফকির সাব? বাসার মিয়া, বিড়ি ফুক্তে ফুক্তে বলে, তুমি যেই ডিস্টিক মনে করছ সেই ডিস্টিক।