:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মেহেদী হাসান মুন

লেখক, চলচ্চিত্র সমালোচক

নীল পাহাড়: পাহাড় ও মানুষের এক নান্দনিক উপাখ্যান
প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত

নীল পাহাড়: পাহাড় ও মানুষের এক নান্দনিক উপাখ্যান

ওবায়েদ হকের প্রথম উপন্যাস নীল পাহাড়। বইয়ের শুরুতে তিনি স্বীকারোক্তি দিয়ে রেখেছেন যে সুযোগ পেলে এই উপন্যাসের অনেক কিছুই তিনি সংশোধন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষমেশ কিছু বানান ছাড়া আর কিছু পরিবর্তন করতে পারেননি। বই পড়া শেষ করার পর আমারও মনে হয়েছে কিছু পরিবর্তন করার প্রয়োজন ছিল না বোধ হয়। কেননা, একজন লেখক তার সবচেয়ে ভালো লেখাটির মাঝেও স্বাভাবিকভাবে দোষ খুঁজে পাবেন কিন্তু একজন পাঠক সেটি পাবেন না। পাঠক দোষ খুঁজতে পারেন গল্পের বুনটে কিন্তু পাঠক গল্প লিখে দিতে পারবেন না, পাঠক চরিত্র চিত্রণে খামতি খুঁজে বের করতে পারবেন কিন্তু সে চরিত্রের বলয় নিজে ঠিক করে দিতে পারবেন না। যার উৎস, যার আবির্ভাব লেখকের মস্তিষ্কে তার চলার পথ সে লেখকই ঠিক করে দিতে পারেন। সেদিক থেকে নীল পাহাড় সার্থক।

নীল পাহাড়ের গা জুড়ে নতুন নতুন একটা ঘ্রাণ কিন্তু আসে। প্রথম উপন্যাস না বললেও হয়তো বুঝে নিতাম যে আনকোরা এখনও লেখক। যে পরিমাণ কাল, যে পরিমাণ স্থান ও যে পরিমাণ চরিত্র ধারণ করেছেন তিনি এই উপন্যাসে সে তুলনায় কলেবর খুব কম বলে মনে হয়েছে। কিছু প্রেক্ষাপট, কিছু চরিত্র, কিছু জায়গাকে আরেকটু ব্রিদিং স্পেস দিলে মন্দ হতো না। এজন্য নীল পাহাড়ের মূল চরিত্র মানিক মিত্রকে কোথাও থিতু হতে দেখা যায় না। হয়তো সেটিই চরিত্রের ডিমান্ড কিন্তু যেহেতু পাঠককে চরিত্রের সাথে যেতে হচ্ছে সেহেতু সে জায়গাগুলোকে পাঠকের মনে আরেকটু সময় ধরে রাখা দরকার ছিল বলে মনে হয়। পাঠক হিসেবে আমি কল্পনা করতে ভালোবাসি তাই পাহাড়ের কোলঘেঁষে মানিকের সে চলমান পাহাড়ি জীবনকে আমি আত্মস্থ করতে চেয়েছিলাম, পারিনি হয়তো তাড়া ছিল লেখকের তাই।

পাহাড়কে আত্মস্থ করতে না পারলেও মানিক মিত্রকে ঠিকই পড়ে নেয়া যায়। চরিত্র নিয়ে ওবায়েদ হকের কাজের প্রশংসা করতে হয়। তিনি প্রতিবারই তার উপন্যাসে একটি চরিত্রের সাথে পাঠককে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেন যে তার প্রতিটি পদক্ষেপ পাঠক অনুসরণ করে। পাঠক টের পায় যে মূল চরিত্রটি ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কিন্তু এটিও জানে যে সে ঠিকই উদ্ধার পাবে শেষমেশ।

তবে পাহাড়কে আত্মস্থ করতে না পারলেও মানিক মিত্রকে ঠিকই পড়ে নেয়া যায়। চরিত্র নিয়ে ওবায়েদ হকের কাজের প্রশংসা করতে হয়। তিনি প্রতিবারই তার উপন্যাসে একটি চরিত্রের সাথে পাঠককে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেন যে তার প্রতিটি পদক্ষেপ পাঠক অনুসরণ করে। পাঠক টের পায় যে মূল চরিত্রটি ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কিন্তু এটিও জানে যে সে ঠিকই উদ্ধার পাবে শেষমেশ।

নীল পাহাড় by ওবায়েদ হক
সমকালীন উপন্যাস। প্রকাশক: বায়ান্ন।
প্রথম প্রকাশ: ২০১৫ [কাকলী প্রকাশনী], দ্বিতীয় প্রকাশ: ২০১৬ [বিদ্যানন্দ প্রকাশনী], ২০১৯ [অরণ্যমন প্রকাশনী, ভারত]।
প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত। মূল্য: ২৫২ টাকা। ফাইল ছবি।
ওবায়েদ হকের নীল পাহাড়-এ উঠে এসেছে আশির দশকের রাজনৈতিক বাস্তবতা। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের সহিংস রাজনীতির একটি বাস্তব রূপ প্রত্যক্ষ করা যায় এই উপন্যাসে। পাহাড়কে আমরা জানিনা, চিনিনা বলেই পাহাড় আমাদের শিল্প-সাহিত্যে খুব কমই উঠে আসে। একজন তরুণ লেখক তার প্রথম উপন্যাসে সে পাহাড়কেই উপজীব্য করেছেন বলে মুগ্ধতাটা চলে আসা স্বাভাবিক। একটা সিনেম্যাটিক ট্রিটমেন্টে এগুতে থাকে তার উপন্যাস, যার প্রথম অংশের পুরোটাই মানিক মিত্রের নিজস্ব টানাপোড়েনের আর দ্বিতীয় অংশ পুরোটাই পাহাড়ি সহিংসতার। এরই মাঝে মানিকের জীবনের পট পরিবর্তন, নতুন মানুষ, নতুন ক্রাইসিস, নতুনভাবে উপলব্ধি করা সবকিছু লেখক বলে গিয়েছেন সিনেম্যাটিক ওয়েতে। ক্লাইম্যাক্সের জন্য একটি টুইস্ট বরাদ্দ ছিল, নীল পাহাড় নামের একটি সার্থকতা দেয়া দরকার ছিল, সব মিলিয়ে শেষটা বেশ টানটান এডভেঞ্চার সিনেমার মতোই। এরই মাঝে বেশ কিছু চরিত্র দ্বিতীয় অংশে ছাপ রেখে যায়। মানিক মিত্রের মতো রাউন্ড ক্যারেক্টার হয় না তবে ক্রাসিমা, মাতং, বরকত আলীরা যার যার ছাপ রেখে যান।

সন্তু লারমার জেএসএস, পাহাড়ের মানুষদের সাথে তথাকথিত বাঙালির সংঘাত, ধর্ম ও জাতীয়তাবাদকে পুঁজি করে একে অপরের ওপর ঝাপিয়ে পড়া সবই সঙ্গী হয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই উপন্যাস রচনা করতে গিয়ে। কিন্তু এসবের মাঝে মূর্ত হয়ে উঠেছে মানিকের নিজস্ব টানাপোড়েন, তার একাকী জীবন ও তার নীতি-নৈতিকতা। মানিকের প্রতি একধরণের মমতা পাঠকেরও সৃষ্টি হয়, সে মমতার কাঁথা বোনা থাকে শেষ পর্যন্ত, শেষে এসে যেন তাকে মুড়ে দেয়া যায় পাহাড়ের মতো। পাঠকমন ঠিকই কল্পনা করে নেয় নীল পাহাড়ে শুয়ে মানিক বৃষ্টিতে ভিজছে। চোখের জল না এখন তার হাসি ধুয়ে নিচ্ছে…।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.