বুইড়া খাটাশ
[ ‘মানলে তালগাছ, না মানলে বালগাছ’ ]
তারপর আবেদের বাপ কয়…
দেখেন ভাইসব হায়াত মউত আল্লার হাতে, আমি কোন্ বালও না! কিন্তু তাবেদার লাগে! তদবিরদার! আপ্নে যে বাঁচবেন বাঁচার জন্য একটা বাহন লাগে! যার কান্ধে সওয়ার হইয়া উড়বেন আপ্নে! এহন আপ্নে মানেন আর না মানেন, আমার কিন্তু বাল ছিঁড়া যায় না! মানলে তালগাছ, না মানলে বালগাছ! তা বইলা কি আমি চুপচাপ বইসা থাকতে পারি? না, পারি না! ইন্সান হিসাবে আমার যেমন দায়িত্ব আছে তেম্নে একজন চিকিৎসক হিসাবে আমার দায়িত্ব আরও বেশি! এখন প্রশ্ন করতে পারেন কেমুন চিকিৎসক আমি যে ফুটপাতে বইসা থাকি! এর উত্তরে আমি আবার সেই কথাই বলবো যে, লোকে বলে, মানলে তালগাছ না মানলে বালগাছ! এখন যেইটা বলতেছিলাম যে, ভাইসাবেরা এই যে মহামারী মহামারী চিৎকার দিয়া আপ্নেরা মোবাইলের মইদ্দে সাইন্দা আছেন! আর জান বাঁচাবার ফিকিরে পেরেশান হইয়া বিড়ি ফুক্তেছেন, কিন্তু কামের কাম হইতেছে চ্যাটটা! এর থিকা আমার কথা শুনেন কামে দিবো! এখন বলতে পারেন আমার কথা কি? তাইলে শুনেন, এই যে ডিশএন্টেনার সংবাদ দেইখা আপ্নেরা কর গুনেন দিন রাইত দ্যাশে বিদাশে কতজন মরল! অসুস্থ হইলো কতজন আর কোন কোন দ্যাশ ভাইরাসে খাবি খাইতেছে! এইসব দেখেন আর দিলে দিলে ইয়ানফ্সি ইয়ানফ্সি জপ করেন! এক দ্যাশে শুনলাম গরুর মুত খাইতেছে আরেক দেশে থানকুনি পাতা! মসজিদ মন্দির গির্জা ফাঁকা কইরা দিসে সরকার! তাতে আবার কোন দ্যাশের লোকেরা নাকি কয় মরলে ঈশ্বরের ঘরে গিয়াই মরবো! আরে শালার ব্যাটা তুই মরলে মর, কিন্তু অন্য লোকরে মারবি ক্যা? আর ঈশ্বরের ঘরে যদি মরবার এতোই বাঞ্ছা থাকে তাইলে ঈশ্বর কি তোর ঘরে আসবার পারে না? তোর ঘর কি ঈশ্বরের ঘর না? নাকি পাসপোর্ট ভিসা লাগে ঈশ্বরের?
যাইহোক বাজার ফাঁকা হইয়া গেছে! চাইল ডাইল মজুদ কইরা পয়সাওয়ালা সাবাই বইসা আছে নিজে বাঁচবো বইলা! ভাইসব, মহামারিতে যদি পুরা দেশ ফাঁকা হইয়া যায় তখন কি আপ্নে বাবা আদমের মতন একলা বাঁইচা থাকবেন? নতুন মানবজাতির পিতা হবার লোভে কি এই মাল মজুদ? অসুখটা কারা ছাড়ছে আর কারা এর ওষুধের ব্যবসাডা করবে এইসব বালের তথ্য মাথায় নিয়া তর্ক বিতর্ক কইরা চ্যাটের লাভ কি? আপ্নে গরিব আপ্নে আসবেন আমার কাছে! এম্নে তো মরবেনই, তার উপ্রে খাবার মজুদের সামর্থ্য নাই; তার উপ্রে কাজ না করলে না খাইয়া থাকা লাগবো! তাইলে আসেন এইবার এইখানে আমার দরবারে! গরীবের বন্ধু আমি আবেদের বাপ, স্বপ্নে পাওয়া ওষুদের কারবার করি না! আমি জাইগা জাইগাই ওষুধ পাই! মুত বা কচুঘেঁচু না আমি আসল মাল খাওয়াবো আপ্নাগরে! এই দেখেন, কি দেখেন কন দিহি? বোবা নিকি? আপ্নেগো বালের চক্ষে কি ছানি নাকি সানগ্লাস? কথা কন না ক্যা? বিশ্বাস হয় না? অবশ্য বিশ্বাস করবেন কেম্নে? এমন এক কালে আইসা খারাইছেন যেইখানে কেউ কাউরে বিশ্বাস করে না! বিশ্বাস করলেও খরচ না করলেও খরচ! তাইলে পয়সাডা কার পকেটে যায়? কোম্পানিটা আসলে কেডা? না পারলে আল্লা মালুম, পারলে কম্যুনিস্ট! হে হে! বুঝে আসে নাকি আসে না? ওষুধ বিক্কির করে যে আর ওষুধ কেনে যে তাগর মধ্যে আরেকজনা কে? নানান ফিকিরের পর আসল কামডা যে করে তার খবর নাই!
ইন্সান হিসাবে আমার যেমন দায়িত্ব আছে তেম্নে একজন চিকিৎসক হিসাবে আমার দায়িত্ব আরও বেশি! এখন প্রশ্ন করতে পারেন কেমুন চিকিৎসক আমি যে ফুটপাতে বইসা থাকি! এর উত্তরে আমি আবার সেই কথাই বলবো যে, লোকে বলে, মানলে তালগাছ না মানলে বালগাছ! এখন যেইটা বলতেছিলাম যে, ভাইসাবেরা এই যে মহামারী মহামারী চিৎকার দিয়া আপ্নেরা মোবাইলের মইদ্দে সাইন্দা আছেন! আর জান বাঁচাবার ফিকিরে পেরেশান হইয়া বিড়ি ফুক্তেছেন, কিন্তু কামের কাম হইতেছে চ্যাটটা!
আসলে মানুষ কি মানুষের পাশে আছে? আমার ওস্তাদে কইত মানুষ মানষের পাশের আছে আবার পাছেও আছে! পাছে মানে পিছনে, মানে পাছায়! মানে পোঙ্গায় লাইগা আছে! হে হে! মারী মড়ক আসবো আর ব্যবসা হইবো না তা কি হয়? বাজারের হারামজাদা গুলানরে দেখেন গুদাম ভইরা মাল আটকায় দাম বাড়ায় রাখছে আর বড়লোক বেশি দামে নিজেরে বাঁচাইতে মাল কিনবার লাগছে আর গরিব হা কইরা চাইয়া চাইয়া দেখে! যাইহোক এতো বালছাল আমি কেন কই, আপ্নেরা সব জানেন আর বোবা হইয়া থাকেন! জানি দুর্যোগ ঘন হইলে লুট করবেন! উপায় নাই লুটেরার মাল লুট করলে! পুলিশ আটকাইলে পুলিশরেও লুট কইরা দিবেন, হে হে! হাসবেন না! আমার ওষুদ খান ভাইরাসের থিকা বাঁচেন! এই ওষুদ খাইলে মরবেন না তয় বাঁচবেন নির্ঘাত যদি আয়ু থাকে! এখন প্রশ্ন গ্যারান্টি কি? জীবন তো টিভি ফিরিজ না যে গ্যারান্টি পাইবেন! তয় একটা গ্যারান্টি দিতে পারি, আমার ওষুদ খাইয়া কেউ মরবেন না! এখন যদি জিজ্ঞাস করেন ফর্মুলা কি আমার ওষুদের তাইলে আমি সেইটা বলবো না! গুপ্তবিদ্যা সকলের জন্য না। তয় এইটাও বলি এতো সস্তায় জীবন বাঁচাবার ওষুদ কোন কোম্পানি দিবো না! এই ওষুধ সেবনের আছে কিছু নিয়ম! না মানলে আমার ওষুধ খাইয়া কাম নাই! এই ওষুদ খাইলে ঝিমঝিম হইতে পারে! তাতে সমস্যা নাই কারণ এই ওষুধ ১৫ দিনের ওষুধ; এই ওষুধ নিলে ১৫ দিন ঘর থিকা বাইরে যাইতে পারবেন না! মানলে ভালো না মানলে আমার ওষুদ খাওয়ার কাম নাই! স্বপ্নে আমি এই ওষুদ পাই নাই পাইছি বুদ্দিজ্ঞান দিয়া! এখন নিলে নিতে পারেন না নিলে নাই! আছেন কেউ যে আমার ওষুদ নিবেন?
সেদিন জমজমাট মজমার মধ্যে আচানক পুলিশ হাজির হয়, আবেদের বাপকে হাতেনাতে পেয়ে যায় পুলিশ। চলমান মহামারী সময়ে, মারন ভাইরাসের ওষুধ আবিষ্কার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপরাধে চিহ্নিত সে! আবেদের বাপ পুলিশকে বলে, স্যার আমারে খালি খালি ধইরা লাভ কি! মাবুদের কিরা আমার ওষুধে ঝামেলার কিচ্ছু নাই! আমি জানি এই ওষুধ আবিষ্কার আমার কাম না! আটার গুলির মইদ্দে আমি সামান্য ঘুমের ওষুধ মিসায় দিছি যাতে লোকজনেরা বাসায় বইসা ঝিমায়! এই ব্যাধির জন্য ১৪ দিন এক ঘইরা থাকবার ফরমান দিছেন আপ্নেরা! আমি ১ দিন বেশি দিয়া ১৫ দিনের ঘরবন্দি ফর্মুলা দিছি যাতে কেউ বাইরে না আসে, অসুখ না ছড়ায়! বিশ্বাস না হইলে আমার ওষুধ পরীক্ষা কইরা দেখেন! পুলিশ মজা পায়! তাদের একজন বলে, সারা দুনিয়ার বিজ্ঞানীগো মাথায় মাল উইঠা গেছে এই ভাইরাসের ওষুধ আবিষ্কারে আর তুমি কোনজায়গার কোন বালের বাল যে ওষুধ আবিষ্কার কইরা বিক্রি শুরু কইরা দিস! আবেদের বাপ কয়, স্যার আমি তো একটা বাল সেই বিষয়ে সন্দেহ নাই কিন্তু স্যার হেরা নামছে বিজ্ঞান নিয়া আমি নামছি ভালোবাসা নিয়া! আমি লোকজনরে ঘরে আটকাবার ফর্মুলা নিয়া নামছি! পুলিশদের একজন বলে, সব যায়গায় ভালোবাসা দেয়া যায় না বাজান! এখন চলো হাজতে! আবেদের বাপ বলে, দোষ দিলে দোষী তয় আমি কিন্তু…! অন্য পুলিশ বলে, এই চুপ, পেচাপেচি বন্ধ! তোমার ক্যানভাসের জন্য গণ জমায়েত হইতেছে মোড়ে মোড়ে! ফেসবুকে তোমার ছবি-ভিডিও ভাইরাল, আর উপর থিকা হুমকি ধামকিতে তোমারে খুঁজতে খুঁজতে আমাগোর মাথায় মাল! জমায়েত নিষিদ্ধ করা হইসে সেই সময় এই কাম করতেছ! আবেদের বাপ মাথা নেড়ে বলে, তাইলে নিয়া যান আমারে! ভাবছিলাম লোকজনেরা তো কথা শুনে না তাই আমার ওষুধ দিয়া তাগরে ঘরবন্দি করবো মাঝখানে আমার পেটটাও চলবে; তয় হাজতে গেলে একটা সুবিধা আছে খানাখাদ্দ্যের পেরেশান নাই!
পুলিশেরা ভ্যানে উঠতে থাকে! আবেদের বাপ এগিয়ে এসে পুলিশদের মাহুতের পাশে দাঁড়িয়ে বলে, স্যার এট্টা কথা কই? আমার ভাইরাসের ওষুধে কইলাম ভালো ঘুম হয়! এক ফাইল নিতে পারেন! আপ্নাগর তো হেভি ডিউটি এখন, বাড়ি ফিরা ঘুম না আসলে খায়া দেখতে পারেন! তয় শর্ত একটাই ১৫ দিন ঘরবন্দি থাকতে হবে! বেকুব আর পুলিশ ছাড়া দেশটা দেখতে কেমুন লাগে সেইটা দেখবার একটু বাঞ্ছা হয় আমার!
পুলিশদের মাহুত বলে, তুমি মিয়া হেভি হারামি! বুড়া হইস কিন্তু হাড্ডিতে বজ্জাৎপনা! ঐ চল, তারে ছাড়! এর থিকা এই দুর্যোগের দিনে বাজারের মজুদ্দার ধরা লাভের! পুলিশদের একজন বলে, স্যার এরে ধরতে তো নির্দেশ আছে! মাহুত বলে, জিগাইলে জানায় দিবা ভাইরাস তারে খায়া গেছে! পুলিশেরা ভ্যানে উঠতে থাকে! আবেদের বাপ এগিয়ে এসে পুলিশদের মাহুতের পাশে দাঁড়িয়ে বলে, স্যর এট্টা কথা কই? আমার ভাইরাসের ওষুধে কইলাম ভালো ঘুম হয়! এক ফাইল নিতে পারেন! আপ্নাগর তো হেভি ডিউটি এখন, বাড়ি ফিরা ঘুম না আসলে খায়া দেখতে পারেন! তয় শর্ত একটাই ১৫ দিন ঘরবন্দি থাকতে হবে! বেকুব আর পুলিশ ছাড়া দেশটা দেখতে কেমুন লাগে সেইটা দেখবার একটু বাঞ্ছা হয় আমার! একজন পুলিশ বলে, স্যর শুনছেন বুইড়া বজ্জাৎটা কি কয়? বন্দুকের কুঁদা দিয়া দিবো নাকি ঘেটিতে এট্টা? মাহুত চিবিয়ে বলে ওঠে, কাকা আপ্নে তো আমার তাওই না বিয়াইও না, থাপ্পড় একটা দিবো দাঁত গুলা ভুনভুনির মতো ছুঁইটা যাবে! অন্য পুলিশেরা আশকারা পেয়ে বলে ওঠে, স্যর তুইলা নি এরে? মাহুত পুলিশটা বলে, নাহ! আপাতত থাক। এর মাথাডায় ভাইরাস লাগছে!
ফলে আবেদের বাপ টের পায় তার হিজরতের সময় এসে গেছে! মনটা তার অস্থির হয়ে যায়! সামনের দিনগুলোয় নাকি কারফিউ জারি হবে, তখন না খেয়ে মরার উপক্রম হবে তার। এম্নিতেই বাজারে লোকজন কমে গেছে! তার অন্য ওষুধের বিক্রি নাই! বাজার ধরতে গত কয়দিন চিন্তাভাবনা করে মহামারীর এই ওষুধটা সে বের করেছে! ওষুধ বিক্রির জন্য বেঁধেছে নতুন বয়ান! মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সে হিট খেয়ে গেছে! এক ফাজিল ছেলে তার ক্যানভাস ভিডিও করে ছেড়ে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে! ট্রলের খাতিরে ভাইরাল হয়ে পুলিশের নজরে চলে এসেছে সে! আবেদের বাপ অবশ্য এইসব জানে না! ফলে সে তার পাত্তাড়ি গোটায়! এতক্ষণ জমায়েতে থাকা লোকেরা পুলিশ দেখে উধাও হয়ে গিয়েছিলো! দুঃসময়ে কেউ পুলিশি ঝামেলায় জড়াবে না! কোথাও কাউকে না দেখে আবেদের বাপ হাঁটা ধরে!
এর দুইদিন পর অন্য এক বাজারে পুলিশের পিকাপ থামে! একজন পুলিশ নেমেই বলে ওঠে, বজ্জাৎ বুইড়াটা এইখানে ঘাঁটি গাড়ছে স্যার! মাহুত পুলিশটা এসে বলে, কি বিষয়? তুমি যাও নাই? আবেদের বাপ বলে, স্যার আপ্নে তো দেহি আজরাইলের মতন! যেহানেই যাই না ক্যান পিছনে আছেন! একজন অতি উৎসাহী পুলিশ হঠাৎ এগিয়ে এসে একটা থাপ্পড় দিয়ে ফেলে দেয় আবেদের বাপকে! কয়েক সেকেণ্ড পর মাটি থেকে মাথা তুলে আবেদের বাপ এক দলা রক্তমাখা থুতু ফেলে বলে, নাহ! দাঁত ফেলতে পারেন নাই পুলিশ সাব! মাহুত পুলিশটার দিকে তাকিয়ে আবেদের বাপ বলে, বাজারে লোকজন নাই ভাইরাসের ভয়ে! কিন্তু আমরা খাবো কি? টেকা দিবেন? নাইলে মহামারীর ভাইরাস দেন, খাইয়া মইরা যাই! পুলিশ দলটার মাহুত বলে, আপ্নে এইখান থিকা বিদায় নেন! আর যেন নজরে না দেখি! আমাদের ডিউটির মধ্যে ঘেন্টি পাকাবেন না! আবেদের বাপ আরেকদলা থুতু ফেলতে ফেলতে বলে, ভাইরাসের ভয়ে আপ্নাগো মাথার ঠিক নাই! ভাইরাস কিন্তু পুলিশের ভয় খায় না, ভাইরাসের প্যাটে অনেক খিদা!
২০ মার্চ ২০২০