:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মশিউল আলম

কথাসাহিত্যিক

আন্ডারপাস
প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত

আন্ডারপাস

শিশুরা সুর করে কোরান পাঠ করে। মশা মারা কয়েল থেকে উত্থিত ধোঁয়ার মতো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তেলাওয়াতের সুর। এই সুরের মধ্যে বাসা থেকে বেরোবার সময় ছয় মাস বয়সী শিশুকন্যার মুখটি ভেসে ওঠে কবিরুলের মনে।

কিন্তু চারতলার সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে সে তার প্রিয় সন্তানের মুখ ভুলে যায়। তেলাওয়াতের সুর মিলিয়ে যায় পলায়নপর সাপের লেজের মতো। লোহার গেটের ছোট দরজাটি গলে বেরোবার সময় তার মাথা সামনে ঝুঁকে আসে। বেরোবার পর সে মাথা তোলে। তার শিরদাঁড়া সোজা হয়।

বেলা ১১টা ৯ মিনিট। রোদ। চোখ টাটায়। বউবাজারের মোড় থেকে গ্রিন সুপার মার্কেটের কোণ পর্যন্ত দুই সারি রিকশা নিশ্চল। একদম স্থির। চালকদের কপালগুলো একেকটা চকচকে আয়না। যাত্রীদের চোখে তন্দ্রা। তারা হাই তোলে। অলস নিরাসক্ত চোখগুলো কিছু দেখে না।

পথ খোঁজে কবিরুল। পথ নেই। নিশ্চল রিকশাগুলোর ফাঁক-ফোকর দিয়ে আঁকাবাঁকা হয়ে পথ বের করে নিতে ঘাম ছুটে যায়। হাঁটতে আরম্ভ করে বাম দিকে। খুব রোদ লাগে।

কবিরুলের কল্পনা হয়: আকাশটা নেমে এসেছে নিচে, উলটানো একটা কড়াইয়ের মতো চকচক করছে মাথা থেকে মাত্র হাত দেড়েক উঁচুতে। মানুষগুলোর মগজ গলে গলে দুই কানের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। রোজ কিয়ামত। লোকেরা রওনা দিয়েছে হাশরের ময়দানের দিকে। কিন্তু মাঝপথে বিষম যানজটে আটকা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চল।

হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে তিনটি লোকের। একজন তাকে ডাকে, ‘আসেন।’ অভিন্ন হুকুম অন্য দুজনের চোখে। জিজ্ঞাসা, ‘কোথায়?’ উত্তরে চাপা ধমক, ‘আসেন।’ তার সামনে একজন। পেছনে একজন। তার পেছনে আরও একজন। তারা আঁকাবাঁকা হাঁটে, থেমে থেমে।

একটা রিকশায় এক বোরকার কোলে শিশু কেঁদে ওঠে। বোরকার কালো হাত শিশুটির পিঠ থাবড়ায়, ‘ও ও ও!’

রিকশাচালক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে। তার চোখ লাল। তার মুখে হাসি, ‘দুদু খিলান।’

বোরকা শিশুটিকে দুদু খিলায় কি না দেখার সুযোগ হয় না কবিরুলের। এগিয়ে যেতে হয়। তার সামনে একজন। পেছনে একজন। তার পেছনে আরও একজন।

রাস্তার বাম পাশে এক আবাসিক এলাকার ঘেরাওয়ের ভিতরে শিশুদের কোলাহল। লোহার গেটে অর্ধেক মুখ বের করে স্থির দাঁড়িয়ে আছে একটি সাদা রঙের টয়োটা করোলা। স্টিয়ারিংএ কপাল রেখে ঝিমুচ্ছে তার চালক। তার পেছনের সিটে ধ্যানগম্ভীর বসে আছেন মধ্যবয়সী অধ্যাপিকা।

‘জনপ্রিয় মাংস বিক্রয় কেন্দ্রে’র উল্টা দিকে লাইটপোস্টের সঙ্গে বাঁধা একটা ভারতীয় বলদ গোবরে মাখামাখি হয়ে বসে নির্বিকারভাবে জাবর কাটছে। তার বড় বড় চোখে আলস্য, নিরাসক্তি। পৃথিবী থেমে গেলে তার কিছু এসে যায় না।

কবিরুলের সামনের লোকটি একটা খালি রিকশা ডিঙিয়ে পার হয়। সে তাকে অনুসরণ করে। তাকে অনুসরণ করে পেছনের দুজন। কোণে লাইটপোস্টের নিচে দাঁড়ানো আনারস-বিক্রেতা লোকটি, মধ্যবয়সী, করুণ চেহারার লোকটি, কপালের কাছে হাত তুলে নিঃশব্দে সালাম দেয় তাকে। সেও নিঃশব্দে সালামের উত্তর দেয়, প্রতিদিন এই ঘটে। কবিরুলের হঠাৎ মনে হয়, লোকটির নাম কোনো দিন জিজ্ঞাসা করা হয়নি। কটি ছেলেমেয়ে তার? লাইটপোস্টের পাশে দিনভর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আজ আনারস, কাল পেঁপে, পরদিন জাম্বুরা বিক্রি করে কয় পয়সা রোজগার হয়? কী করে সংসার চলে?

একটা রিকশাভ্যানের পেছনের পাটাতনে উঠে পড়েছে এক রিকশার সামনে চাকা।

‘গাইয়ের উপ্রে ষাঁড় চড়ছে রে!’ একজন রসিকতা করে। কিছু লোক হাসাহাসি করে, বাকিরা বেরসিক।

গ্রিন রোডের দক্ষিণ দিক থেকে এক হলকা গরম বাতাস বয়ে যায় উত্তর দিকে। রাজাবাজারের গলিটি গ্রিন রোডের যে জায়গায় মিলেছে সেখানে একটা বিতিকিচ্ছি পাকিয়ে তুলেছে রিকশার জট। পা ফেলার জায়গামাত্র নেই। সামনের লোকটি ডান পাশের দোকানপাটের সামনে দিয়ে হাঁটতে আরম্ভ করে দক্ষিণ দিকে। কবিরুলের পিঠে ঠেলা মারে পেছনের জন। কবিরুল সামনের জনকে অনুসরণ করে এগোয়। তার পিছু পিছু আসে পেছনের দুজন।

এক অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সামনে পাতাল থেকে মুখ বের করে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা লম্বাটে কালো গাড়ি। সেটির জানালায় এক সুন্দরী তরুণীর মুখ। কবিরুলের স্ত্রীও বছর পাঁচেক আগে এমন সুন্দরী ছিল। আগে সুন্দর মেয়ে দেখলে কবিরুলের মন প্রফুল্ল হতো, এখন মন খারাপ হয়ে যায়। সুন্দরীরা সুন্দরী থাকে না। ববিতা কেমন বিচ্ছিরি মোটা হয়ে গেছে। মোটা মেয়েমানুষ দেখলে কবিরুলের খুব খারাপ লাগে, করুণা জাগে : বেচারি কী অসহায়!

কবিরুলের কল্পনা হয়: আকাশটা নেমে এসেছে নিচে, উলটানো একটা কড়াইয়ের মতো চকচক করছে মাথা থেকে মাত্র হাত দেড়েক উঁচুতে। মানুষগুলোর মগজ গলে গলে দুই কানের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। রোজ কিয়ামত। লোকেরা রওনা দিয়েছে হাশরের ময়দানের দিকে। কিন্তু মাঝপথে বিষম যানজটে আটকা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চল।

নামাজ আদায় করা হলো না বলে আফসোস করছে একটি মেয়ে। একটা দোকানের লাউড স্পিকারে। কবিরুল জানে, যে মেয়েটি সুরে সুরে এই আফসোস করছে সে কোনো দিন নামাজ পড়েনি। যে বেটা গানটি লিখেছে, কবিরুলের মনে হয়, সে স্বয়ং আল্লাহকে গোঁজামিল দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করেছে যে সে নিরুপায়, সংসারের ঠেলায় তার নামাজ আদায় করা হয়ে ওঠে না। কিন্তু নিস্তার পাবে না সে। আল্লাহ যেমন পরম দয়ালু, তেমনি চরম শাস্তিদাতা। সাত সাতটি দোজখ তিনি বানিয়ে রেখেছেন শুধু শুধু?

‘আমিন ভাই, যান কই?’ বনফুল দোকানের সামনে কবিরুলকে কে আমিন ভাই বলে ডাকে। চেনা চেনা ঠেকে তাকে, কিন্তু চিনতে পারে না কবিরুল। কুশলের জবাব না দিয়ে সে তাকে স্মরণ করার চেষ্টায় নিবিষ্ট হয়। এ সময় পেছনের লোকটি তার পিঠে ধাক্কা মারে। সামনের লোকটি সুযোগ পেয়ে বাম পাশের একটি খালি রিকশা ডিঙিয়ে পার হয়, কিন্তু তার পরই আটকা পড়ে এক ট্যাক্সিক্যাব ও দুটি যাত্রীবাহী রিকশার ফাঁকে।

খালি রিকশাটিতে উঠে বসে কবিরুল। তার পেছনের লোকটিও উঠে তার পাশে বসে তার কাঁধে একটা হাত তুলে দেয়, যেন বহুকালের দোস্ত। সর্বশেষ জন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে চোখের মণিদুটো ঘোরাতে থাকে। পাশের ট্যাক্সিক্যাবটি নড়ে ওঠে। তার ফাঁক দিয়ে সুরুত করে ঢুকে পড়ে প্রথম জন। কবিরুলের পাশে বসা লোকটি কনুইয়ের গুঁতো মারে কবিরুলের পাঁজরে। কবিরুল রিকশা থেকে নেমে প্রথম জনকে অনুসরণ করে। তার পাশের লোকটি অনুসরণ করে তাকে। তৃতীয় জন হারিয়ে যায়।

রাস্তা ক্রস করে প্রথম জন ফুটপাত ধরে আবার হাঁটতে আরম্ভ করে উল্টো পথে। দ্বিতীয় জন কবিরুলের পিঠে ঠেলা মেরে প্রথম জনের অনুগামী হতে বলে। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের গেটের সামনে পাম্পার হাঁকিয়ে রিকশার চাকায় হাওয়া ভরছে এক লোক। কে একজন বলে: ‘লাগা লাগা, জোরে জোরে লাগা।’

সেগুনের একটা ঢাউস পাতা খসে পড়ে। সেগুন কাঠে ঘুণ ধরে না। কিন্তু বিয়ের পরে কবিরুল সাত হাজার টাকা দিয়ে সেগুণ কাঠের যে-খাটটি কিনেছিল সেটিতে ঘুণ ধরেছে। ঘুণ ধরেছে শোকেসে, ওয়ার্ডরোবে, আলনায়, বুকশেলফে, বাসার প্রতিটি দরজার পাল্লায় ও চৌকাঠে। বউয়ের অভিযোগ, ওদের অ্যারিস্টন ফ্রিজটিতেও নাকি ঘুণ ধরেছে। দরজা খুললেই ঘুণ পড়ে ঝুর ঝুর করে। ঘুণপোকা আর যাই খাক লোহা খেতে পারে না, কবিরুল এই কথা বললে বউ ক্ষেপে গিয়ে বলে, তুমি তো একটা কানা।

কবিরুলের বুক বরাবর অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র পেতে ধরে একটা লোক। তার কপালের নিচে যে জায়গায় দুটো চোখ থাকার কথা, সেখানে দুটি লাল গর্ত। কবিরুল তার পাত্রে একটা মুদ্রা ফেলে, ঠং শব্দে ধন্যবাদ জানায় পাত্রটি। তার ঠিক পাশেই দেয়ালের গোড়ায় কালো ঊরু বের করে বসে পেচ্ছাপ করছে লুঙ্গিপরা-খালিগা এক লোক, তার পেচ্ছাপের ফেনা হলুদ, নিশ্চয়ই জন্ডিস হয়েছে। কবিরুলের একবার জন্ডিস হয়েছিল। সেবার সে প্রচুর আখের রস খেয়েছিল। আখের রসের সঙ্গে নুন মেশালে আর কাঁচা মরিচ পিষে দিলে খেতে বেশ লাগে। কিন্তু কাজিপাড়ায় ঢোকার গলির মুখে রাস্তার ঠিক উল্টো দিকে যারা আখের রস বিক্রি করছে তারা নুন মেশাচ্ছে না, কাঁচা মরিচও নয়।

সামনের লোকটি কাজিপাড়ার গলি দিয়ে এগিয়ে যায়। পেছনের জন রাখালের মতো কবিরুলকে ওই গলির মধ্যে ঢোকায়। গলিতে খোঁড়াখুঁড়ি। আলগা মাটির পাহাড়। দশ বছর ধরে এই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। লোকেরা মাটি খোঁড়ে, ভরাট করে। আবার খোঁড়ে, আবার ভরাট করে। এই কাজ করতে করতে তারা বুড়ো হয়ে গেল। কবিরুল নিজেও বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। দশ বছর আগে তার বয়স ছিল পঁচিশ। তখন তার একটি চুলও পাকেনি। দশ বছর পরে এখন তার মাথার অর্ধেক চুল পাকা। দশ বছর আগে যে কাকেরা চিৎকার করে খুব ভোরে তার ঘুম ভাঙিয়ে দিত আজ তাদের একটিও বেঁচে নেই। যে কাকটি এখন টেলিফোনের তারে বসে নিচে মাটি-খোঁড়া লোকগুলোর মাথায় বিষ্ঠা নিক্ষেপের পাঁয়তারা করছে, সেও দশ বছর পরে থাকবে না। কবিরুল হয়তো থাকবে, থাকলে তখন তার বয়স হবে পঁয়তাল্লিশ। তার পর আর ক বছর? আরও দশ? আরও দশ? এই তো, আঙুলে গোনা যায়। এক থেকে বিশ পর্যন্ত গুনতে যেটুকু সময় লাগে, বিশ বছর বুঝি ফুরিয়ে যায় তার চেয়েও দ্রুত।

কিন্তু কেন বছর গোনা? কে কখন মরে যায়! কবিরুল ভাবে, আজ নয় কাল নয় পরশু সে মরে যাবে।

কিন্তু গলির মোড়ে সেই অন্ধ বুড়িটি টিনের থালা পেতে বসে আছে। কবিরুল কতদিন এই পথে যেতে যেতে তাকে দেখে ভেবেছে, আগামী কাল হয়তো বুড়িটিকে আর দেখতে পাবে না। কিন্তু পরদিন আবার দেখেছে, নীরবে থালা পেতে বসে আছে একইভাবে; একটুও ক্ষয় হয়নি।

কবিরুলের মনে হয়, একদিন এই বুড়ি এই পথে আর কবিরুলের পায়ের শব্দ শুনতে পাবে না।

এক কড়াই ভর্তি তেলে সিঙারা ভাজা হচ্ছে। পুড়ে কালো হয়ে গেছে তেল, মরা রক্তের মতো খয়েরি রঙ নিচ্ছে সিঙারাগুলো। কবিরুল সিঙারা পছন্দ করে। কিন্তু এই সিঙারাগুলো খেলে ক্যান্সার হবে। কবিরুলের বাবা ক্যান্সারে মারা গেছেন। কিন্তু তিনি সিঙারা খেতেন না। পান-জর্দা-সিগারেট কিছুই খেতেন না। ভাত খেতেন অল্প। পালং শাক ভালোবাসতেন, আর ছোট ছোট মাছ। সবচেয়ে ভালোবাসতেন মলা আর কাচকি মাছ। ঘুম থেকে উঠতেন খুব ভোরে। ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে বেরোতেন খোলা হাওয়ায়। তাঁর হাই ব্লাডপ্রেশার ছিল না, ডায়াবেটিস ছিল না, পেটের পীড়া ছিল না। চোখের জ্যোতি ছিল অম্লান। তাই তাঁর ক্যান্সার হয়েছিল। মৃত্যুর জন্যে একটা অজুহাত দরকার। একদিন বিজ্ঞানীরা জেনে ফেলবে কী কারণে ক্যান্সার হয়। একদিন ক্যান্সারের অষুধ আবিষ্কৃত হবে। তার পরেও মানুষ মরবে। সব রোগের ওষুধ আবিষ্কৃত হলেও মানুষ মরবে।

ওষুধের দোকানের চালের ওপর নুয়ে-পড়া আমের শাখায় একটা মৌচাক। মেয়েটির জন্য আজ মধু কিনতে হবে। ওর ঠান্ডার ধাত। মধু খেলে সর্দিকাশি কম হয়। কিন্তু খাঁটি মধু কোথায়? ডাবর, এস অ্যান্ড ডব্লিউ কোনো কোম্পানিতেই বিশ্বাস নেই।

রাস্তার পাশে দেয়াল ঘেঁষে বসেছে মাছের ও শাকসবজির বাজার। রুই মাছের কানকোতে সিঁদুর লাগাচ্ছে এক দোকানি। ভোঁ ভোঁ করছে নীল মাছির ঝাঁক। সবজির দোকানে শসাগুলো হলুদ। টমেটোগুলো একেকটা পুঁজভর্তি ফোঁড়া। পুঁইশাকের রঙ কালো। ঝিঙে ও বেগুনের ভিতর থেকে কিলবিল করে বেরিয়ে আসছে পোকা। দাঁত খিঁচিয়ে ঊরু চুলকাচ্ছে এক দোকানি। বুড়ো আঙুলে নাকের একটি ফুটো চেপে ধরে ফোঁৎ ফোঁৎ শব্দ তুলে সর্দি ঝাড়ছে আরেক জন। তার সবজির ডালির পাশে এক দলা গোবর। উল্টো পাশের দেয়ালে সারি ধরে পেচ্ছাপ করছে তিনটি উলঙ্গ শিশু।

একটা মোটাসোটা হেঁকাবেঁকা বাঁশ আড়াআড়ি ফেলে রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। ঠকাঠক শব্দ তুলে কাঠের তক্তা পাশাপাশি জোড়া দিয়ে মঞ্চ বানাচ্ছে একদল করিৎকর্মা মিস্ত্রি। ‘পবিত্র উরস মোবারক’ লেখা লাল সালু কাপড় ঝুলছে পাশের টং ঘরে। তার পাশে একটি ঘরের সামনে সাইনবোর্ড। ‘বাংলাদেশ’ এর নিচে লেখা ‘পৃথিবী’। তারপর ‘৩২ নং ওয়ার্ড’। বাদশা আওরঙ্গজেবের নামের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে জনৈক লিয়াকতের নাম। পাশের দেয়ালে বড় বড় অক্ষরে লাল কালিতে লেখা : লিলিপুটের রাজা জিন্দাবাদ। প্রচারে ছেকেন্দর জনাথন সুইফ্ট।

একটা রিকশাভ্যানে বাতাবি লেবুর স্তূপ : ‘জাম্বুরা লয়া যান ছার। ভালো জাম্বুরা।’

জাম্বুরার খোসা দিয়ে দাঁড়িপাল্লা বানিয়ে ধুলার দোকানদারি করা যায়। ধুলা পাইকারি ৪১ টাকা মন দরে বিক্রি হয়। এক মণ ধুলা কিনতে অনেক খোলামকুচি দরকার। কিন্তু জাম্বুরার খোসার দাঁড়িপাল্লায় ধুলার মাপ করা হয় সের হিসাবে। জাম্বুরার খোসায় চাপ দিলে চিরিক্ করে রস বেরিয়ে আসে, ওই রস চোখে পড়লে চোখ জ্বালা করে, কিন্তু চোখের ক্ষতি হয় না, বরং চোখ পরিষ্কার হয়ে যায়।

কবিরুলের বুক বরাবর অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র পেতে ধরে একটা লোক। তার কপালের নিচে যে জায়গায় দুটো চোখ থাকার কথা, সেখানে দুটি লাল গর্ত। কবিরুল তার পাত্রে একটা মুদ্রা ফেলে, ঠং শব্দে ধন্যবাদ জানায় পাত্রটি। তার ঠিক পাশেই দেয়ালের গোড়ায় কালো ঊরু বের করে বসে পেচ্ছাপ করছে লুঙ্গিপরা-খালিগা এক লোক, তার পেচ্ছাপের ফেনা হলুদ, নিশ্চয়ই জন্ডিস হয়েছে। কবিরুলের একবার জন্ডিস হয়েছিল। সেবার সে প্রচুর আখের রস খেয়েছিল।

বাতাবি লেবুর ভ্যানের সামনে কবিরুলের পিঠে ধাক্কা মারে পেছনের লোকটি। সামনের জন পেছন ফিরে দেখে আবার চলতে শুরু করে। এক রেস্তোরাঁর সিঁড়ির কাছে বৈদ্যুতিক জেনারেটরের শব্দের নিচে সব শব্দ চাপা পড়ে যায়।

রাস্তার ওপাশে দূরে দেখা যায় কাওরানবাজার জামে মসজিদের সবুজ গম্বুজ। সামনের লোকটি আন্ডারপাসের দিকে এগোয়। আন্ডারপাসের কলাপসিবল গেট বন্ধ। রাইফেল আর রবারের লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে নীলজামা পুলিশ।

‘প্রাইম মিনিস্টার যাইব।’

‘প্রধানমুন্ত্রী আইব।’

‘প্রধানমুন্ত্রী অক্ষণে কদ্দূর?’

‘আর কতক্ষণ লাগব?’

‘আইব, আইব। আইয়া পড়ব।’

হৃদয়বিদারক শিস বাজিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে ছুটে যায় রাজকীয় মোটরবাইক। তারপর শূন্য রাজপথ সুনসান।

‘আইতাছে! হুন্ডার পুতে আগেভাগে জানান দিয়া গেল রে!’

‘হ, হ্যারা মুন্ত্রী-প্রধানমুন্ত্রী হইছে, আর আমরা চ্যাটের বাল।’

‘হ, তোমরা তো চ্যাটের বালই।’

‘আর তোমরা বাল ফালান্ন্যা পুলিশ!’

পুলিশ কনস্টেবল হাসে। রাইফেলের ঘোড়া টানতে টানতে পাশের সহকর্মীকে বলে, ‘সুলেমান, একখান বাল ফালাইয়া দেই!’

বলেই দুম করে গুলি করে বসে। ছ হাত দূরে ছিটকে পড়ে যায় গুলিবিদ্ধ লোকটি।

‘কী হইল?’

‘বাল ফালাইলাম একখান।’ হেসে বলে পুলিশ কনস্টেবল।

মিহি শি শি শব্দ তুলে ছুটে চলে যায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। আন্ডারপাসের কলাপসিবল গেট টেনে খুলে ফেলে পাবলিক। কবিরুলের সামনের লোকটি পেছন ফিরে একবার তাকায়। তার পর নামতে আরম্ভ করে আন্ডারপাসের সিঁড়ি বেয়ে। আবার আবির্ভাব ঘটে তৃতীয় জনের। কবিরুলের বাম পাশে দাঁড়ায় সে। দ্বিতীয় জন কবিরুলের ডান পাশে। দুজনে কবিরুলকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যায় আন্ডারপাসের সিঁড়ির দিকে।

আন্ডারপাসে প্রবেশ করা যায় বিপরীতমুখী দুটো সিঁড়ি বেয়ে। কবিরুলকে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বাম পাশের সিঁড়ির দিকে। সিঁড়ির ধাপে পা রাখতেই বিপরীত দিকের সিঁড়ির সুড়ঙ দিয়ে ধেয়ে আসে সাদা আলো। পায়ের কাছে আঁধার। দূরে আলো। নামতে নামতে আড়ালে চলে যায় দোকানপাট, ইমারত, লোকজন। চোখের সামনে অবশিষ্ট থাকে এক টুকরো আকাশ। ক্রমে তা-ও হারিয়ে যায়।

সিঁড়ির শেষ ধাপে পা রাখতেই ঝপ করে নেমে আসে আঁধার। দুই চোখ বন্ধ করে থমকে দাঁড়ায় কবিরুল। দুপাশের দুইজন হাত গলিয়ে দেয় তার দুই বগলের মধ্যে। অন্ধকার সুড়ঙের দূর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে কোরান তেলাওয়াতের করুণ সুর।

কবিরুল চোখ খোলে। ফিকে হয়ে আসে গাঢ় আঁধার। ডানে নিশ্ছি দ্র দেয়াল, বামে ঘোর অন্ধকার। সেই অন্ধকারে তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে লাফাতে এগিয়ে যায় সামনের লোকটি। কবিরুলের দুই বগলের ভেতর থেকে হাত বের করে নেয় দুজন। বামে চলতে আরম্ভ করে তারা।

দুই পাশে মোটা মোটা পিলার। পিলারগুলোর ফাঁকে ফাঁকে কতকগুলো খোপ: সারি সারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিটির সামনে সাইনবোর্ড। ডান পাশে ‘নাখালপাড়া উকুন বাছাই কেন্দ্র’। বামে ‘নরসুন্দর’।

দুই সারি টুলে বসা কতকগুলো লোকের মাথায় ফটাফট চাটি মারছে কয়েকটা বাঁদর। লোকগুলো উহ্ আহ্ ধ্বনি করছে; আরামে না ব্যথায় কবিরুল বুঝতে পারে নাা।

‘ভাগ্যকূল ছাগল প্রজনন কেন্দ্র’ থেকে বেরিয়ে আসে একটা বামন লোক। তার কান দুটো ছাগলের কানের মতো লম্বা, কাঁধের ওপর লুটোপুটি খাচ্ছে। বোঁটকা গন্ধ ছুটছে তার উদোম গা থেকে। পরনের নেংটি ঠেলে ডান ঊরুর পাশ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে তার বিশাল অণ্ডকোষ। ব্যা ব্যা ডেকে ওঠে সে। কবিরুলের সঙ্গের লোকেরা হাসে। কবিরুল হাসে না।

বামন লোকটি বলে, ‘জর্জ অরওয়েল ওইখানে বইস্যা আছে।’

কবিরুল বলে, ‘তারে আমার সালাম দিও।’

বামন লোকটি বলে, ‘প্রাইম মিনিস্টারের পল্টিকাল সেক্রেটেরিও ভি আছে।’

কবিরুলের বাম পাশের লোকটি বলে, ‘হেরে এক গিলাস ছাগলের দুদ খাইতে দিও।’

হঠাৎ দুহাতে তালি বাজিয়ে চিৎকার ছাড়ে বামন লোকটি, ‘বাহাদুর, ধর হালারে!’

ভোজবাজির মতো বেরিয়ে আসে জাম্বো পালোয়ানের মতো দুই পুলিশ কনস্টেবল। বামন লোকটি তাদের আদেশ করে, ‘হালার ঠ্যাং চিরর‌্যা ফালা।’

দুই পালোয়ান খপাখপ চেপে ধরে লোকটির দুই ঠ্যাং। তার পর তাকে শূন্যে তুলে টানতে আরম্ভ করে দুই দিকে। পড়্ পড়্ শব্দ ওঠে, টপাটপ রক্ত ঝরতে আরম্ভ করে, আর চারিদিকে ক্রমাগত ঝিলিক দিতে থাকে ফ্লাশবাতি।

‘হেই হেই! বান্দির পুতেরা ফটো তুল্যা ফালাইলো!’

‘নেংটি খুলে পাঁঠার শিশ্ন ফটোসাংবাদিকদের দিকে তাক করে দমকলের হোসপাইপের মত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পেচ্ছাপ করে দিতে লাগল বামন লোকটি। দুদ্দাড় পালিয়ে গেল ফটোসাংবাদিকেরা। দুই পালোয়ান চেরাই করা লোকটির দেহের দুটি অংশ নিজ নিজ কাঁধে ফেলে দুম দুম করে মাটিতে গুঁড়ি মারতে মারতে আঁধারে অদৃশ্য হয়ে গেল।

‘আসেন ভাইসব। সুলভ মূল্যে পকেট সাইজ সংবিধান নিয়া যান। নির্ধারিত মূল্য পনর ট্যাকা। আসন্ন পবিত্র নির্বাচন উপলক্ষে বিশেষ ছাড়: প্রতি কপির দাম দশ ট্যাকা, দশ ট্যাকা, দশ ট্যাকা। এই সংবিধানের ভিত্রে আপনে পাইবেন কয় মাস বয়েসে বাইচ্চ্যার দাঁত গজায়। প্রধান উপদেষ্টার বিবি কী রঙ্গের কার্পেট পছন্দ করিলে জাতির সর্বনাশ হয়। এমপিগণ মাইয়ামানুষ লইয়া এমপি হুস্টালে রাত কাটাইতে পারিবেন কি পারিবেন না। …

কবিরুলের কলার খামচে ধরে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে চলল অন্য লোকটি। প্রথম জন পিছিয়ে এসে যোগ দিল তাদের সঙ্গে।

কয়েক ধাপ এগোবার পর বাম পাশে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রয়কেন্দ্র’। ফ্রন্ট ডেস্কে মুখ ব্যাদান করে বসে আছে একটা ভূত।

‘বেচাকিনা কেমুন?’

‘চলতাছে টুকটাক।’

‘চাপা মাইরো না মিয়া। দোকান বন্দ কইর‌্যা বাইত্তে যাও গিয়া।’

‘তিরিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ মা-বুনের ইজ্জত…!’

‘আরে মিয়া রাখো!’

‘আল্লা মাবুদ! ব্যাবাক হালার পুতে রাজাকার হইয়া গেল?’

পথচারী লোকটি লাফিয়ে উঠে চটাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল ফ্রন্ট ডেস্কের ভূতটির হাড্ডিসার গালে।

একটি পিলারের গোড়ায় এক স্তূপ পুস্তিকার পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে বাঁশের মতো লম্বা ও চিকন একটা লোক : ‘আসেন ভাইসব। সুলভ মূল্যে পকেট সাইজ সংবিধান নিয়া যান। নির্ধারিত মূল্য পনর ট্যাকা। আসন্ন পবিত্র নির্বাচন উপলক্ষে বিশেষ ছাড়: প্রতি কপির দাম দশ ট্যাকা, দশ ট্যাকা, দশ ট্যাকা। এই সংবিধানের ভিত্রে আপনে পাইবেন কয় মাস বয়েসে বাইচ্চ্যার দাঁত গজায়। প্রধান উপদেষ্টার বিবি কী রঙ্গের কার্পেট পছন্দ করিলে জাতির সর্বনাশ হয়। এমপিগণ মাইয়ামানুষ লইয়া এমপি হুস্টালে রাত কাটাইতে পারিবেন কি পারিবেন না। সংসদের কোন কক্ষে শয়তান প্রবেশ করে না। সংসদের স্পিকার বিরোধী দলের এমপিরে কথা বলিবার সুযুগ দিলে তার কী শাস্তি প্রাপ্য হইবে…,আসেন আসেন! সুলভ মূল্যে পকেট সাইজ সংবিধান লয়া যান।’

একটা খোপের সাইনবোর্ডে অদ্ভুত ইংরেজি হরফে লেখা : GROTESQUE। খোপের ভেতরের দেয়াল জুড়ে একটা পর্দায় লম্বা লম্বা কতকগুলি ছায়ামূর্তি সার বেঁধে একটা রশির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। দাউ দাউ আগুন জ্বলছে রশিটির নিচে। আরও কতকগুলি ছায়ামূর্তি সেই আগুনে কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি ইন্ধন জোগাচ্ছে।

মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় একটা বাদুর। তার পিছু পিছু যায় তার ডানার শব্দ। একটু পরেই শব্দটা ফিরে আসে। মাথার উপরে আবার একটা বাদুর দেখতে পায় কবিরুল। বাদুরটার দুই চোখ আগুনের বল। কপাল বরাবর নেমে এসে ছোঁ মারার ভান করে উঠে যায় ফের। মাথার উপরে একটা চক্কর খায়। তার পর আবার হারিয়ে যায় সামনের অন্ধকারে। হঠাৎ ডান থেকে বামে তিরের বেগে ছুটে যায় একটা শিয়াল। তার পিছু পিছু ছোটে একটা কুকুর। একটু পরে দূর থেকে ভেসে আসে হুক্কা হুয়া, তার পরপরই ঘেউ ঘেউ।

আরও কিছু দূর এগোবার পর একটা ফাঁকা জায়গার পাশে থেমে দাঁড়ায় দুই লোক। দাঁড়ায় কবিরুলও। সমতল উঁচু একটা বেদির মতো জায়গাটিতে আঁধার গাঢ় নয়। গোধূলির মতো একটা শীতল আবছায়া। পেছনের দিকটা খোলা। দূরে নিষ্প্রভ একটা প্রান্তর নিচু ও নীরব। জায়গাটির মাঝ বরাবর পাতা রয়েছে দেড়ফুট চওড়া আর ছ ফুট লম্বা একটা মসৃণ তক্তা। তক্তার যে প্রান্ত মাঠের দিকে, সেখানে রাখা হয়েছে ইঞ্চি চারেক চওড়া এক খণ্ড কাঠ। তার হাত খানেক দূরে পান্তরের দিকে পিঠ ফিরিয়ে একটি তেপায়ার ওপর বসে আছে এক নারী। তার কোলে মাস ছয়েকের একটি শিশু হাত নেড়ে খেলছে আর তা তা দা দা ধ্বনি করছে।

‘আপনের শ্যাষ ইচ্ছা?’

কবিরুল কথা বলে না।

‘সিগ্রেট খাইবেন একখান?’

কবিরুল উত্তর দেয় না।

‘বাইচ্চ্যারে আদর করবেন?’

কবিরুল কথা বলে না। নীরবে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে তক্তাটির উপর। কাঠের খণ্ডটির উপর সে রাখে মাথা নয়, ঘাড়। ফলে তার গ্রীবা টান টান হয়ে আসে আর মাথাটি পেছন দিকে এমনভাবে বেঁকে যায় যে হাত খানেক পেছনে তেপায়ায় উপবিষ্ট নারী ও তার কোলের শিশুটির উল্টানো ছবি তার চোখে দুলতে থাকে। কিন্তু দুজনের একজন এগিয়ে এসে তার মাথার কাছে হাঁটু গেঁড়ে বসলে নারী ও শিশুটির ছবি কবিরুলের দৃষ্টি আড়ালে পড়ে যায়। লোকটা কবিরুলের কপাল শক্ত করে চেপে ধরে, চাপ দেয় নিচের দিকে, মাথাটি ঘসা খায় তক্তার বাইরে শীতল, স্যাঁতসেতে মাটির সঙ্গে। লোকটা দুই হাতের ব্যবহারে মাটির সঙ্গে আরও দৃঢ়ভাবে ঠেসে ধরে কবিরুলের মাথাটি।

কবিরুল দেখতে পায় তার মাথার ডান পাশে দাঁড়িয়ে আছে প্রথম লোকটি। ভীষণ লম্বা হয়ে গেছে সে, তার মাথা ঠেকেছে আকাশে। আবছা আঁধারে তার মুখ স্পষ্ট দেখতে পায় না কবিরুল। তার ডান হাতে চকচকে একটা ছুরি। সেটিও তরবারির মতো লম্বা। লোকটি সামনে ঝুঁকে নিচু হয়ে এলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার নির্বিকার কর্তব্যপরায়ণ মুখ। কবিরুলের ডান কানের কাছে দুই হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে লোকটি। বাম হাতে কবিরুলের থুতনি চেপে ধরে প্রবল চাপ দেয় মাথার দিকে, আরও টান টান হয়ে আসে কবিরুলের গ্রীবা। ডান হাতে লম্বা ছুরিটি শক্ত করে ধরে কনুই ভাঁজ করে সে।

কবিরুল দুই চোখ বন্ধ করে।

অনেক দূর থেকে ভেসে আসে শিশুর কান্না ও কোরান তেলাওয়াতের করুণ সুর।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.