:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মারজুক রবীন

গল্পকার

মাঘ সংক্রান্তির রাতে

মাঘ সংক্রান্তির রাতে

উফফ! বাইরে যা শীত পড়ছে। কয়টা বাজে… মাইগড! সাড়ে দশ… আজ তোমার এখানে থেকে যাবো। তোমার বউ কিছু ভাববে নাতো, মানে চন্দ্রাবতী… ওকে দেখছিনা কেন! ধ্যাৎ! কোন বাইঞ্চোদ আবার ফোন দেয়- হ্যালো কে? তোর মা… চুদাই…! ও প্রান্ত থেকে লাইন কেটে দেয়। পরপর তিনটা জয়েন্ট আর দুই পেগ রামে দোলা এখন দারুণ ঘোরগ্রস্ত।

: খ্যাঁক! খ্যাঁক…

: কি ব্যাপার এমন ছাগলের মতো হাসছো কেন? ধুস বাল! আমার কিচ্ছু হয়নি। উইড আছে? আর একটা জয়েন্ট বানাও।

: তুমি বানাও। দোলা আমি ঠিক আছি ভংগিতে গাঁজায় রোল করে। কিছুটা কাঁপা হাতে রিজলা পেপারে জয়েন্ট বানায়। লেখক ম্যাচ বাড়িয়ে দেয়-জ্বালাও। আলো-আঁধারে দোলার ঠোঁটে জ্বলে উঠে মোরগফুলের মতো লাল টুকটুকে জয়েন্ট। খুশ খুশ শব্দে কয়েকবার কেশে বেশ কয়েক গাল ধোঁয়া ছেড়ে জয়েন্ট বাড়িয়ে দেয় লেখকের দিকে। ঠোঁটে জয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় বারের মতো পেগ সাজায়। জয়েন্টের ধোঁয়ায় যেন একচিলতে সাদা মেঘ জমেছে। লেখকও যেন সেই মেঘে উড়ছে, ভাসছে কোন অলোকিক গল্পের ডানায় -আচ্ছা, লালন ফকিরের একটা নবুয়ত পাওয়া উচিত ছিলো! এই বাংলায় কোন নবী নাই! হাহাহা…

 

: মোল্লারা তাহলে লালনকে নিজেদের সম্পত্তি ভাবতো।

: তাও ঠিক….। কতবছর পর?

: প্রায় নয় বছর…

: জার্মানিতে নিশ্চয় বেশ কিছু অসাধারণ বছর কাটিয়েছো। অসাধারণ সব অভিজ্ঞতা।

: অসাধারণ কিনা জানিনা। প্রায় প্রতিটা হলুদ সন্ধ্যায় বিষণ্নতারা গুটি গুটি পায়ে এসে ভর করতো। বর নামের জন্তুটা ডিউটি থেকে ফিরতো অনেক রাতে। এসেই নাক ডেকে ঘুম। অথচ সারারাত আমার ভেতর জেগে থাকতো অন্য কেউ, অন্য আমি…। একবার হলো কি…! দোলা যেন স্মৃতির ঘরে হাতড়াচ্ছে, কোনটা রেখে কোনটা বলবে। অনেক কথা জমা থাকলে যেমন কিছুই বলা হয়না।

 

: চিয়ার্স!

: চিয়ার্স! শীতের রাত। মাথার উপর হলুদ আলো ভেদ করে বাইরে নিরবতা শব্দ করছে থই থই করে। এক এক করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পাড়ার সব দোকান পাট। থেকে থেকে দোকানের সার্টার টানার শব্দ শোনা যায়। শোনা যায় অভ্যস্ত আর অনভ্যস্ত ঢোক গেলার শব্দ। দুজন খুব চালাক পোকা অথবা বদ্ধমাতাল ক্রমশই মিশে যাচ্ছে সেই নিরবতায়। নিরবতার কি আকাশ থাকে? ডানা? বিষন্নতা? অথবা নিরবতা কি জানে হঠাৎ জ্বলে ওঠা ল্যাম্পপোস্টে পোকার আত্নহত্যার গল্প! এইযে দুজন নর-নারী পান করে চলছে নিরবে, এখানে কি আত্নহত্যার গল্প নেই! আকাশতো আছে। ইচ্ছে হলেই ছোঁয়া যায়।

: প্রজ্ঞাকে তোমার মনে আছে? বলতে গিয়ে গলা যেন কিছুটা কেঁপে ওঠে। দোলা ভ্রু কুঁচকায়।

সুইসাইড নয়, ওকে ঠান্ডা মাথায় মার্ডার করা হয়েছে। বলতে বলতে লেখক অনেকটা উদভ্রান্তের মতো উঠে দাঁড়ায়। কোঠর ঠিকরে লাল ঢিমলাইটের মতো চকচক করে চোখ। বিড়বিড় করে কি যেন বলে কিছুক্ষণ। এদিক-ওদিক তাকিয়ে আবার হেলান দিয়ে বসল সোফায়। দোলা এখন নিরব দর্শক। সে এখন কোন বয়স্ক পুরুষের পাগলামী দেখছে। অথবা শুনছে ভেতরে সহজ মানুষটার সরল স্বীকারোক্তি। পাগলেরও একটা ফিলসফি থাকে।

: কেন থাকবেনা। একসময়তো ওকে প্রচুর লেবার দিয়েছো! তোমার পাশের ফ্লাটেইতো থাকতো। ছোট্ট একটা ক্যাবল তারে ঝুলে পড়েছে সিলিং ফ্যান-এ। খেলা শেষ…

: সুইসাইড নয়, ওকে ঠান্ডা মাথায় মার্ডার করা হয়েছে। বলতে বলতে লেখক অনেকটা উদভ্রান্তের মতো উঠে দাঁড়ায়। কোঠর ঠিকরে লাল ঢিমলাইটের মতো চকচক করে চোখ। বিড়বিড় করে কি যেন বলে কিছুক্ষণ। এদিক-ওদিক তাকিয়ে আবার হেলান দিয়ে বসল সোফায়। দোলা এখন নিরব দর্শক। সে এখন কোন বয়স্ক পুরুষের পাগলামী দেখছে। অথবা শুনছে ভেতরে সহজ মানুষটার সরল স্বীকারোক্তি। পাগলেরও একটা ফিলসফি থাকে।

: খুনটা কি তুমি করেছো। খুব স্বাভাবিক গলায় বলল দোলা।

: না। আমিতো ওকে ভালোবাসতাম। হ্যাঁ, ভালোবাসতাম…

: তাহলে কে খুন করলো! সবাইতো সুইসাইডই বলছে।

: এটাতো বলেনি সবাই প্রজ্ঞা সিঙ্গেল মাদার হতে চেয়েছিলো।

: মানে তোমাদের বেবী ও একাই ক্যারি করে চেয়েছিলো।

: ব্যাপারটা আরো একজন জানতো।

: জানতো মানে…

: এখন জানেনা…হা হা হা… দোলা জানে লেখকের বানিয়ে মিথ্যা গল্প বলার অভ্যাস আছে। মিথ্যা বলাটাও শিল্প। গল্পকাররা কি মিথ্যা বলে! সব কিছুরই শেষ থাকে, গল্পেরও।

ভালোতো তোমাকেও বেসেছি দোলা। সেই একুশ বছর বয়সে একসাথে বাঁচবো বলে ঘর পালিয়েছিলাম। ঘরতো হয়নি, পথ হলো আলাদা। তারপর প্রতিটা গভীররাতে ট্রেনের শব্দে ভেবেছি তোমার সাথে আবার পালাবো তূর্ণা নিশীথায়… দোলা কিছু বলতে যেয়ে থেমে যায়। লেখক ওর পিঠের কাছে এসে দাঁড়ায়। একুশ বছর বয়স… ভাবতে গেলেই বুকের ভেতর বেজে ওঠে সহস্র রণক্ষেত্র। দোলা বোঝে তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

দোলা উঠে দাঁড়ায় জানলার কাছে। দূরে কোন একটা বাড়িতে তখনো আলো জ্বলছে, হঠাৎ জ্বলে ওঠা ল্যাম্পপোস্টের মতো। একী তবে পতঙ্গ জীবন? মানুষরা কি প্রকৃতই পাশ ফিরে শোয়! আর পতঙ্গেরা মরে যায়। অনেক চেষ্টা করে প্রজ্ঞা নামটা মাথা থেকে সরাতে পারছেনা। লেখকের তো বউ আছে! চন্দ্রাবতীকে নিয়ে কখনোই ঈর্ষা হতোনা। লেখক প্রজ্ঞাকে ভালোবাসতো? ভালোবাসে। ভালোবাসারতো কোন আকাশ নেই, আছে অদম্য ইচ্ছে স্বাধীনতা।

: ভালোতো তোমাকেও বেসেছি দোলা। সেই একুশ বছর বয়সে একসাথে বাঁচবো বলে ঘর পালিয়েছিলাম। ঘরতো হয়নি, পথ হলো আলাদা। তারপর প্রতিটা গভীররাতে ট্রেনের শব্দে ভেবেছি তোমার সাথে আবার পালাবো তূর্ণা নিশীথায়… দোলা কিছু বলতে যেয়ে থেমে যায়। লেখক ওর পিঠের কাছে এসে দাঁড়ায়। একুশ বছর বয়স… ভাবতে গেলেই বুকের ভেতর বেজে ওঠে সহস্র রণক্ষেত্র। দোলা বোঝে তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। দূরের আকাশটাও যেন কুয়াশায় জানালার কাছে এসে থেমে গেছে। রাত প্রহরীর বাঁশিটা মহুর্তে হয়ে উঠলো ঈস্রাফিলের বাঁশি। প্রলয়। ভেতরটা বুনোঝড়ে একেবারে তছনছ হয়ে যাক। কোন ঝড়ই থেমে থাকেনা, বয়ে যায়। ভেসে যায় দোলার চোখে নূহ নবীর নৌকোর মতো। লেখকের কোন প্রতিক্রিয়া নেই।একুশ বছরের প্রেমিকের মতো সে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু মাথার ভেতরে খেলছে রঙ, ল্যাম্পপোস্টকে ঘিরে থাকা একঝাঁক পোকার মতো সেসব রঙ, দৃশ্য…।

এই দৃশ্যের সামনে যাপিত মোহ, প্রেম,বিষ্ময় বলে কিছু নেই। আছে কেবল সহজ স্বীকারোক্তি- জানো প্রজ্ঞাকে কে মেরেছে? চন্দ্রাবতী।ওর ফাঁকা বাসায় একদিন ক্যাবলের তার প্যাঁচিয়ে ওকে মেরে, তারপর ঝুলিয়ে দেয় সিলিং ফ্যান-এ। অথচ কেউ বুঝতেই পারলোনা। লেখক কিছুটা সরে দাঁড়ায়। একুশ বছরের প্রেমিক ছায়া হয়ে মিশে যায় ওপাশের দেয়ালে। দোলা কোন শব্দ না করে বসে পড়লো। গলাটা যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে তৃষ্ণায়। যেন একুশ বছরের প্রেমিক জানে তার ক্ষ্যাপা প্রেমিকা কি চায়- বরফ শেষ। ফ্রিজে দেখো। লেখক আয়েশি ভংগীতে সিগারেট জ্বালায়। মাথার উপর জমে নিকোটিন মেঘ। আহা তৃষ্ণা! ল্যাম্পপোস্টে কিলবিল করা পোকাদের তৃষ্ণা। গুঞ্জরনে রাত জাগে থেকে থেকে আছড়ে পড়া সমুদ্র দেয়ালের মতো। সাথে একঝাঁক পোকার মতো গুনগুন করছে নিরবতারা। দোলা ফ্রিজ খুলতেই চিৎকার করে উঠল কিনা জানিনা। কিন্তু চন্দ্রাবতীর বডিটা তেমনি পড়ে আছে খোলা চোখে। কিছু বলতে চায়, হয়তো কোন এক প্রজ্ঞার গল্প। কে জানে! দূরে কোথাও আবার ঘুমিয়ে পড়ে রাত।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.