:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মোহাম্মদ আলী হায়দার

নির্দেশক

ফাগুন হাওয়ায় : আমাদের গর্বিত ইতিহাসের সিনেমা
প্রচ্ছদ: 'ফাগুন হাওয়ায়' পোস্টার অবলম্বনে

ফাগুন হাওয়ায় : আমাদের গর্বিত ইতিহাসের সিনেমা

সিনেমার পরিচালক তৌকির আহমেদ নিজেকে নিজে অতিক্রম করে চলেছেন দিনকে দিন। ছবি নির্মাণের এই ধারাবাহিকতা এবং ভাল ছবি নির্মাণের এই যাত্রা বাংলাদেশে খুব কম দেখা যায়। “ফাগুন হাওয়ায়” সিনেমায় পরিচালক দেখিয়েছেন ৫২ সালের বাংলাদেশ, দেশের ভাষা সংস্কৃতি, উদযাপন আয়োজন সব। পিরিয়ড ফিল্ম আমাদের দেশে নির্মাণ এখন দুস্কর, বাজেটের কারণে, কুশিলব-টেকনিক্যাল- পারিপার্শ্বিক প্রস্তুতির অভাবের কারণে। কিন্তু “ফাগুন হাওয়ায়” তার ব্যতিক্রম। আমাদের চোখের সামনে মূর্ত হয় ৫২ সালের বাংলাদেশ যে বাংলাদেশ আমাদের স্বপ্নের, ভালবাসার, উদ্দীপনার, উন্মাদনার। বর্তমান বাংলাদেশকে কিভাবে সেই সময়ে নিয়ে গেলেন পরিচালক, সেটা আমার কাছে এক বিস্ময়। তৌকির আহমেদ আরও চোখ খুলে দিয়েছেন আমাদের, যে একটি ছোট গল্প কিভাবে ফিল্মের বর্তমান প্লট সঙ্কটের কালে সহায়ক হবে নতুন চিত্রনাট্য নির্মাণে। আমাদের এই ছোট গল্পের সম্ভার মনে হয় আমরা ব্যাবহার শুরু করতে পারি ফিল্মে অনেক বেশি। যদিও গল্পটি ৫২ সালের কিন্তু সিনেমাটি দেখার সময় বার বার মনে হয়েছে, কি মিল, কি মিল বর্তমান বাস্তবতায় রাজনীতি-সমাজনীতির সাথে।

“ফাগুন হাওয়ায়” সিনেমাটিকে এক কথায় বলতে পারি আমাদের গর্বের ছবি। আমাদের ভাষা আন্দোলন নিয়ে এত ঝরঝরে ছবি কোনদিন হবে আমি কল্পনাও করিনি। আমাদের বাংলাদেশ কি অপরূপ ছিল সেই কালে। আমাদের নদী, গ্রাম, মানুষজন, আমাদের দৈনন্দিন যাপন- কি এক মায়ায় আমাদের ডুবিয়ে দিল “ফাগুন হাওয়ায়”।

চমৎকার এক হিস্টোরিকাল রিপ্রেজেন্টেশন বা রিএনেক্টমেণ্ট। এই সিনেমার নির্দেশক থিয়েটারের একজন সজ্জন অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক- ডিজাইনার বলেই মনে হয় এই রকম হিস্টোরিকাল রিপ্রেজেন্টেশন বা রিএনেক্টমেণ্ট করা সম্ভব হয়েছে। কারণ থিয়েটারই সবসময় সময়ের কথা বলে, দূরবর্তী জীবনের কথা বলে, প্রতিবাদের ভাষা চালু থাকে সেখানে সবস্তরে। এই সিনেমাটির সব কিছু দারুণ চমৎকার- চিত্রনাট্য, সংলাপ, অভিনয়, চরিত্র নির্মাণ, শিল্প নির্দেশন, সেট, পোশাক, ফটোগ্রাফি, লেন্সিং, মিউজিক, লাইট, সব। 

আমাদের একজন সিয়াম এর মত অভিনেতা আছে ফিল্মে, এটা ভাবতেই আমার খুব ভাল লাগছে। সিয়াম এই সময়ের তরুণদের মাঝে নিঃসন্দেহে সেরা। কি দারুণ চরিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। বাহ। স্যালুট। অনেক চেনাজানা অভিনেতারা কি সুন্দর চরিত্র নির্মাণ করেছেন, তাতে আমরা মুগ্ধ। যদিও কয়েকটি প্রধান চরিত্রের আরও হোম ওয়ার্ক দাবী রাখে। তিশা আগের ছবি “হালদাা”য় যতটা উজ্জ্বল ছিলেন, এই সিনেমায় ততটাই ম্রিয়মাণ। ভাষা, অভিব্যক্তি প্রকাশে কেমন যেন বর্তমান সময়কে অতিক্রম করতে পারেন নি। ফিরে যেতে পারেননি, ১৯৫২ সালে ঢাকা মেডিকেল এ পড়া তৃতীয় বর্ষের একজন ছাত্রীতে।

‘ফাগুন হাওয়ায়’ ছবির একটি দৃশ্য।

ফজলুর রহমান বাবু সব সময়ের মত আমাদের হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন, ভাবিয়েছেন, ভাসিয়েছেন। তাঁর মেয়ের চরিত্রের নবাগত কথা না বলে কত কিছু বললেন। এই অভিনেত্রীকে আরও সিনেমায় দেখতে চাই। অভিনেতা রওনকও ম্লান ছিলেন সময়টাকে ধরতে, এই সুভিনেতার কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সাজু খাদেমকে আমরা ভিন্নরূপে দেখলাম এই ছবিতে। সেতু, পঙ্কজ, নয়ন সহ পুলিশদল ও বন্ধুদল অনেক ভাল মনোযোগ দিয়েছে তাঁদের চরিত্রে এবং সবাই সময়টাকে ধরেছে বেশ তাঁদের চলন-বলন-অভিব্যক্তিতে। আবুল হায়াত, শহীদুল আলম সাচ্চু, ফারুক আহমেদ ও নিয়াজ তারিখ তাঁদের চরিত্র নির্মাণে শতভাগ সফল, এঁদের ছাড়া এই চরিত্রগুলো কোনভাবেই মানাত না, এটা আমার মত। তবে যশরাজ পাল এর অভিনয় আমাদের অনেকদিন মনে থাকবে।

“ফাগুন হাওয়ায়” সিনেমাটিকে এক কথায় বলতে পারি আমাদের গর্বের ছবি। আমাদের ভাষা আন্দোলন নিয়ে এত ঝরঝরে ছবি কোনদিন হবে আমি কল্পনাও করিনি। আমাদের বাংলাদেশ কি অপরূপ ছিল সেই কালে। আমাদের নদী, গ্রাম, মানুষজন, আমাদের দৈনন্দিন যাপন- কি এক মায়ায় আমাদের ডুবিয়ে দিল “ফাগুন হাওয়ায়”।

সবার অবশ্য দেখা কর্তব্য “ফাগুন হাওয়ায়”। সবাই হলে গিয়ে ছবিটি দেখুন। অনেক অনেক ভাল লাগবে, আমি শতভাগ নিশ্চিত। তৌকির আহমেদসহ এই ছবির সবাইকে টুপি খোলা অভিনন্দন।

 

পড়ুন- টিটো রহমানের গল্প: ‘বউ কথা কও’

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.