:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
বেলায়াত হোসেন মামুন

লেখক, সংগঠক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

মুস্তাকিম মুন্সীর একটি সিগারেট
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

মুস্তাকিম মুন্সীর একটি সিগারেট

মুস্তাকিম মুন্সী সিগারেট টানতে টানতে গ্যারেজে এসে বসে। গ্যারেজে আগে থেকেই আব্দুল কাদির কাজ করছিল। মুস্তাকিম কাদিরের দিকে তাকিয়ে বলে, দেশে মানুষ এত বাড়ছে, এক্সেলেটারে চাপ দিতেই দেখি দুই-চারটা টায়ারের নিচে হান্দায়া যায়…

আব্দুল কাদির কাজ থামিয়ে মুস্তাকিম মুন্সীর পাশের বেঞ্চিতে এসে বসে। একটা নেকড়ায় হাত মুছে নেকড়াটা পাশে রাখে। কাদির মুস্তাকিম মুন্সীর দিকে হাত পেতে একটা সিগারেট নেয়। সিগারেট ধরাতে ধরাতে কাদির বলে, ওস্তাদ আর বইলেন না, ক্যাইলকা সন্ধ্যায় এই গাড়িটা (সামনে রাখা একটি টয়োটা প্রাইভেট কার দেখিয়ে) নিয়ে একটু চেক দিতে বাইর হইছিলাম, দশ নম্বর গোলচক্করটা একটু ঘুইরা আসতেই দুই জনরে ধাক্কা দিছি, মাইনষে যে একটু দেইখা চলবো তা না, হালার পাবলিক রাস্তায় খালি দৌড় পাড়ে!

মুস্তাকিম মুন্সী একরাশ বিরক্তি নিয়ে থুথু ফেলে। বাম হাতের সার্টের হাতায় ঠোঁট মুছতে মুছতে বলে, আর বালের ছাত্ররা রাস্তা ফাস্তা বন্ধ কইরা শুরু কইরা দেয় হাউ-কাউ, বাল, ভাল লাগে না!

মুস্তাকিম মুন্সীর বিরক্তি ভরা মুখের দিকে একবার তাকায় আব্দুল কাদির। মুস্তাকিম মুন্সীর মুখটা ঘামে ভেজা। মার্চ মাসে বেশ গরম পড়েছে। দুপুরের কড়া রোদে মুস্তাকিম মুন্সীর মেজাজ হয়ত তেঁতে আছে। আব্দুল কাদির বুঝতে পারে না। সে বোঝার জন্য মুন্সীকে জিজ্ঞাসা করে, ওস্তাদ আজ গাড়ি নিয়ে বাইর হইছিলেন?

মুস্তাকিম মুন্সী মিরপুর টু উত্তরা রোডে বাস চালায়। প্রাইভেট পরিবহন। আল জমজম। এই কোম্পানীর অনেক বাস। আব্দুল কাদিরের প্রশ্নে মুস্তাকিম মুন্সী কাদিরের দিকে তাকায়। বলে, সকাল আটটায় বাইর হইছি। দুই টিপ মারছি। তিন নাম্বার টিপের সময় বনানীর ফ্লাইওভারের নিচে এক মহিলা দুই বাচ্চা নিয়া বাসের নিচে হান্দাইছে, কোনো রকমে পালাইছি। হালার পুতের বাসের লোকেরাই মারতে আসে, শুয়োরের বাচ্চারা, বাসে মধ্যে বইসা খালি চিল্লায় ড্রাইভার সাব জোরে চালান, জোরে চালান, ফাঁকা পাইয়া যখন টান দিছি তখন ঐ মহিলা কইতথেকা যে আইসা হান্দাইলো! বুইঝা উঠতে পারি নাই!

তিন নাম্বার টিপের সময় বনানীর ফ্লাইওভারের নিচে এক মহিলা দুই বাচ্চা নিয়া বাসের নিচে হান্দাইছে, কোনো রকমে পালাইছি। হালার পুতের বাসের লোকেরাই মারতে আসে, শুয়োরের বাচ্চারা, বাসে মধ্যে বইসা খালি চিল্লায় ড্রাইভার সাব জোরে চালান, জোরে চালান, ফাঁকা পাইয়া যখন টান দিছি তখন ঐ মহিলা কইতথেকা যে আইসা হান্দাইলো! বুইঝা উঠতে পারি নাই!

কাদির পরিস্থিতি বুঝতে পারে। বুঝে যে মুস্তাকিম মুন্সী এখন কয়দিন গা ঢাকা দেবে। তাই এই অবেলায় গ্যারেজে এসেছে। কাদির বলে, ওস্তাদ আপনের কি দোষ কন? আপনে তো আর ঐ মহিলারে ফুটপাতে উইঠ্যা চাপা দেন নাই, তাই না? হুটহাট রাস্তা পার হইতে গেলে এমন তো হইবোই!

কাদিরের কথায় মুস্তাকীম মুন্সী কিছু বলে না। কাদির আবার বলে, ওস্তাদ! মহিলা আর বাচ্চাগুলো কি মইরা গেছে?

মুস্তাকিম কাদিরের দিকে তাকিয়ে খ্যাকিয়ে ওঠে, মরছে না বাঁইচা আছে দেখবার লাইগা ঐখানে কি খাড়াইছিলাম? বাসের লোকজনের মাইরের ডরে জানলা দিয়ে লাফ দিয়ে পলাইছি, সাদ্দামও (বাসের হেলপার) দ্যাখলাম দরজা দিয়ে লাফায়া দৌড় দিছে।
কাদির বলে, তা ওস্তাদ এখন কি ভাবতেছেন? কি করবেন?

মুস্তাকিম মাথা নিচু করে সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে। বলে, কয়দিন একটু শ্বশুর বাড়ি থাইক্যা বেড়াইয়া আসবো। এদিকে হাউকাউ থামলে আবার গাড়ি লইয়া নামবো।

কাদির বলে, সেইটাই ভালা হইবো। ছাত্রগো হাই কাউ থামলে আমাগো মন্ত্রি সব সামলায়া লইবো। টেনশন নাই।

মুস্তাকিম সম্মতির ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে। বলে, উনি আমগো নেতা। সেদিন কোম্পানীর মালিক কইলো, নেতারে মাসে মাসে বহুত টেকা দিতে হয়। আমার হালার খারাপ লাগতেছে বাসটার লাইগা। হালারপুতেরা বাসটায় আগুন দিছে। স্টিয়ারিংয়ের উপরে আমার মাইয়ার লাইগা একটা লাইটওলা বল কিনা রাখছিলাম। সেইটাও গ্যাছে।

কাদির বলে, ওস্তাদ, মন খারাপ কইরেন না। বাসায় যান। ভাবিরে লইয়া শ্বশুর বাড়ি বেড়াইয়া আসেন। ভালা লাগবো।

মুস্তাকিম মৃদু হেসে শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেটের খোসাটি ফেলতে ফেলতে উঠে দাঁড়ায়। বলে, হ, দেরি কইরা লাভ নাই, তোর ভাবিরে মোবাইলে কইছি রেডি হইতে, যাই ওগোরে লইয়া বাইর হই… তুই এই দিইকার খোঁজখবর রাখিস।

কাদির মুস্তাকিমের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, ওস্তাদ আর একটা সিগারেট দিয়া যান। আর এইবার ফিরা আইসা আমারে আরেকটু ট্রেইনিং দিয়েন। স্টিয়ারিং ঘুরাইতে ঘুরাইতে এক্সেলেটারে চাপ দেয়ার হিসাবে গোলমাল হইয়া যায়। তখন আধকা মাইনষেরে ধাক্কা মাক্কা দিয়্যা বই। এইডা একটু ঠিক কইরা দেন ওস্তাদ!

মুস্তাকিম কাদিরকে একটা সিগারেট দিয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা প্যান্টের পকেটে রাখতে রাখতে উঠে দাঁড়ায়। হাঁটতে হাঁটতেই বলে, দিমুনে, তুই রেডি থাকিস!

২২ মার্চ ২০১৯

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.