রং, সময় ও মৃত্যুবিষয়ক
সে ছিল সবুজরঙা মেয়ে…
অথবা বলা যায় তার রকমটাই ছিল সবুজ। যেভাবে বেড়ে ওঠে কার্নিশে গুল্মদল সবার অগোচরে-অবহেলায়, সে রকমই অবলীলায় সে সবুজ হয়ে উঠেছিল। কেউ দেখেছিল, কেউ দেখেনি। এখানে অবশ্য ‘কেউ’ শব্দটা বা যাবতীয় বহুবচনকে অনাহূত ধরে নিয়ে অবজ্ঞা করা হবে। কেউ দেখেনি, শুধু আমি দেখেছিলাম। আর কারও দেখার অধিকার ছিল না। আমার দৃষ্টি আটকা পড়ে গিয়েছিল অদৃষ্টের চোরাজালে। আমি কখনো চোখ ফেরাতে পারিনি।
‘আমারই চোখ গেল ধরেছে সুন্দর
বুঝি না এমন মেয়ে কী করে বানালে ঈশ্বর!’
সবুজের আল ধরে হেঁটে যেতে যেতে কত কিছু চোখে পড়ত! সবুজ রঙের পাখি গান শুনিয়ে যেত, শীতের কর্কশ আঁচড়ে রুক্ষ হয়ে যাওয়া গাছগুলোও সবুজ বাতাসের দমকায় উড়িয়ে দিত চুল, সবুজ বনের গোপন অন্ধকারে স্বেচ্ছা কারারুদ্ধ হয়ে কাটিয়ে দিতাম। কতক্ষণ…সময়ের হিসাব রাখিনি। সবুজ নদীর স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে অবশেষে পৌঁছে যেতাম সবুজ লতার মুকুট পরা সেই মেয়ের কাছে। তার সংস্পর্শে সবকিছুই সবুজ হয়ে উঠেছিল এমন করে।
সবুজ সময়ের স্থায়িত্ব খুব বেশি দিন হয় না। হন্তারক সময়ের ছুরিকাঘাতে একসময় সবুজের বুক থেকেও লাল রক্ত ঝরে! স্নিগ্ধতার সৌম্য রূপ লাল তেরপল দিয়ে ঢেকে দিয়ে পরক্ষণেই তা উঠিয়ে নিয়ে কেরামতি দেখায় ধুরন্ধর জাদুকর।
‘এই দেখো গ্ল্যামার! নতুন করে শেখো সৌন্দর্যের গ্রামার!’
লাল মেয়ে লোলুপ মেয়ে এবং সবুজের স্মৃতি…
আমার দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে তাকে দেখতে পেতাম সে যত হাজার মাইল দূরেই থাকুক না কেন। সে কখনোই আমার খুব কাছে ছিল না। অথবা সে কখনো ছিলই না। নিয়তিবাদীরা তাকে খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে খড়কুটোগুলো উত্তাল সমুদ্রে বিসর্জন দিয়ে এসে কাদামাটি দিয়ে দেবীপ্রতিমা গড়তে বসে যেত এবং একঘেয়ে লাগলে তা ভেঙেও ফেলত। আবার গড়ত নতুন করে। কিন্তু আমার সবুজরঙা মেয়ে, যাকে কেউ খুঁজে পায়নি, অথবা পেলেও আমার হুমকিতে সরে দাঁড়িয়েছে সভয়ে, তাকে ভাঙা যেত না, কাটা যেত না, দূরত্বের অভিসন্ধিতে স্পর্শ করাও যেত না, একদিন হঠাৎ তাকে খুব কাছ থেকে দেখে ফেলি।
তাকে ঘিরে ছিল স্কুলপালানো বখাটে ছেলে লাল রঙের গোলাপ হাতে নিয়ে,
সেদিন তার প্রত্যন্ত গোপন সবুজ গহবর থেকে লাল স্রোতের উদ্গীরণ হচ্ছিল, বিস্ফোরক লাভার মতো।
সেদিন তাকে ঘিরে ছিল সুদর্শন এবং প্রতিষ্ঠিত যুবকেরা ভবিষ্যতের স্বপ্নালো সম্ভাব্যতার কথা ভেবে লাল মোড়কে উপহার হাতে নিয়ে।
সে ভয় পাচ্ছিল বলে,
অভিজ্ঞ গৃহিণীরা সন্তুষ্টির হাসি হেসে তার সবুজ মুকুট খুলে নিয়ে, লতাপাতার আস্তরণ সরিয়ে দিয়ে তার পায়ে পরিয়ে দেয় লালরঙা শেকল।
লালরঙা মদের গেলাসের ভাঙা টুকরাতে আমার পা কেটে যায়, আমার ঠোঁটে একজোড়া লাল লিপস্টিকড ঠোঁট চেপে ধরে। সে কি প্রাক্তন সবুজ বালিকা, নাকি অন্য কেউ, আমি বুঝতে পারি না। কারণ, লাল রঙের অজস্র বালিকা, কিশোরী, যুবতী, বেশ্যা, নায়িকা, সংবাদপাঠিকা ইত্যাদি চরাপাশে, কাউকে কারও থেকে আলাদা করা যায় না।
একসময় সে হেসে ওঠে সব ভয় জয় করে। প্রাপ্তির আনন্দে আর গর্বে। সারা শহর হাততালি দিয়ে ওঠে। সারা শহরে রটে যায় বালিকার রূপান্তর পর্বের কাহিনি। কসমেটিকসের বিক্রেতারা খুশি হয়ে ওঠে। তারাও ভিড় জমায় প্রাক্তন সবুজের পাশে। গোঁফে তা দিয়ে পরিতৃপ্তির হাসি হাসে জাদুকর। আর আমার সবুজ পরীর ডানাগুলো মুচড়ে ভেঙে দেওয়ার অমানবিক দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে আমি ফিরে চলি সবুজের আল ধরে। ইতিমধ্যে পেইন্টাররা এসে গেছে পথের রং পাল্টে দিতে। যার স্পর্শে সব সবুজ হয়ে উঠত, তার ওপর লালরঙা লোলুপ লৌকিকতা চেপে বসায় এখন আর সবুজের প্রয়োজন নেই। আমি সবুজের স্মৃতি ধারণ করে হাঁটতে থাকি। লালরঙা মদের গেলাসের ভাঙা টুকরাতে আমার পা কেটে যায়, আমার ঠোঁটে একজোড়া লাল লিপস্টিকড ঠোঁট চেপে ধরে। সে কি প্রাক্তন সবুজ বালিকা, নাকি অন্য কেউ, আমি বুঝতে পারি না। কারণ, লাল রঙের অজস্র বালিকা, কিশোরী, যুবতী, বেশ্যা, নায়িকা, সংবাদপাঠিকা ইত্যাদি চরাপাশে, কাউকে কারও থেকে আলাদা করা যায় না। সবুজ ছিল অন্য রকম। এখন অবশ্য তাতে আর কিছু এসে যায় না। লালচে কামোদ্দীপক কাউকে অথবা কোনো একটা বস্তুকে বগলদাবা করে আমি ঘরে ফিরি।
আমি ভালোবাসি
ভালোবাসার অভ্যেস করি
অথবা অভিনয় করে চলি!
এই সব অভ্যস্ততা এবং অভিনয়পটুতার কল্যাণে একসময় আমার পাশে ঘুমোনো নারীর মুখটি পরিচিত এবং কোমল হতে থাকে। গভীর রাত্তিরে হঠাৎ জেগে ওঠার পর তার কেঁপে কেঁপে ওঠা ঘুমন্ত চোখের পাপড়িতে চুমু দিই। কখনো সে আমাকে জড়িয়ে ধরে, আবার কখনো বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরে শোয়, কখনো আবার ঘর্ঘর শব্দে নাক ডেকে ওঠে তার!
এই সব প্রত্যাখ্যানের রাত্তিরে আমি আমার দূরবীক্ষণ যন্ত্রটা নিয়ে বসি। দেখতে থাকি সুদূরতমাকে। সবুজরঙা মেয়ে, যাকে কখনো আমি ছাড়া আর কেউ কখনো দেখেনি। সবুজ রকম মেয়ে, যার রকমটা পাল্টে দিয়েছে সময়গাড়ির নিয়মনিষ্ঠ চালক, যার সতেজ গালে সযত্নে এঁকে দিয়েছে বলিরেখা, ব্রণ। আমি দেখি…সে নিজেকে পুনরায় সবুজ করে তোলায় মোটেও উৎসাহী নয়, গালে লাল রঙের রুজ মাখিয়ে এই পৃথিবীর অজস্র লাল বস্তু, যেমন নৃত্যমঞ্চের ওপর প্রতিফলিত লাল আলো, বাণিজ্য মেলার দামি লাল কার্পেট, প্লাস্টিকের লাল গোলাপ এবং আরও অনেক গোপন লালের সাথে মিশে যায়। আমার দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি তাকে খুঁজে পায় না। আমি টিউনিং করে চলি, করে চলি…মাঝেমধ্যে খুব হঠাৎ দেখতে পাই সেই সবুজ পথ, সবুজ পাখি, তার স্পর্শে সবুজাভ হওয়া সবকিছু এবং তাকে, সবুজ মুকুট পরিহিত বালিকাকে!
একদিন ফ্যাকাশে দিন…
সবুজ-লালসংক্রান্ত জটিলতায় আমি বিভ্রান্ত, বিরক্ত এবং কখনোবা হতাশ হলেও, যাহোক, তা ছিল একটা রঙিন জগৎ। সংক্ষিপ্ত সবুজ সময়ের সুখস্মৃতি আর লালচে পাপ-পুণ্যের রীতিনীতি আমাকে কখনো নস্টালজিক কখনো হিংস্র, কখনো কামুক, কখনো শিল্পী করে তুলেছিল। আমিও নেচেছিলাম লাল ডায়াসে হয়তোবা তার সাথেই, কিন্তু ওটা সে-ই কি না, জানার কোনো উপায় নেই। লাল রং খুব বিভ্রান্তিকর। তবে মাঝেমধ্যে সবুজের সাথে আলাপন, সবুজ মেয়েকে আপন করে নিচ্ছিলাম ঠিকই গভীর রাতে অথবা সুপ্রভাতে।
মাঝখানে অনেক দিন বিরতি পড়ে গিয়েছিল। আমার দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি, বেঢপ আকারের ভারী যন্ত্রটি ঝেড়েমুছে পরিষ্কার করার জন্য তুলতে গিয়ে দেখি পেরে উঠছি না! কুলিয়ে উঠতে পারছি না, সে যেন গোঁয়ারের মতো মেঝে কামড়ে ধরে আছে। অনেক কসরত করে ওটাকে তোলার পর এবং পরিষ্কার করে সাগ্রহে লেন্সে চোখ দেবার পর দেখি সব কেমন যেন ফ্যাকাশে লাগছে। সবকিছু কেমন যেন অস্পষ্ট আর ঝাপসা। টিউনিং করার নবটা খুঁজে ফিরি, কিন্তু পাই না।
খুঁজে ফিরি
খুঁজে চলি…
খুঁড়ে চলি সময়ের কঠিন জমিন গুপ্তধন প্রাপ্তির আশায়।
লাল রং খুব বিভ্রান্তিকর। তবে মাঝেমধ্যে সবুজের সাথে আলাপন, সবুজ মেয়েকে আপন করে নিচ্ছিলাম ঠিকই গভীর রাতে অথবা সুপ্রভাতে।
এতক্ষণে ঠিকমতো টিউন হয়েছে। আমি আবার লেন্সে চোখ রাখি,
কোথায় লাল!
কোথায় সবুজ!
একটা পারা খসা আয়নার সামনে নিজের বিকৃত, তোবড়ানো মুখটা দেখি। পেছন থেকে কে যেন হাত রাখে আমার কাঁধে।
‘সময় শেষ হয়ে আসছে, অনেক তো রং দেখলে জীবনে, আর কত!’
সময়! নিঃশব্দ ঘাতক, আমাকে জ্ঞান দিতে এসেছে!
‘খুনির কাজ খুন করা, জ্ঞান দেওয়া নয়, দূর হ!’
আমার রূঢ় আচরণে সে আহত হবে কি, উল্টো হো হো করে হেসে ওঠে।
‘চাইলেই কি আমার কাছ থেকে দূরে সরতে পারবে তেজি প্রৌঢ়! আচ্ছা দাঁড়াও, তোমাকে একটা জিনিস দেখাই। যন্ত্রটা আমার কাছে দাও তো।’
শেষের দিকে তার কণ্ঠ কিছুটা কোমল হয়ে আসে।
সে আমার টেলিস্কোপটা নিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই টিউনিং করে ফেলে।
‘দেখো এবার।’
সে বলে।
‘কি, চিনতে পারছ?’
আমি দেখি, হাসপাতালের শয্যায় কঙ্কালসার, চর্মসর্বস্ব একটি আকৃতি। একজন ফ্যাকাশিনী! যার মধ্যে সৌন্দর্যের লেশমাত্র নেই। যার কুঞ্চিত চর্মে বঞ্চিত রংগুলোর মর্মপীড়ার গল্প লিপিবদ্ধ।
‘হে হে! দেখেছ তোমার সবুজ রকম মেয়েকে!’
‘তুমি শালা মানুষ হবা না। সবার সাথে ফাজলামি…!’
‘ফাজলামো না বৃদ্ধ…’
‘খবরদার, আমাকে বৃদ্ধ বলবি না! লাথি দিয়ে ভাগায়ে দিব।’
‘হাহাহা!’
‘খুব গর্ব তোর? ভাবিস যে তোর ইচ্ছেমতো সবকিছু চলবে?’
‘তাই তো এতকাল চলে এসেছে।’ দম্ভ ভরে বলে সে। ‘ও আচ্ছা, আমার এক বন্ধুর সাথে তো তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই হয়নি।’ সে আবার টেলিস্কোপে চোখ রাখে।
‘দেখো তো, ওই কুৎসিত চর্মসর্বস্ব অবয়বের পাশে কাউকে দেখতে পাও কি না?’
আমি দেখতে পাই।
মাথায় শিংঅলা, গদা হাতে, কালো কুচ্ছিত বিশাল এক জানোয়ার।
‘এই জোকারটা কে?’
‘ওর নাম মৃত্যু।’ মোলায়েম বিদ্রূপে হেসে বলে সে।
এইবার আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। তবে উত্তেজিত না হয়ে ভাষাটা সংযত রেখেই বলি,
‘দেখো, সময় আর মৃত্যু; তুমি আর তোমার পায়াভারী বেকুব বন্ধুকে আমি অস্বীকার করি। মৃত্যু কিছুই কেড়ে নিতে পারে না। ওই ক্লাউনটার সে ক্ষমতাই নেই।’
‘তাই নাকি! দেখো না, “সবুজ বালিকা” কেমন ছটফট করছে? ওর হয়ে এল বলে!’
আমরা পালাক্রমে টেলিস্কোপের লেন্সে চোখ রাখি। বেচারা মৃত্যুদূত ঘেমে নেয়ে উঠেছে। কিন্তু টেনেহিঁচড়ে, কোনোভাবেই ফ্যাকাশে বালিকাকে নিয়ে যেতে পারছে না।
আমি দেখতে পাই, ক্লাউন মৃত্যু তার হাত ধরে টানছে। গদা দিয়ে বাড়ি মারছে।
‘দেখেছো?’
বলে সে সাগ্রহে তাকিয়ে থাকে আমার উন্মত্ত প্রতিক্রিয়া অবলোকন করে বিমলানন্দ পাবার আশায়। কিন্তু আমি তাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে একটা সিগারেট ধরাই।
‘যাক না নিয়ে! নিয়ে কোথায় যাবে? পারলে আমার মগজের ধূসর কোষে সঞ্চিত লাল সবুজের ঝাঁজাল মায়াবী মিশ্রণটাকে ঝাঁকিয়ে বাষ্পীভূত করতে পারে কি না দেখো তোমার ওই কেলেভূতবন্ধু!’
‘একসময় তোমার কাছেও আসবে সে বাছাধন, তখন তাকে কীভাবে কেলেভূত আর ক্লাউন বলো দেখা যাবে!’
তার এতক্ষণকার চতুর নির্লিপ্ত কণ্ঠে অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পায়।
‘আমি চলে গেলে কিছু এসে যায় না। আর আমাকে নিয়ে যাওয়া তোমার ওই ছাপোষা কর্মচারীর দায়িত্বও বটে। বাঁধা দেব না কোনো। কিন্তু ফ্যাকাশে চর্মসার বালিকা বলে যাকে অবিহিত করছ, উপহাস করছ, তাকে নিয়ে যেতে কী পরিশ্রমটাই না করছে মিস্টার ক্লাউন, চেয়ে দেখো!’
আমরা পালাক্রমে টেলিস্কোপের লেন্সে চোখ রাখি। বেচারা মৃত্যুদূত ঘেমে নেয়ে উঠেছে। কিন্তু টেনেহিঁচড়ে, কোনোভাবেই ফ্যাকাশে বালিকাকে নিয়ে যেতে পারছে না।
‘তুমি এখানে বসে আঙুল চোষো, আমি তোমার বেতনভুক ছাপোষা কর্মচারীকে সাহায্য করে আসি। টেক কেয়ার!’
আমি সময়কে পাশ কাটিয়ে চলে যাই। তাকে খুবই বিধ্বস্ত ও পরাজিত দেখায়।
আবার সবুজ
সবুজের আল ধরে হেঁটে চলি আমি। সবুজের আল ধরে হেঁটে যেতে যেতে কত কিছু চোখে পড়ে! সবুজ রঙের পাখি গান শুনিয়ে যায়, শীতের কর্কশ আঁচড়ে রুক্ষ হয়ে যাওয়া গাছগুলোও সবুজ বাতাসের দমকায় উড়িয়ে দেয় চুল, সবুজ নদীর স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে অবশেষে পৌঁছে যাই তার কাছে। বর্তমানে যে ফ্যাকাশে। তার জন্য একটা সবুজ লতার মুকুট কিনেছিলাম পথে। ওটা পরিয়ে দিই। তার সবুজ হাসির স্নিগ্ধতায় টিকতে না পেরে বিদায় নেয় ফ্যাকাশে রং, কুঞ্চিত চর্ম, বলিরেখা, পাকাচুল, নোংরা বিছানায় লেপটে থাকা ইউরিন আর স্টুল।
‘এগুলো নিয়ে বিদেয় হও তো দেখি!’ আমি উজবুক কাল্লুটাকে নির্দেশ দিই। অবশেষে কার্যোদ্ধার হয়েছে ভেবে সে সাফল্যের বোকাহাসি হেসে তার গাট্টি-বোঁচকাতে ভরে নিয়ে যায়, যা কিছু দেহজ।
তারপর আমরা দুজনে মিলে সেই সবুজ নদীতে স্নান করতে যাই…
এবং একটি কৌতুক
সময় আর মৃত্যুকে আটকে রেখেছি খাঁচায়। বন্দী!
‘দুজনকে বেশ মানিয়েছে এখানে। যেন টু লাভবার্ডস!’
‘টু মানে তো দুই, বুঝলাম!’ সময় বলে।
‘বার্ড মানে তো জানি, কত পাখিকে কতল করলাম!’ মৃত্যু বলে।
‘কিন্তু “লাভ” মানে কী?’ দুজন সমস্বরে জিজ্ঞেস করে।
দুজনের কাঁচুমাচু জিজ্ঞাসু মুখ দেখে হাসিই পায় আমার। অথচ ওরা ভাবে যে ওরা পুরো বিশ্বকে, মানুষকে, যাবতীয় রংকে নিয়ন্ত্রণ করছে। জ্ঞানের এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে!
হা হা হা!!