:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মারজুক রবীন

গল্পকার

হিম পৃথিবীর পিঠে
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

হিম পৃথিবীর পিঠে

প্রতিটা ঝড়ের শুরুতে উইপোকারা অসহ্য এক সুন্দর বিষ্ময়ে ডানার স্বাধীনতা অথবা দগ্ধ হওয়ার নেশায় মাতাল হয় সারা সন্ধ্যায়। বারান্দায় ৪০ ওয়াটের বাল্বটা দুলছে একটা পেন্ডুলামে। দূরে দক্ষিণ থেকে ছুটে আসছে বুনোচিতার ডাকের মতো আদিম হাওয়া। এখুনি হয়তো এই সন্ধ্যার গল্প কাগজের নৌকোয় ভেসে যায়…

দেয়ালে নিজের ছায়াটাকে চিনতে কষ্ট হয়। সেই বিকেল থেকে নিজের ভেতর পুষে রেখেছি এক বুনো চিতা। রক্তের গন্ধ সন্ধ্যা থেকে তাড়া করছে আমাকে।

রিভা নিশ্চয় বৃষ্টি দেখছে, মাঝে আয়নার সামনে এসে দেখে নিচ্ছে টিপের সঠিক ভাঁজ। অথবা ওই লোকটা এতক্ষণে রিভার শরীরে মেতে উঠেছে বৃষ্টি তৃষ্ণায়। রিভার প্রতিটা অঙ্গ নিয়ে খেলছে। দাঁতের কামুক আদরে খুঁলে দিচ্ছে ব্রায়ের সবকয়টা হুক। নিপল আর স্তনে এবার বসাবে চুমুর লাল দাগ। তারপর নাভীর ভূগোল পার হয়ে লোহিত সাগরে তছনছ হয়ে যাওয়া নাবিক চোখে আবিষ্কার করবে রিভার শরীর…

উইপোকার মতো আমিও যেন পুড়ছি। না, প্রেমিকের মতো কোমল হৃদয়ে নয়!

ঈর্ষায়!

বারান্দায় হলুদ বাতিটা দোল খায়। বৃষ্টি কমছে ক্রমশ…

রাস্তায় এসে দাঁড়াতেই শহরটাকে অন্যরকম মনে হয়। মনে হয় সারা শহরটাকে কেউ ক্রমাগত দুই উরু ফাঁক করে ঠাপাচ্ছে। যেমন কেউ ঠাপাচ্ছে রিভাবে। ছিঃ! নিজের ভেতর ভয়ংকর পুরুষ জাগে!

অপার্থিব এই শহরে রিভাকে একটা দৃশ্য বলে মনে হয়।

কথা রাখার প্রতিশ্রুতিতে সেই সন্ধ্যার দৃশ্য স্থির হয়…

রিভা নিশ্চয় বৃষ্টি দেখছে, মাঝে আয়নার সামনে এসে দেখে নিচ্ছে টিপের সঠিক ভাঁজ। অথবা ওই লোকটা এতক্ষণে রিভার শরীরে মেতে উঠেছে বৃষ্টি তৃষ্ণায়। রিভার প্রতিটা অঙ্গ নিয়ে খেলছে। দাঁতের কামুক আদরে খুঁলে দিচ্ছে ব্রায়ের সবকয়টা হুক। নিপল আর স্তনে এবার বসাবে চুমুর লাল দাগ। তারপর নাভীর ভূগোল পার হয়ে লোহিত সাগরে তছনছ হয়ে যাওয়া নাবিক চোখে আবিষ্কার করবে রিভার শরীর…

তখন বিকেলের আলো ক্রমশ লাল হচ্ছিলো দক্ষিণে থেকে উত্তরে।

-দুদিন পরে পালাবো, স্টেশনে থেকো।

-থাকবো।

-কখনো বিষণ্ণ হওয়া যাবেনা ভেবে যে আমাদের বয়সে পার্থক্য প্রায় পনের বছর!

-আমি তোমাকে চাই রিভা…

আগামীকাল রিভাকে নিয়ে ট্রেনে পালাবো। কালও সন্ধ্যায় স্টেশনে ট্রেনের হর্ণ বাজবে। জড়ো হয়ে জমবে মানুষের ঢল। দূরে প্লাটফর্মের শেষ মাথায় গাঁজা বিক্রেতা নতুন কেউ এসেছে। মিন্টুর ক্রসফায়ারের পর নতুন করে কারো আধিপত্য। প্লাটফর্মে তাকাতেই মিন্টুর আকাশে অনন্ত তৃষ্ণায় হা হয়ে থাকা মুখটা ভেসে ওঠে। হা হয়ে যাওয়া রক্তশূন্য মুখে সেও যেন কাউকে ঠাপাচ্ছে…

-মামা কয়টা লাগবে?

-কী নাম তোর?

-ফাউ বইকেইনা, লাগবো?

-হ্যাঁ, দুইটা দেয়…

এখন আমিও প্রকৃত রাষ্ট্রবিরোধী পকেটে দুটো গাঁজার রোল নিয়ে সমস্ত নিয়ম কানুনকে ঠাপিয়ে ফিরে যাচ্ছি বাসায়…

প্রতিটা রাত আমাকে অন্ধকারে নেকড়ের মতো আঁকড়ে রাখে। রিভার ফিসফাস আওয়াজে প্রতিটা মধ্যরাতে মাতাল হই। রক্তের গন্ধে সারারাত আমার ভেতর হল্লা করে কেউ!

-কী করো?

-বৃষ্টি দেখি, মধ্যরাত খুব ভয়ংকর রিভা।

-হিহিহি….

রিভার ফিসফাস হাসিটা অচেনা আর অপার্থিব মনে হয়। হাসি থামিয়ে ফিসফিস করে আবার বললো- কালতো পালাচ্ছি!

আবার হিহিহি চাপা স্বরে। আমি চুপ করে আছি। দেখি একটা ছায়া কী করে মিশে যায় অন্য ছায়ায়। অন্য নারীর শরীরে যা খুঁজে পাইনি, তা খুঁজে পেয়েছি রিভার শরীরে! আহা স্নেহ!

প্রতিটা ভাঁজে যেন যত্ন করে রাখা আছে স্নেহের প্রতিটা চিহ্ন।

আগামীকাল রিভাকে নিয়ে ট্রেনে পালাবো। কালও সন্ধ্যায় স্টেশনে ট্রেনের হর্ণ বাজবে। জড়ো হয়ে জমবে মানুষের ঢল। দূরে প্লাটফর্মের শেষ মাথায় গাঁজা বিক্রেতা নতুন কেউ এসেছে। মিন্টুর ক্রসফায়ারের পর নতুন করে কারো আধিপত্য। প্লাটফর্মে তাকাতেই মিন্টুর আকাশে অনন্ত তৃষ্ণায় হা হয়ে থাকা মুখটা ভেসে ওঠে।

রিভার ফোন কেটে গেলো কী শব্দ করল সেদিকে মন নেই। কাল সন্ধ্যায় ট্রেনের হর্ণের অপেক্ষায় জেগে আছে চোখ।

বাইরে আবার বৃষ্টি নামলো। ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির শব্দ চুরমার করে দূরে স্টেশনে ছুটে যায় রাতের ট্রেন। রিভাকেও একটা ট্রেন মনে হয়। সকল নিয়ম কানুনকে ঠাপিয়ে সম্পুর্ণ অনিশ্চতায় ছুটে চলে রাতের ট্রেন। প্রতিটা শব্দ আমাকে জাগিয়ে রাখে, কেউ একজন ছায়া হয়ে মিশে যায় নিজের ছায়ার অন্ধকারে। গালে চুমু খায়। স্নেহে আমি মুখ গুঁজে দেই রিভার স্তনে…

ছায়া হয়ে হাঁটছি আজন্ম ছায়ার অন্ধকারে….

প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছি, অন্যছায়া দাঁড়ায় মুখোমুখি। পাশাপাশি হাঁটি দীর্ঘদিনের চেনা কাছের মানুষের  মতো। ওর চুলে বৃষ্টি জমে কুয়াশার মতো ছোট ছোট ফোঁটায়। আমার ভেতরে ও হেঁটে বেড়ায় সারা প্লাটফর্মে!

-মামা আইজ বাড়িতে রং লাগাইছে। আমার নাম শহীদ!

গত রাতের গাঁজা বিক্রেতা ছেলেটা। রেড জারি হওয়াকে ওরা বাড়ীতে রং লাগাচ্ছে বলে সাবধান করে মাদক ক্রেতাদের। চুপ কর শুয়োরের বাচ্চা বলে ছেলেটাকে একটা ধমক দিতে ইচ্ছে করছে। রিভার ছায়ায় তাকিয়ে আবার প্রেমিক হয়ে উঠি। শহীদকে পেছনে রেখে ছায়ায় শরীরে হেঁটে বেড়াই প্লাটফর্ম, করিম কাকার চা বিড়ির  দোকান, অতঃপর ল্যাম্পপোষ্টের লাল আলোয় এসে স্থির হই। স্টেশনে ট্রেন এসে থামল। আর আরো অন্ধকার হয় সন্ধ্যার রং।

শেষ হর্ণ বেজে উঠল মুহূর্তেই, এখুনি উঠতে হবে….

ট্রেনে উঠতেই ছায়াটা ক্রমশ ম্লান হয়ে আসছে। হাত থেকে ক্রমশ হারাচ্ছে হাত। চেরীর মতো একটা দৃশ্যের কাছে থমকে দাঁড়াই। রিভার তলপেট থেকে চিকন স্রোতে রক্ত ঝরছে। বৃষ্টিতে রিভার মুখ আকাশে চেয়ে আছে ইথারে, ফর্সা অন্ধকারে রিভার ঠোঁটে অন্তিম প্রশ্নবোধক ভাঁজ, চন্দ্রবর্ণ ধারালো চাকু….

রিভা গতকাল মধ্যরাতে খুন হয়েছে। রিভা হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন হিসেবে যাবতীয় নিয়ম কানুনকে ঠাপিয়ে  পালিয়ে যাচ্ছি আমি আততায়ী প্রেমিক।

কোন এক কদম ফোটা সন্ধ্যায় রাষ্ট্র আমাকে খুঁজে বের করবে…

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.