:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
তানভীর মোকাম্মেল

চলচ্চিত্রকার

বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমা আন্দোলন : জমা, খরচ ও ইজা
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

পর্ব : ১

বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমা আন্দোলন : জমা, খরচ ও ইজা

ভালো ছবি এ দেশে আগেও হয়েছে— ‘নদী ও নারী’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’। কিন্তু কোনো দেশে কয়েকটা ভালো ছবি তৈরি হলেই সেটাকে ঠিক আন্দোলন বলা যায় না। আন্দোলনের অভিধা তখনই দেওয়া যেতে পারে যখন ছবিগুলোর মাঝে কোনো একটা বিশেষ ধারা, একটা দৃষ্টিভঙ্গি, সাংগঠনিক নেতৃত্ব এবং কিছু সচেতন ও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশে তেমনটি তখনই ঘটল যখন আশির দশকে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের কিছু তরুণ কর্মী ১৬ মিমিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শনের একটা সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উপস্থিত হলেন। এসব ছবির বিষয়বস্তু থেকে নির্মাণ পদ্ধতি, মায় প্রদর্শন ব্যবস্থা, সব কিছুই ছিল—বিকল্প। ছবিগুলোর বিষয়বস্তুগুলো ছিল একেবারেই নতুন—গরুর গাড়িতে করে একটা মৃতদেহ নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘোরা হচ্ছে মৃতদেহটিকে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে— ‘চাকা’, কিংবা পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ববঙ্গের একটা মফস্বল শহরে একটা হিন্দু পরিবারের জীবনে কী বিপর্যয় নেমে এল— ‘চিত্রা নদীর পারে’। মূলধারার চলচ্চিত্র এ ধরনের বিষয় নিয়ে ছবি তৈরির কথা কখনোই ভাবত না। আর এফডিসির প্রচলিত ৩৫ মিমির বাইরে যেয়ে ১৬ মিমিতে এসব কাহিনিছবির নির্মাণ ছিল একেবারেই অভিনব এক ঘটনা। এসব ছবির প্রদর্শনও ঘটেছে বিকল্পভাবে। সিনেমা হলের বাইরে ভাড়া করা মিলনায়তনে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে বা ক্লাসরুমে, এমনকি গ্রামের খোলা মাঠেও। সব বিচারেই এসব সিনেমা ছিল—বিকল্প সিনেমা। বিকল্পভাবে ছবি নির্মাণের একক ভালো প্রচেষ্টা এ দেশে অতীতেও ঘটেছে। যেমন মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে জহির রায়হানের অসামান্য প্রামাণ্যচিত্র— ‘স্টপ জেনোসাইড’। কিন্তু ছবি তৈরির অর্থায়ন থেকে শুরু করে বিকল্পভাবে সেসব ছবি প্রদর্শনের সচেতন উদ্যোগ, এই যে সমগ্র প্রক্রিয়াটাই বিকল্প, সেটা ওই ‘আগামী’-‘হুলিয়া’ এ দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি থেকেই শুরু।

এ ধারার কয়েকটা সুস্পষ্ট উপাদান ছিল। প্রথমত, ৩৫ মি.মি.তে ছবি না করে ১৬ মি.মি.তে বা বর্তমানে ডিজিটালে ছবি তৈরি করা; দ্বিতীয়ত, প্রথাগত বাণিজ্যিক দুই-আড়াই ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের বদলে স্বল্পদৈর্ঘ্যের বা নানা রকম মুক্তদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করা; বাণিজ্যিক তারকাদের না নেওয়া; পেশাদার প্রযোজকদের কাছে না যেয়ে নানাভাবে ছবির অর্থায়ন করা এবং সিনেমা হলের বাইরে বিকল্পভাবে ছবির প্রদর্শন। বিকল্পধারার অধিকাংশ ছবিই এসব উপাদানের অনেকগুলো বা কয়েকটি উপাদানকে, ধারণ করেই নির্মিত হয়েছে।

কেউ কেউ আমাদের এই ধারাকে ইনডিপেনডেন্ট ধারার ছবি এবং আমাদের ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকার বলতে পছন্দ করেন। তবে পৃথিবীর দেশে দেশে ‘ইন্ডিজ’ বা ইনডিপেনডেন্ট ছবির যে একটি ধারা আছে, বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমার সঙ্গে তার কিছু পার্থক্য আছে। অন্যান্য দেশে ইনডিপেনডেন্ট চলচ্চিত্রনির্মাতারা স্বাধীনভাবে তাদের ছবি তৈরি করেন বটে কিন্তু প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আবার প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক সার্কিটেরই দ্বারস্থ হন। কিন্তু বাংলাদেশের বিকল্পধারার নির্মাতারা ছবি তৈরি থেকে ছবিগুলো প্রদর্শনের আয়োজন, এই সব কাজ নিজেরাই করে থাকেন। ফলে কারো দ্বারস্থ হবার প্রয়োজন পড়ে না। না টাকাওয়ালা প্রযোজকের, না বাণিজ্যিক প্রদর্শকদের।

ব্যয়বহুল প্রযুক্তি, যা ছবিকে দৃষ্টিনন্দন করে থাকে, তা আমরা তেমন ব্যবহার করতে পারি না। মনে আছে, আমার ‘হুলিয়া’ ছবিটা তৈরি হয়েছিল একটা প্রায় ভাঙা ১৬ মি.মি. বোলেক্স ক্যামেরা দিয়ে, যা ছিল প্রায় একটা Crank -ই। লেন্সগুলো তো ঝাপসা ছিলই। ক্যামেরাটার ট্যাকোমিটারটাও ছিল নষ্ট। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল দশ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের বেশি কোনো শট নেওয়া যেত না। দশ সেকেন্ডের বেশি শট নিলে শটের লয় যেত কমে।

‘পপুলার সিনেমা’ একটা আলাদা ঘরানাই, আলাদা Genre—হলিউড-বলিউড-টালিউড-ঢালিউড। ‘পপুলার সিনেমা’র রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু, নিজস্ব তারকাপ্রথা, নিজস্ব নাটকীয় চলচ্চিত্র ভাষা, ছবি প্রদর্শনের নিজস্ব তরিকা ও ব্যাপক আম-দর্শক। সে অর্থে বিকল্প সিনেমা কোনো দিন ‘পপুলার সিনেমা’ হবে না। বড়জোর জনপ্রিয় হতে পারে। তবে সে জনপ্রিয়তাও হবে সমাজের একটা সীমিত অংশের মধ্যে, যারা চেতনায় অগ্রগামী। দর্শকসংখ্যা তাই আমাদের ছবিগুলোতে কমই রইবে। কারণ, সব সমাজেই চেতনায় অগ্রসর মানুষদের সংখ্যা কমই থাকে।

ব্যয়বহুল প্রযুক্তি, যা ছবিকে দৃষ্টিনন্দন করে থাকে, তা আমরা তেমন ব্যবহার করতে পারি না। মনে আছে, আমার ‘হুলিয়া’ ছবিটা তৈরি হয়েছিল একটা প্রায় ভাঙা ১৬ মি.মি. বোলেক্স ক্যামেরা দিয়ে, যা ছিল প্রায় একটা Crank -ই। লেন্সগুলো তো ঝাপসা ছিলই। ক্যামেরাটার ট্যাকোমিটারটাও ছিল নষ্ট। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল দশ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের বেশি কোনো শট নেওয়া যেত না। দশ সেকেন্ডের বেশি শট নিলে শটের লয় যেত কমে। ‘হুলিয়া’ ছবিটার শট ডিভিশন তাই এমনভাবে করা হয়েছিল যেন দশ সেকেন্ডের ওপর কোনো শট আমাদের নিতে না হয়। ঢাকায় তখন ১৬ মি.মি. ছবি কাটা ও জোড়া লাগানোর জন্য ভালো একটা স্প্লাইসারও পাওয়া যেত না। আমাকে ইউরোপ থেকে একটা স্প্লাইসার নিয়ে আসতে হয়েছিল। আমার এক বন্ধু বিনে পয়সায় সেটা আমাকে দিয়েছিলেন। আমাদের অবস্থা ছিল অনেকটা ওই দুঃখিনী বেহুলার মতোই;

‘ধোপানী কাপড় কাচে ক্ষারে আর নীরে
বেহুলা কাপড় কাচে শুধু গঙ্গাজলে।’

তবে আমরা সব সময়ই বিশ্বাস করে এসেছি যে রূপে তোমায় ভোলাব না। আমাদের ভালোবাসা, শ্রম আর আন্তরিকতা দিয়ে জয় করব বাধাগুলো, প্রযুক্তির চটক দিয়ে নয়। এ দেশে যেটুকু প্রযুক্তি পাওয়া যেত, বিকল্পধারার নির্মাতাদের তার সৃজনশীল ব্যবহার করেই চলচ্চিত্র তৈরি করতে হয়েছে। এখন অবশ্য অনেক সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। ডিজিটাল নানা রকম সফটওয়্যারের কল্যাণে সিনেমার পর্দায় আজ প্রায় সবকিছুই সৃষ্টি করা সম্ভব। কিন্তু শিল্প সৃষ্টির প্রশ্নে যদি কেবল সফটওয়্যারগুলোর ওপরই আমাদেরকে নির্ভর করতে হয়, তাহলে আপনার সৃষ্টির কৃতিত্বটা কই? সব কৃতিত্ব তো ওই সফটওয়্যার আবিষ্কারকের ওপরই বর্তাবে! একজন চলচ্চিত্রকারের নিজের সৃজনশীলতা তাহলে আর রইল কোথায়?

‘লালসালু’ ছবির একটি দৃশ্য।

অর্থ তো আমাদের কোনোকালেই ছিল না। বিকল্প ছবি তাই সব সময়ই ছিল এবং এখনো, স্বল্প বাজেটের ছবি। যতটুকু অর্থ না হলেই নয়। আমাদের ছবি তাই পুঁজিঘন (Capital intensive) নয়, শ্রমঘন (Labour intensive)। অর্থের স্বল্পতার অভাবটা আমাদের মেটাতে হয় শ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে, সৃজনশীলতা দিয়ে। বলা যেতে পারে, আমাদের ছবিগুলো অনেকটাই বস্তুগত সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে মানসিক শক্তির, মাইন্ড-ওভার-ম্যাটারের বিষয়। আমাদের অর্থের যে কমতি, তা আমরা পুষিয়ে নিই আমাদের শ্রমশক্তি দিয়ে।

আমাদের বিকল্প সিনেমার আন্দোলনকে অনেকে এ দেশের গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেন। একটা পার্থক্য হচ্ছে, এ দেশে কোনো কমার্শিয়াল থিয়েটার ছিল না, যেমন পৃথিবীর অনেক দেশে রয়েছে। ফলে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন এ দেশে একটা ফাঁকা মাঠ পেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমা আন্দোলনকে একটা শক্তিশালী বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র, তার বাজার, তার প্রতিষ্ঠান, তাদের সমর্থক পত্রপত্রিকা, এদের প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করেই বরফ কেটে কেটে এগোতে হয়েছে। যাত্রাটা তাই ছিল এবং এখনো, বেশ কঠিন। দুর্গম এ বিকল্প পথে, একজন চলচ্চিত্রকারের জন্য, বলা চলে—পথে পথেই পাথর ছড়ানো।

মূলত অর্থের অভাবের কারণেই আমাদের ছবিগুলো নির্মাণে এত দীর্ঘ সব সময় লেগেছে। এখনো লাগে। তারেক মাসুদ আর আমার মাঝে একটা কৌতুক ছিল। আমরা বলাবলি করতাম, বাংলাদেশে আমাদের জন্যে ‘সিনেমা ভেরিতে’ হচ্ছে ‘সিনেমা দেরিতে’! তারেকের ‘আদম সুরত’ ছবিটা বানাতে সময় লেগেছিল সাত বছর, আমার ‘১৯৭১’ ছবিটিও সাত বছর ধরে তৈরি, আর ‘নদীর নাম মধুমতী’ লেগেছিল পাঁচ বছর। দেরির মূল কারণ—প্রচণ্ড অর্থাভাব। করপোরেট পুঁজি আমাদের অর্থ দেয় না। আমরাও তাদের কাছে যেতে চাই না।

আমাদের ছবিগুলো লক্ষ করে দেখবেন যে শেষ টাইটেল কার্ডের স্ক্রলটা যেন আর ফুরোতেই চায় না ! অসংখ্য নাম। কারণ, আমাদের অধিকাংশ ছবিই তৈরি হয়েছে অনেক অনেক মানুষের দান, অনুদান ও ঋণ নিয়ে। ফলে কৃতজ্ঞতার টাইটেল কার্ডটা তো দীর্ঘ হবেই! এত বেশি মানুষের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞ থাকতে হয়! এ একধরনের অঘোষিত ক্রাউড-ফান্ডিং বা গণ-অর্থায়ন এবং এটা আমরা শুরু করেছি ক্রাউড-ফান্ডিং শব্দটা প্রচলিত হওয়ার বহু আগে থেকেই। সেই প্রায় সিকি শতাব্দী আগে থেকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রাউড ফান্ডিংয়েও আমরা ছবি করেছি। যেমন আমার সাম্প্রতিক ‘সীমান্তরেখা’ ছবিটি। বাংলাদেশে এই-ই প্রথম গণ-অর্থায়ন বা ক্রাউড-ফান্ডিংয়ে একটা বড় প্রামাণ্যচিত্র সম্পন্ন হলো। আবু সাঈদ ওঁর ‘একটি কবির মৃত্যু’ কাহিনিছবির জন্যও গণ-অর্থায়ন করে কিছু সফলতা পেয়েছেন। অন্যরাও পাচ্ছেন। আমার ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ চলচ্চিত্রটি হতে চলেছে অনেকটাই গণ-অর্থায়ন বা ক্রাউড-ফান্ডিংনির্ভর। গণ-অর্থায়ন বিকল্প নির্মাতাদের জন্য আজ এক বিশেষ সম্ভাবনা। আর যেহেতু আমাদের সম্পদ কম, তাই অর্থ সংগ্রহ থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজগুলো আমাদের নিজেদেরই সব করতে হয়—যৌথভাবে। কয়েকজন মিলে। এ একধরনের যৌথ সিনেমা—ফিল্ম কালেকটিভ।

অর্থ তো আমাদের কোনোকালেই ছিল না। বিকল্প ছবি তাই সব সময়ই ছিল এবং এখনো, স্বল্প বাজেটের ছবি। যতটুকু অর্থ না হলেই নয়। আমাদের ছবি তাই পুঁজিঘন (Capital intensive) নয়, শ্রমঘন (Labour intensive)। অর্থের স্বল্পতার অভাবটা আমাদের মেটাতে হয় শ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে, সৃজনশীলতা দিয়ে। বলা যেতে পারে, আমাদের ছবিগুলো অনেকটাই বস্তুগত সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে মানসিক শক্তির, মাইন্ড-ওভার-ম্যাটারের বিষয়।

ডিজিটাল প্রযুক্তি চলচ্চিত্র নির্মাণকে কেবল সাশ্রয়ী ও সহজই করেনি, এর প্রসার ও বিপণনকেও আজ সহজ করে তুলেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছবি বিক্রি ও জনগণের কাছে সে ছবি পৌঁছানোর এক বিশাল সম্ভাবনা বর্তমানে সৃষ্টি হয়েছে। বিকল্প সিনেমা নির্মাতাদের এই সম্ভাবনাকে সর্বাত্মকভাবে কাজে লাগানোটা শিখতে হবে। হতে হবে প্রযুক্তিতে সুদক্ষ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছবির প্রচার, প্রসার ও অর্থায়ন, এ এক অপার সম্ভাবনার জগৎ, এবং সত্যিকার অর্থেই, সে সম্ভাবনা—আকাশের মতোই অসীম।

যেহেতু বাণিজ্যপুঁজির তল্পিবাহক প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলো ও বাজারি পত্রিকাগুলো বিকল্প সিনেমার সংবাদ তেমন ছাপে না, সে ক্ষেত্রে বিকল্প ছবির প্রচারের উপায় কী? উপায় হচ্ছে সামাজিক গণমাধ্যম। ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের সুবিধা যতটা সম্ভব নেওয়া। পুঁজির নোংরা প্রভাব থেকে এসব সামাজিক গণমাধ্যম এখনো কিছুটা মুক্ত এবং গণতান্ত্রিক। ফেসবুকে অনেক জঞ্জাল থাকলেও অনেক ভালো মানুষও এতে রয়েছেন। রয়েছেন আমাদের ছবির সম্ভাব্য দর্শকেরাও। তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের এই যুগে সামাজিক গণমাধ্যমগুলোই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও বেশি প্রসারিত গণমাধ্যম এবং জনপ্রিয়তায় টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের চেয়ে ক্রমশই উঁচুতে উঠছে তার স্থান এবং বিশ্বব্যাপীই সামাজিক গণমাধ্যমগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা আজ বেড়ে চলেছে প্রায় জ্যামিতিক হারে। এটাই ভবিষ্যৎ। আমাদের বিকল্প সিনেমাওয়ালাদের এই বিকল্প গণমাধ্যমকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা শিখতে হবে। এখানে বাড়তি সুবিধা হচ্ছে এই গণমাধ্যম অনেকটাই ফ্রি। কোনো অর্থলোলুপ সাংবাদিককে গোপনে কোনো খাম ধরিয়ে দিতে হয় না!

একটা জিনিস আমরা বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমা নির্মাতারা কখনো করিনি, তা হচ্ছে ছবির দৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে আপস। বাণিজ্যিক সিনেমা সার্কিট দ্বারা নির্ধারিত বা করপোরেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দ্বারা ঠিক করে দেওয়া সময়সীমার দাসত্ব থেকে আমরা মুক্ত থাকতে চেয়েছি। মুক্তদৈর্ঘ্যের আকাঙ্ক্ষা আমাদের শিল্পীমনের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। আমি সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি, একটা ছবির চিত্রনাট্যের দৈর্ঘ্য যতখানি হবে, ঠিক ততটা দৈর্ঘ্যই, সে ছবির জন্যে— ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য’। কখনোই তা বাণিজ্যিক সিনেমা সার্কিট বা টেলিভিশন শ্লটের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী নয়। আমার স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘হুলিয়া’  মাত্র আঠাশ মিনিটের ছবি। মোর্শেদুল ইসলামের ‘আগামী’ মাত্র পঁচিশ মিনিটের। আবার আমার ‘১৯৭১’  ছবিটা তিন ঘণ্টা পঁয়ত্রিশ মিনিটের। আমরা কোনো দিনই পুঁজির বেঁধে দেওয়া বাণিজ্যিক দৈর্ঘ্যে বিশ্বাস করিনি। দৈর্ঘ্যের স্বাধীনতা আমাদের কাছে শিল্পীর স্বাধীনতারই অংশ।

 

এরপর পড়ুন- বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমা আন্দোলন : জমা, খরচ ও ইজা (পর্ব : ২)

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.