:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
সালমা লুনা

গল্পকার

যাত্রা
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

যাত্রা

বিছানায় রাজ্যের কাপড় ছড়িয়ে নিয়ে বসেছে শাহানা। যার বেশিরভাগই শাড়ি আর সালোয়ার-কামিজ। কয়েকটা প্যান্ট আর বেশকিছু  ঢিলেঢালা টপসও আছে। শাড়িগুলো নেবে না। ওগুলোকে ঝেঁড়েঝুরে ভাঁজ করে ফের গুছিয়ে রাখলো আলমিরাতে। কত কত শাড়ি আর তার সাথে জড়িত কতোশত স্মৃতি।
শাড়িতে তাই মমতার হাত বুলায় সে।

শাড়ি তার কখনোই পছন্দের পোশাক ছিলো না। শাড়ি সে যতটুকুই পরেছে শুধু জাফরকে খুশি করতেই পরেছে। আর পরেছে শ্বাশুড়ির ইচ্ছে অনুযায়ী। শ্বশুরবাড়ি থাকা অবস্থায় বউদের শাড়ি পরা বাধ্যতামূলক হলেও ছুটির দিনে বা কোন অনুষ্ঠানাদি ছাড়া তাকে খুব বেশি একটা শাড়ি পরতে হয়নি। কারণ, পড়ালেখা করতে তাকে বাইরে বেরোতেই হয়েছে। তাই তার সালোয়ার-কামিজই মেনে নিয়েছে সকলে।
জাফরের পছন্দ ছিলো শাড়ি। বিয়ের পর বেশ কয়েক বছর ছুটির দিনগুলোতে বাসায় শাড়ি পরতো সে। অন্তত মেয়েটা হবার আগ পর্যন্ত।

গোছাতে গোছাতেই শাহানা উঠে গিয়ে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে আসে আলমারির নিচের তাক থেকে। আলতো হাতে সেই ব্যাগ থেকে টেনে বের করে আনে লাল টকটকে একটা শাড়ি। রক্তলাল শাড়িটার সারা গা জুড়ে ছড়ানো ছিটানো সোনালি সুতোর ছোটছোট ফুল, পাড়ে একই সুতায় চওড়া চিকনকারির কাজ। ইটালিয়ান ক্রেপ জর্জেটের এই শাড়িটা বেশ দামি। এত দামি শাড়ি শাহানা কখনোই কেনেনি নিজের জন্য। তাও আবার নিজের জমানো টাকা দিয়ে।
শাড়িটা প্যাকেটে ঢুকিয়ে রেখে দ্রুত হাতে কাপড়চোপড় গোছাতে শুরু করে সে। গোটা কতক রুমে পরার ঢোলা গেঞ্জি ভরে নেয়। সাথে দুটো স্কার্ট। ঘুমানোর সময় এসবই তার আরামদায়ক পোশাক।
লাল শাড়ির ভাঁজ থেকে ব্লাউজটা বের করে। শর্ট স্লিভের সোনালি রঙা ব্লাউজ, গলা আর হাতের চারধারে চিকন লাল পাইপিং। পেছনে বিপজ্জনক ভাবে অনেকটাই খোলা পিঠ। ঘাড়ের কাছে ফিতে বাঁধা।
রেশমা জোর করে তার দরজিকে দিয়ে আর্জেন্ট করিয়েছে। শাহানা অনেক না-না করেছে। শোনেনি রেশমা।

বিয়ের পর বেশ কিছুদিন পিঠ খোলা, বড় গলার ব্লাউজ পরেছে সে। জাফর পছন্দ করেনি বলে বাদ দিয়েছে। জাফর অতটা মোল্লা টাইপ না হলেও তার নাকি ভালো লাগতো না, তার বউয়ের ফর্সা সুন্দর পিঠের দিকে পরপুরুষের চোরা দৃষ্টি!
রেশমা সেসব জানে, বলেছে শাহানা।

‘বয়স হয়ে গেল ছেচল্লিশ। কদিন পর মেয়ের বিয়ে দেব। এসব পরা যাবে না রে!’ বলে শাহানা গাঁইগুঁই করেছে।
রেশমা সেসব শোনার পাত্রী না,
‘এনিভার্সারিতে না পরলে আর কবে পরবি ! তুই এত কনজার্ভেটিভ হলি কবে থেকে?’
হাউকাউ করে দরজিকে ডিজাইন বুঝিয়ে দিয়েছে রেশমা। সাথে লেস দেয়া সিল্কের পেটিকোট।

চুপেচুপে কানের কাছে মুখ এনে বলেছে, আরে ওইখানে তোকে জাফর ভাই ছাড়া আর কে দেখবে? শুধু ব্লাউজ পেটিকোট পরেও থাকতে পারবি।
এরপর কফি খেতে খেতে চোখ টিপে বলেছে, এই ব্লাউজটা দিয়ে শাড়িটা পরলে তোকে যে কী সুন্দর লাগবে আমি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি। আমি শিওর, জাফর ভাই আবার তোর প্রেমে পড়বে।

রেশমা শাহানার স্কুল কলেজের বন্ধু। বন্ধুরা সবাই একে একে দেশ ছেড়ে চলে গেছে, নয়ত অন্য শহরে বসতি হয়েছে তাদের। এখন ওরা দুই বান্ধবী আছে শুধু এক শহরে।
রেশমা একটা এনজিও চালায়।
খুব ব্যস্ত জীবনেও সে সবসময় যোগাযোগ রেখে চলে কৈশোরের বান্ধবীর সাথে।
ওর সাথে শপিং, দরজিবাড়ি যাওয়া, ডাক্তার দেখানো, কফিশপে ঢুঁ দেয়া থেকে শুরু করে শহরের কোথায় কাশফুল কোথায় ছাতিম হিজল কৃষ্ণচূড়া ফুটলো সেসব দেখতে যায় শাহানা। ও না থাকলে শাহানা হয়তো কলের পুতুলই হয়ে যেত এতদিনে।

অথচ শাহানা সংসার সামলে মেয়ের লেখাপড়া কোচিং-এ আনা-নেওয়া বাপের বাড়ি, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নানা দায়দায়িত্ব পালন করতে করতে রেশমার কোন কাজে লাগার সময়ই বের করতে পারেনি কখনোই।
তা নিয়ে রেশমার কোন মাথাব্যাথাও নেই। সে আছে শাহানার পাশে। একটা বট কিংবা অশ্বত্থের মতো, শান্তি-শান্তি ছায়া হয়ে।

অথচ জাফর সেই রেশমাকে সহ্যই করতে পারে না। অবশ্য জাফর শুধু রেশমা না, এই পৃথিবীতে জাফর আর জাফরের পরিবারের লোকজন ছাড়া যাকে যাকে পছন্দ করেছে শাহানা, ভালোবেসে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছে- তাকেই অপছন্দ করেছে। এমনকি তাদের বিয়ের নয় মাস পর যখন বাবার বাড়ির সাথে শাহানার যোগাযোগ হলো, শাহানার ঘনঘন সেখানে যাওয়া বা পরবর্তীতে বড় মেয়ে হিসেবে পরিবারে শাহানার কোন অংশগ্রহণ দেখলেও সে মুখে কিছু না বলে তার বিরক্তি প্রকাশ করতে ছাড়েনি।
বিয়ের আগে থেকেই শাহানা লেখালেখি করতো। বিয়ের পরপর শাহানার সেসব লেখা নিয়ে জাফরের সে কী হাসাহাসি! পরে তো সব বন্ধই করে দিলো সে।

জাফর না বলুক সে তো বলতে পারতো। ভালোবাসার মানুষ, প্রেমিকটি স্বামী হয়ে গেলে, সেও তো প্রেমিকা থেকে স্ত্রী- ই হয়ে গেছে। সে তো জাফরকে বিয়ের পর কোনোদিনই বলতে পারে নি, এখনো জাফরের গলায় গানের সুর কিংবা কবিতার লাইন শুনলে শাহানার বুকের ভেতর কেমন সুখের ভাঙচুর হয়। কাছে এসে একবার গাঢ় চোখে তাকালে এখনো এতবছর পরেও বুকটা একটু ধরফর করেই তার।

দুর ছাই! কী সব ভাবছি- ভেবে গা ঝাঁড়া দিয়ে উঠে পড়ে শাহানা।
সেসব দিনতো কবেই শেষ। সংসার করতে গেলে অতসব ধরলে চলে না। তাহলে আর সংসার হয়না। সংসারে একজন আরেকজনের দোষ ধরতে চাইলে সারাদিন ধরা যাবে।
তাছাড়া লেখালেখি করে কিইবা হাতিঘোড়া মারতে পারত সে। দুটো কবিতা পত্রিকায় ছাপা হলে এমন আর কী শিং লেজ বের হয় মানুষের!

তার চেয়ে এই যে দুটো ননদ একটা ননাস একটা একটা করে ভাশুর আর দেবরের সাথে হেসেকেঁদে, খিটখিটে শাশুড়িকে খুশি করার প্রাণান্ত চেষ্টা করে মিলেমিশে বিয়ের পঁচিশটা বছর কাটিয়ে দিলো সব সামলে সুমলে এও কি কম পাওয়া?

দেখতে দেখতে পঁচিশটা বছর!

কম তো নয়! শাহানার হঠাৎ ভীষণ কান্না পায়। চোখটা জ্বালা করে উঠে। জাফর জানলোই না সে এখনো জাফরকে কতটা ভালোবাসে।
জানবেই বা কীভাবে?
সে তো এই পঁচিশ বছরের একদিনও জাফরকে বলেনি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। এখনও আগের মতোই ভালোবাসি।
জাফর না বলুক সে তো বলতে পারতো। ভালোবাসার মানুষ, প্রেমিকটি স্বামী হয়ে গেলে, সেও তো প্রেমিকা থেকে স্ত্রী- ই হয়ে গেছে। সে তো জাফরকে বিয়ের পর কোনোদিনই বলতে পারে নি, এখনো জাফরের গলায় গানের সুর কিংবা কবিতার লাইন শুনলে শাহানার বুকের ভেতর কেমন সুখের ভাঙচুর হয়। কাছে এসে একবার গাঢ় চোখে তাকালে এখনো এতবছর পরেও বুকটা একটু ধরফর করেই তার।
দুজনেরই বয়স বেড়েছে।
কতটা সময় চলে গেলো জীবন থেকে। তবু শাহানার মন এখনো সেই রহস্যময় রোমাঞ্চকর বুক ঢিবঢিব করা ভালোবাসার কাছেই পড়ে থাকে দিনমান।
হয়তো জাফর এজন্যই বলে, তোমার বয়স বাড়ে না? তোমার ছেলেমানুষী যায় না কেন?

যাই বলুক জাফর। এবার সে বলবেই সব। বালিতে গিয়ে মনের সব কথা উজার করে দেবে জাফরের কাছে।
হয়তো জাফরও কিছু বলবে তাকে। সেই বিয়ের আগের দিনগুলির মতো।
কিভাবে সব ভুলে ছিলো তারা এতটা বছর!
সেই যে জাফরের হাত ধরে বেরিয়ে এসেছিল খালার বাসা থেকে। জাফরের সাথে প্রেম করার অপরাধে তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলো বাবা মা ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে অনার্স ভর্তি হতে হতেই। খালার বাসায় তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো। খালার শ্বশুর বাড়ির কেমন যেন আত্মীয় হয় ডাক্তার পাত্র। খালা খালু তখন জামালপুর থাকতেন।
তাকে খুঁজে না পেয়ে জাফর তখন অস্থির। শেষে এই রেশমার কাছে ঠিকানা পেয়েই জাফর ছুটে গিয়েছিল জামালপুর। সেখান থেকেই জাফরের সাথে চলে এসেছিলো সে। না, পালিয়ে আসেনি। খালা খালুকে বলে তাদের নির্বাক চোখের সামনে দিয়েই শক্ত করে জাফরের হাত ধরে চলে এসেছিল শাহানা।
সেটা ছিলো ডিসেম্বরের ষোল তারিখ। বিজয় দিবস। তাদের ভালোবাসার জয় হয়েছিলো কিনা জানেনা শাহানা। শুধু জানত, জাফর ছাড়া সে বাঁচতে পারবে না। সারাজীবন যেভাবেই হোক জাফরের সাথেই থাকতে হবে তাকে।

পঁচিশ বছর আগের সেইদিনই ঢাকা এসেই তারা বিয়ে করেছিল। জাফরের এক বন্ধুর বাসায়। তাড়াহুড়োয় রেশমা তার এক খালাতো ভাবির একটা কালো চুমকির কাজ করা শাড়ি নিয়ে এসেছিল, বিয়ে পড়ানোর জন্য।
সেই সন্ধ্যায় রেশমা একটু হলুদ আর মেহেদিও জোগাড় করেছিলো কিভাবে জানি। হাতে মেহেদি আর কপালে হলুদ ছুঁইয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলেছিলো, দেখিস তুই খুব সুখী  হবি। আজকের এই দ্বীনহীন বিয়ের জন্যই তুই সুখী হবি। আল্লাহ তোর কপালে অনেক সুখ দিবেন। উনি এত নির্দয় না।
জাফরের বন্ধুদের কেউ একজন ক্যামেরা এনেছিল।
পরে কালো শাড়ি পরা ওই বিয়ের ছবিগুলো দেখে শাহানার মনে হয়েছিলো, একটা কালো শাড়ি পরে বিয়েই লেখা ছিলো তার কপালে!

তাই বুঝি সেদিন শাড়ির দোকানে সেলসম্যান এর দুই কাঁধে দু’রঙের শাড়ির মধ্যে কালো শাড়িটাকে দোকানের সবার চোখে, এমনকি প্রিয় বন্ধু রেশমার চোখেও বেশি সুন্দর দেখালেও এই লাল শাড়িটাই সে কিনে ফেলেছিলো! রেশমাও হয়তো ওর মন বুঝেই আর কিছু বলেনি।

রেশমার কথাই সত্যি হয়েছে। সে তো আসলেই সুখী হয়েছে। গাড়ি বাড়ি অর্থ সম্পদ ছাড়াও তাকে আল্লাহ একটা মেধাবী কন্যা দিয়েছে যে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গেছে কানাডায়। আত্মীয় স্বজন সবাইকে নিয়ে সে তো সুখীই আজকে। সবচেয়ে বড় কথা, পাশে আছে তারই ভালোবাসার মানুষ যাকে সে সবকিছুর বিনিময়ে চেয়েছিল।

খুব বেছেবুছে সুটকেসে একে একে চারখানা থ্রিপিস তুলে ফেলল শাহানা। মেয়ে কানাডায় পড়তে চলে যাবার আগে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে নিজের জন্য টুকিটাকি কেনাকাটা করার সময় মায়ের জন্যও কয়েকটা টপস কিনে এনেছিল। সেগুলো ধুয়ে ইস্ত্রি করে রেখেছে কাজের মেয়েটা। দুটা জিনস আর গেভার্ডিনের প্যান্টের সাথে ওগুলোও নিলো সে।
কামিজের সাথে মাঝেমধ্যে জিনস পরে শাহানা। কক্সবাজার সিলেট কিংবা রাঙ্গামাটি বেড়াতে গেলে শুধু টপস দিয়েও জিনস পরেছে কখনো কখনো। আর ওখানে  বিদেশ বিভুঁইয়ে কেই বা দেখছে তাকে!

লাল শাড়ির প্যাকেটের ভেতর একটা মখমলি কাপড়ের থলেতে মুড়ে খুব যত্ন করে রেশমার দেয়া গিফট টা ঢোকায় সে। লাল বড় বড় পাথরের মাঝে সোনালী বুটা দেয়া একটা মালা। সাথে কানের লাল পাথরের টব। গতকালই দিয়ে গেছে রেশমা। বিয়েবার্ষিকীর উপহার।
রেশমা যাবার আগে বারবার করে বলে গেছে, তুই কিন্তু খুব সুন্দর করে সাজবি। যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছি সেভাবে।
রেশমা ওকে সুন্দর করে সাজার টিপসও দিয়েছে। শাহানা যে সুন্দর করে সাজতে পারেনা- ও তাও জানে।
চোখে পানি এসে যায় শাহানার। ওর মতো মানুষের কত ভাগ্য হলে এমন বন্ধু পায়।

ষোল তারিখ সন্ধ্যায় লাল শাড়ির সাথে ম্যাচিং এই সেটটা পরে বালির সমুদ্র আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষা কোন এক রিসোর্টের পুলসাইডে বসে সে আর জাফর ডিনার করবে চোখে চোখ রেখে, ভেবেই তার বুকের ভেতরটা কেমন কেঁপে কেঁপে উঠলো।

ষোল তারিখ সন্ধ্যায় লাল শাড়ির সাথে ম্যাচিং এই সেটটা পরে বালির সমুদ্র আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষা কোন এক রিসোর্টের পুলসাইডে বসে সে আর জাফর ডিনার করবে চোখে চোখ রেখে, ভেবেই তার বুকের ভেতরটা কেমন কেঁপে কেঁপে উঠলো।
সেই কাঁপুনি নিয়েই চট করে উঠে আলমারির উপরের তাক থেকে একটা ব্রাউন প্যাকেট নামিয়ে এনে ভেতর থেকে একটা শাদা লেস বসানো গোলাপি নাইটি বের করে সুটকেসের তলায় ঢুকিয়ে দিল সে। সবশেষে শাড়িটা সুটকেসের ডালার আলাদা খোপে চালান করে দিয়ে সুটকেস লক করে দিল।

এই নাইটি-টা এমনকি রেশমাকেও দেখায়নি শাহানা। দেখাতে ভারি লজ্জা লজ্জা লাগছিলো।
যত রোমান্টিকতাই থাকুক এটা তাদের পঁচিশতম বিবাহবার্ষিকী, প্রথম হানিমুন তো আর না।

মনে পড়ে শাহানার, তাদের কোন হানিমুন হয়নি। এমনকি ধুমধাম করে এনিভার্সারিও না।
হানিমুনে যাবে কি! যে ছেলে পাশ করে বেরিয়ে চাকরির চেষ্টা করতে না করতেই লুকিয়ে বিয়ে করে ফেললো, তারপর সেই বউ নিয়ে বাপের ঘাড়ে বসে ছমাস ধরে খাচ্ছে সেই ছেলের তো আর বাবামার কাছে হানিমুনে যাবার পারমিশন চাইতে পারে না।
ছ’মাস পর জাফরের একটা যেনতেন চাকরি হলো। তখনও তারা কোথাও যায়নি, কক্সবাজার রাঙ্গামাটি বান্দরবান কোথাও না। তখন ছুটির দিনে তারা শহরেই এদিক সেদিক যেতো। সেই রমনা, চিড়িয়াখানা বা বোটানিক্যালেই আর কত যাওয়া যায়। তাই একসময় দুজনের ঘুরাঘুরি বন্ধই হয়ে গেল।

ততদিনে শাহানা অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করে ফেলেছে। এসবের মধ্যেই মেয়ে মেধা এসেছে তার কোলে।
জাফরও চাকরি বদল করেছে। অনেক ভালো চাকরি, প্রমোশনের অফার, দ্বিগুণ বেতন এসবের কারণে সেখানেই মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছে জাফর। বেড়াতে যাবার ফুরসতই পায়নি আর। মেয়েকে বড় করা আর যৌথ পরিবারের মেজবউ হয়ে এক অন্নভুক্ত পারিবারিক জীবনের হাসিকান্না সুখ-দুঃখের বিশাল রথের চাকাটা সকলের সাথে মিলেমিশে ঠেলতে ঠেলতে ততদিনে শাহানা ভুলেই গিয়েছে যে তাদের হানিমুন হয়নি।

রাশভারী শ্বশুর আর রাগী শ্বাশুড়ি বেকার ছেলের অমন হুট করে বিয়েটা মেনে নিয়েছিলেন এই ঢের। আবার হানিমুনও?!
না, এটা শাহানা নয় জাফরই বলেছিলো।
প্রথম চাকরি পাওয়ার মাসখানেক যেতে শাহানা খুব আহ্লাদী হয়ে একদিন জাফরকে বলেছিলো, লাল শাড়ি পরে পার্লারে সেজেগুজে বউ তো সাজতে পারলামই না। চলো না হানিমুনে অন্তত কক্সবাজার যাই। সবাই তো যায়।
তখনও শাহানার বাবামা তাদের বিয়ে মেনে নেয়নি। জাফর একটু চিবিয়ে চিবিয়ে বলেছিল, লাল টুকটুকে বউ সাজতে পারতে যদি তোমার বাবা মায়ের পছন্দের ওই ডাক্তারকে বিয়ে করতে। হানিমুনও করতে পারতে বিদেশে। তোমার বাবা মা তো এখনো আমাকে মানতেই পারলো না। আমার এমন বাবা মা যে বিয়ে মেনে নিয়েছেন এটাই তো বেশি। আবার হানিমুন!
ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলো শাহানা। আর কখনো বলেনি হানিমুনের কথা।
সত্যিই তো, তার বাবা-মায়ের জন্যই তো তার বউ সাজার স্বপ্ন পুরণ হয়নি। হানিমুন না হলে কীইবা হবে। জাফরকে তো পেয়েছে। শ্বশুরশ্বাশুড়ি মনে কষ্ট পান এমন কাজ সে কী করে করবে!

মনটা আজ কেন যে এত অস্থির হলো বুঝছে না শাহানা। রান্নাঘর থেকে ঘুরে কাজের লোকদের সব বুঝিয়ে দিয়ে এলো। জাফর গিয়েছে তার মায়ের সাথে দেখা করতে আর সাথে নেবার জন্য জরুরি কিছু ওষুধপত্র আনতে।
ও এলে একসাথে খাবে- বুয়াকে বুঝিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে এসে পাসপোর্ট আর জরুরি কাগজগুলি গুছিয়ে হাতের কাছে রাখলো শাহানা। জাফর এসে আবার চেক করবে। এটাই ওর স্বভাব। বারেবারে সবকিছু চেক করা।

চারিদিকে তাকিয়ে আর কিছু বাকি রইলো কীনা দেখতে দেখতে শাহানার মনে পড়ে, তাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে কিছুটা ধুমধাম হয়েছিলো। মা একটা মেরুন বালুচরি দিয়েছিল। সাথে পাঁচভরির একটা গহনার সেট। দুই ননদ আর দেবর মিলে একটা কেক এনেছিল। তখন কেবল কুপার্স হয়েছে। সেখান থেকে দামি কেক আনলো ওরা। জাফরও সন্ধ্যায় অফিস ফেরতা একটা মেরুন রঙা সুতোর কাজ করা অফ হোয়াইট তাঁতের শাড়ি নিয়ে এলো। সাথে একগোছা রজনীগন্ধা।
বাসায় শ্বাশুড়ি আর জা মিলে ভালো খাবার রান্না করেছিলেন। তার ভাইবোনরা এসেছিল। বাবা মাও এসেছিলেন। আর এসেছিলো রেশমা।
সেই প্রথম সেই শেষ। আর কখনো এনিভার্সারির কোন অনুষ্ঠান হয়নি তাদের।
একবার এনিভার্সারিকে সামনে রেখে কক্সবাজার যাবার প্ল্যান করেছিল জাফর। ওকে কিচ্ছু জানায়নি।
হঠাৎই তিনটা টিকিট করে এনে ফেললো সামনে। মেয়ে বউকে নিয়ে এয়ারে সোজা কক্সবাজার। সাতদিন থাকবে তারা।
এত সারপ্রাইজড হয়েছিল শাহানা যে খুশিতে চোখে পানি এসে গিয়েছিল তার। মেধা আর নিজের জন্য কাপড় চোপড় কী নেবে তার প্ল্যান করা শুরু করেছিলো।
সাতদিন পরে ষোলই ডিসেম্বর। তাদের দশম বিয়ে বার্ষিকী। সেবারও এমন দশ তারিখেই ফ্লাইট ছিলো ।
শ্বাশুড়ির শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না কদিন ধরেই। হজম কম হচ্ছিলো, বুকে পিঠে একটা ব্যথা।
যাবার দিন কতক আগে জাফরই বললো, আম্মাকে একটু ডাক্তার দেখিয়ে রেখে যাই। বয়স হচ্ছে, কখন কী হয়।
সে নিজে তো আর মা কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়না। শ্বশুর ভাশুরও নিয়ে যান না। তাদের দুই জায়ের যে কোন একজন যায় সবসময়। বড় জায়ের ছেলের জ্বর তাই শাহানাকেই যেতে হলো।
ডাক্তার দেখেশুনে বললেন, গলব্লাডার স্টোন হতে পারে।
কিছু টেস্ট করতে দিলেন।
টেস্টের রিপোর্টে গলব্লাডারের পাথর ধরা পড়লো।
ডাক্তার বললেন, অপারেশন করে ব্লাডার ফেলে দিতে হবে।
শাহানা একটু উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, কতদিনের মধ্যে ফেলতে হবে?
ডাক্তার হেসে বললেন, যেকোন সময় আসুন। অপারেশন আমিই করে দেব। বেশিদিন হসপিটালে থাকা লাগবে না। এসব তো আর প্রাণঘাতি রোগ না। তবে বেশি দেরি করলে সিরিয়াস হয়ে যায় অনেক সময়।
মরিয়া হয়ে শাহানা জিজ্ঞেস করেছিল, দু-চারদিনের মধ্যেই করাতে হবে?
ডাক্তার হেসে ফেলেছিলেন, আরে না না। দুচারদিন কেন, দু’চারমাস পরেও করাতে পারবেন।

সেদিন বাসায় ফিরে রাতে খাবাত টেবিলেই থমথমে মুখে শ্বাশুড়ি ঘোষণা দিলেন, তিনি অপারেশন এখনই করাবেন। দুচারদিনের মধ্যেই। শ্বশুর থেকে শুরু করে ভাশুর দেবর এমনকি আমেরিকা থেকে ফোন করে ননাস পর্যন্ত মাকে বোঝাতে পারলো না কয়েকদিন পরে করলেও যেহেতু সমস্যা হবে না, তাহলে কয়েকটা দিন পরেই করেন।
না, উনার এক কথা, উনি চারদিনের মধ্যেই করাবেন এই অপারেশন। তিনি কোন ঝুঁকি নিতে চান না।

জাফর তখন আমতাআমতা করে বলেছিল, আর কয়েকটা দিন পরে করেন আম্মা। আমরা কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি।
শান্ত গলায় শ্বাশুড়ি জবাব দিলেন, তোমাদের বেড়ানো তোমরা যাবে। তোমাদের বেড়ানো তো আমি আটকাই নাই বাবা। যাও বউ মেয়ে নিয়ে বেড়ায়ে আসো। আমি অপারেশন করাবোই। তোমরা থাকতে পারবা না এই আরকি।

– কদিন পরে করলেও তো চলবে আম্মা। আমি এয়ার টিকেট, হোটেল বুকিং সব করে ফেলেছি।

শ্বাশুড়ির হিসিহিসে উত্তর শুনেছিল শাহানা, একবারই তো বলছি বাবা, আমি অপারেশন এখনই করাবো। এখন তোমরা থাকবা কী থাকবা না সেইটা তোমাদের বিবেচনা।

পড়ে যাবার ঠিক আগ মুহুর্তে শাহানা কিছু একটা আঁকড়ে ধরতে চাইল। হাত বাড়িয়ে বেডসাইড টেবিলটা খামচে ধরলোও। সাইড টেবিলে রাখা ভিসা টিকেটসহ পাসপোর্টটা কেবল হাত বাড়িয়ে ধরতে পারলো।

এরপরে তো আর বেড়াতে যাওয়া চলে না। অপারেশন হয়েছিলো পনেরো তারিখেই।
সেই কক্সবাজারও তারা গিয়েছিলো এই ঘটনার আরো দুবছর পর।
ততদিনে শ্বাশুড়ি নিজেই কক্সবাজার ঘুরে এসেছিলেন নিউইয়র্ক থেকে দেশে বেড়াতে আসা বড়মেয়ে আর তার নাতি-নাতনীদের সাথে নিয়ে।
যাবার আগে তিনি তাদের দুই জা’কে খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তার অবর্তমানে ঘরবাড়ি সংসার কীভাবে গুছিয়ে দেখাশোনা করে রাখবে তারা।

এরপর থেকে অবশ্য তারা বছরে এক আধবার ঘুরতে যায় দেশের নানা জায়গায়। কখনো দেবর ননদ ভাশুর জা নিয়ে তো কখনো শাহানার ভাইবোনকে নিয়ে গিয়েছে। সেগুলো সব পারিবারিক বেড়ানো। শুধু তারা দুজনে মিলে কোথাও যায়নি কখনো।

এরপর মেয়ে আরো বড় হয়ে উঠল। মেধার স্কুল কলেজ কোচিং এসবের চক্করে শাহানার প্রাণ জেরবার। তাদের একান্নবর্তী পরিবারও ভেঙ্গে তিন টুকরো হলো। ভাশুর আর জাফর আলাদা বাসা নিলো। শুধু দুজনে বেড়ানোর সুযোগটাও তখন থেকে আর রইলো না।

যৌথ বাড়ি ছেড়ে আসার কিছুদিন পর দেবর বিয়ে করলো। বিয়ের ঠিক তিনদিন পরেই বউ নিয়ে কাশ্মীর ঘুরতে চলে গেলো। দেবর তখন শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথেই থাকে।
ওরা কাশ্মীর থেকে আসলে শাহানা গিয়েছিল দেখা করতে। শ্বাশুড়ি গলায় মধু ঢেলে খুব মাখো-মাখো হয়ে দেবরের বউকে ডেকে বললেন, আইরিন তোমার ছোট ভাবিকে তোমাদের হানিমুনের ছবি দেখাও।
আইরিন, মানে সবার ছোট জা লজ্জালজ্জা মুখে মোবাইল ফোন থেকে বের করে দেখিয়েছিল সেসব ছবি।
কাশ্মীরের বরফঢাকা উপত্যকায় দুজনে জড়াজড়ি করে তোলা ছবি। ডাল লেকে নৌকায় ভাসমান হাস্যোজ্জ্বল যুগল, রাজ্যের ফুলের সাথে লাল টুকটুকে জ্যাকেট আর টুপি মাথায় আইরিনকে দেখে ওর মনে হয়েছিলো ক্লাশ নাইনে পড়ার সময় সিলসিলা ছবিতে অমিতাভ আর রেখাকে দেখে সেও ভেবেছিলো ও যাকে খুব ভালোবাসবে যার সাথে ওর বিয়ে হবে তাকে নিয়ে কাশ্মীরে ঘুরতে যাবে। যাকে সে বিয়ে করবে বিয়ের পর তাকে বলবে আমাদের হানিমুন হবে কাশ্মীরে।
ছবি দেখতে দেখতে শাহানার মনে হয়েছিল, তার স্বপ্নটা অন্য কারো জীবনে সত্যি হয়ে গেল। অথচ সে হয়তোবা এমন স্বপ্ন দেখেইনি।

এইতো মাত্র সাত আট বছর আগের ঘটনা তবু মনে হলে এখনো বুকে কেমন একটা জ্বালাপোড়া টের পায় শাহানা।
খুব লজ্জিত হয় এজন্য সে। সে কখনো কাউকে হিংসা করে না, করতে পারে না- এটাই জানতো। অথচ ওইদিন ছবিগুলো দেখে সে বুঝেছিল তার বুকেও আছে একটি হিংসার অগ্নিগিরি।
এসব কথা কাউকে বলেনি শাহানা।
জাফরকে শুধু বলেছিলো ওদের কাশ্মীরের ছবিগুলির কথা। কী সুন্দর জায়গা, কত ভালো ভালো ছবি তুলে এনেছে ওরা!
জাফর তার অভ্যাসমতো হু-হা করেছে।
শাহানা বিগত বছরগুলি ধরে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে ননদদের বিয়ের পর তারা কেউ থাইল্যান্ড তো কেউ সুইজারল্যান্ড হানিমুন করতে গেলো। তার নিজের ছোট ভাইটা তো কানাডাতেই থাকে। পড়তে গিয়ে ওখানেই চাকরি। দেশে এসে বিয়ে করে বউকে নিয়ে গেছে। বউ যাওয়ার পর তারা ইউরোপ ঘুরতে গেল। ছোট বোনটাও বিয়ের পর অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে। তারা খুব যেতে বলে শাহানাকে। শাহানা শুধু হাসে।
বাবা চলে গেছেন। মা আছেন বড় ভাই ভাবির সাথে। সেই মা ও গিয়ে ঘুরে এসেছে কানাডা আর অস্ট্রেলিয়া থেকে। জাফরও তো প্রায়ই অফিসের কাজে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর হংকং চায়না।
শুধু ওরই দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে কোথাও যাওয়া হলো না। সে শুধু বসে বসে সবার ছবি দেখে ফেসবুকে।

এতদিন এতবছর পর হঠাৎই সেদিন জাফর যখন বলল, শাহানা আমাদের পঁচিশতম এনিভার্সারি তো সামনেই। এবার চল শুধু দুজনে যাই, বালি ঘুরে আসি। এখন তো আর কোন চিন্তা নাই, টেনশন নাই। মেধাও চলে গেছে কানাডায় পড়তে। আমরা তো ঝাঁড়া হাতপা হয়ে গেলাম।
শাহানা বিস্ময়ে হতবাক হয়েছিল।
জাফর হতভম্ব শাহানার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো, আরে গুছানোর টাইম আছে হাতে।
আমি সব কাজ গুছিয়ে ফেলেছি। ছুটি নেয়া, এয়ার টিকিট রিসোর্ট বুকিং সব শেষ। দশদিনের জন্য যাচ্ছি আমরা। ব্যাগ প্যাক কর।

বেশ সময় নিয়েই সব গুছিয়েছে শাহানা। গতকাল রাতে জাফরের প্যাকিং করে দিয়েছে সে।

জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়ায় শাহানা। বাইরে নারকেল গাছটায় বসে একটা শালিক রাগী কর্কশ স্বরে ডাকছে গলার কাছের পালক ফুলিয়ে। পাশেই ঝগড়াটে ভঙ্গিতে গলা বাড়িয়ে বসে আছে আরেকটা শালিক। পাখিদুইটা কি স্বামী স্ত্রী?
পাখিরাও কি ওদের মতোই দাম্পত্য কলহ, মান অভিমান করে?

চোখ সরিয়ে আকাশে তাকায় শাহানা। অগ্রহায়ণের বেলা তাড়াতাড়ি পড়ে আসে। রোদ যাই যাই করছে। বাসার সবকিছুই গোছানো শেষ। বিকেলে ড্রাইভার গিয়ে কাজের লোকদের রেখে আসবে মায়ের কাছে। তেমনটাই ঠিক হয়েছে।

শাহানার এখন আর গোসল করতে ইচ্ছে করছে না। কেন জানি তার কোথাও যেতেই ইচ্ছে করছে না। অথচ আজ রাত এগারোটায় ফ্লাইট। জাফর বলেছে, সাতটাতেই বের হয়ে পড়তে হবে।

এতবছর পর যখন কারো পারমিশন ছাড়াই যাবার সময় হলো কোথাও, তখন এমন মনে হচ্ছে কেন শাহানার!
নাহ এসব তো প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। একদম না। জাফর এসে যদি দেখে সে এখনো গোসল করেনি, হাউকাউ বাধিয়ে দেবে নির্ঘাত।

শাহানা গ্রিল ছেড়ে ঘুরে দাঁড়াতে গেল, বুকের মধ্যে হঠাৎ চিনচিনে একটা ব্যাথা টের পেল। পাত্তা দিলো না একদম। এরকম কদিন ধরেই হচ্ছে। এসিডিটির সমস্যা হবে। দু পা এগোতেই হঠাৎই বুকের ব্যাথাটা যেন বেড়ে গেল, শরীরের মধ্যে, মাথার ভেতরে কেমন যেন করে উঠলো।
শাহানা টের পেল, তার সারা শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে। গলাটা শুকিয়ে কেমন কাঠকাঠ। জিভটাও অসাড় হয়ে গেছে।
পড়ে যাবার ঠিক আগ মুহুর্তে শাহানা কিছু একটা আঁকড়ে ধরতে চাইল। হাত বাড়িয়ে বেডসাইড টেবিলটা খামচে ধরলোও। সাইড টেবিলে রাখা ভিসা টিকেটসহ পাসপোর্টটা কেবল হাত বাড়িয়ে ধরতে পারলো।

দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ কাজের মেয়েটার কান্নাজড়ানো গলার ফোন পেয়ে জাফর যখন হন্তদন্ত হয়ে ঘরে এলো তখন বুকের কাছে মুঠো করে ধরা পাসপোর্টটা নিয়ে শাহানা শুয়ে আছে মেঝেতে।
তার ঠোঁটের কোনে লেগে আছে এক আশ্চর্য হাসি।

২৭ জুলাই ২০১৯

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.