:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মোহাম্মদ আলী হায়দার

নির্দেশক

থিয়েটারে আঙ্গিক অভিনয় কি অপরিহার্য?
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

থিয়েটারে আঙ্গিক অভিনয় কি অপরিহার্য?

মূকাভিনয় খুব প্রাচীন এক ভাব প্রকাশের মাধ্যম। যে যুগে মানুষ পশু শিকার করত, সেই সময়ের মানুষের ভাষা ছিল না। মানুষ কোন পশু শিকার এ যাবার আগের প্রস্তুতি বা মহড়ার সময় নানা অঙ্গভঙ্গিমার দ্বারা প্রকাশ করত, সেই অর্থে আঙ্গিক অভিনয়ের শিক্ষায় আমরা প্রায়ই আদিম মানুষের এই ‘পশু শিকার’ ব্যাবহার করে থাকি। মুখে ভাষা নেই, কিন্তু ভাবটি প্রকাশ পায় সহজেই। তাই আমরা একে বলতে পারি সার্বজনীন ভাষা, যা পৃথিবীর সকল মানুষ বোঝে। সে অর্থে মূকাভিনয় হচ্ছে পৃথিবীর সকল মানুষের বোধগম্য একটি শিল্প, যা সব সময়ই নতুন ও নিজেদের।

সূত্রমতে, ভারতবর্ষে মূকাভিনয়ের প্রচলন খ্রিষ্টপূর্ব আনুমানিক ১৫০০-৭০০ বছর পূর্বে থেকে। ভারতীয় নৃত্য ‘কথাকলি’ ‘ভরতনাট্যম’ এ মূকাভিনয়ের যথেষ্ট যোগাযোগ দৃশ্যমান। কথাকলি মুলত একধরনের ভাবব্যঞ্জক মূকাভিনয় সহযোগে দৃশ্যকাব্য। এটি আমাদের নিজস্ব, বিদেশ থেকে ধার করা নয়। পাশাপাশি ভরতনাট্যম মার্গনৃত্যধারার শ্রেষ্ঠতম অভিব্যক্তি। এই ধারার আঙ্গিকনৃত্যেও মূকাভিনয়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান। আর বাংলা নাটকের মুল প্রাণই কিন্তু আঙ্গিক ও অভিনয়ের বর্ণনাধর্মীতা। আমাদের বর্ণনা চলে শরীরের সহজ সুন্দর ভঙ্গিমায়। পশ্চিমের অভিনয় কৌশলের মত স্থির দাড়িয়ে সংলাপের খেলা আমাদের মঞ্চে বেশ ধাক্কাই খায়। আমাদের দর্শক মনের গীতলভাবে পশ্চিমের সংলাপ প্রক্ষেপণ ধারা অন্তরে প্রবেশ করে না, তা বাইরেই থেকে যায়। সে অর্থে শরীর ও মনকে এক করে সংলাপের বা বর্ণনার সাথে সাথে শরীরের যে দ্যোতনা তাই আমাদেরকে সজীব রাখে কোন মঞ্চদৃশ্য দর্শনে।

মুখে ভাষা নেই, কিন্তু ভাবটি প্রকাশ পায় সহজেই। তাই আমরা একে বলতে পারি সার্বজনীন ভাষা, যা পৃথিবীর সকল মানুষ বোঝে। সে অর্থে মূকাভিনয় হচ্ছে পৃথিবীর সকল মানুষের বোধগম্য একটি শিল্প, যা সব সময়ই নতুন ও নিজেদের।

কাজেই আমাদের নিজেদের থিয়েটার নির্মাণেও আঙ্গিক অভিনয়ের প্রাধান্য থাকে। মূকাভিনয়ের যে ছন্দবদ্ধ শরীর চালনা, সেটা আমরা থিয়েটারে সেভাবে ব্যবহার না করলেও, এর মুল নির্যাস থেকে আহরিত শারীরিক অনুরণন আমরা ব্যবহার করি। যদিও আঙ্গিকের অতি ব্যাবহার অনেক সময় দৃশ্যকাব্যের দৃষ্টিনন্দনের ব্যাঘাত ঘটায়। আঙ্গিক অভিনয় হতে হবে পরিশীলিত, মার্জিত, যথাযথ।

বাংলাদেশের পালা সম্পূর্ণই আঙ্গিক, গীত ও বর্ণনা আশ্রিত। পালায় শরীর, মন একাকার হয়ে যায় পালাকারের ও পালা দর্শকের। এটা কি শুধু এই জলকাদায় গড়ে উঠা মানুষেরই হয় তা অজ্ঞাত। তবে নির্দেশক হিসেবে আমি নিজে যতটা আঙ্গিক নির্ভর দৃশ্যকল্প নির্মাণ করি, অভিনেতা হিসেবে সেটা অনেক সময় করতে চাই না। এই দ্বন্দ্ব আসলে মনের নয়, অক্ষমতার। আমার মতে আঙ্গিক অভিনয়ের অতি ও অযাচিত ব্যবহার কখনই অসাধারণ দৃশ্যকাব্য নির্মাণ করতে পারে না, এর লাগাম টেনে ধরতে হবে নির্দেশককে ও কুশীলবকে। তবেই হবে উন্নত সৃজন যজ্ঞ।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.