:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মোশতাক আহমদ

কবি, গদ্যকার

পুনর্মুষিক
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

অক্ষরবন্দী জীবন

পুনর্মুষিক

এক যুগ প্রায় কোনো কবিতা না লিখেই আমার জীবনযাপনে কোনোই অসুবিধা হয়নি। তাহলে সারাজীবন কোনো কবিতা না পড়ে জীবন কাটিয়ে দেয়া কি মানুষের জন্য অসম্ভব কিছু? নিশ্চয়ই না। কথিত সেই এক যুগে নিজের পছন্দমাফিক বইপত্রও তেমন কেনা হয়নি। সময় পেলে ঠিকই মনে করে দিতে পারব সেই এক যুগে কি কি বই কিনেছিলাম- অরুন্ধতী রায়ের গড অফ স্মল থিংসের বাংলা অনুবাদ, শাহাদুজ্জামানের প্রথম দিকের তিনখানি বই, জয় গোস্বামীর কবিতাসংগ্রহের দ্বিতীয় খণ্ড – তালিকা হয়তো এর চেয়ে সামান্য কিছু লম্বা। সেই এক যুগে আমি বইমেলাগুলোতেও হাজির হতে পারিনি। চাকুরি ছিল ঢাকার বাইরে, সাহিত্যের সাথে সংযোগ মূলত দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতার মাধ্যমে। কবিতা নয়, এই সময়ে আমি গোটাপাঁচেক গল্প লিখেছিলাম আর সবগুলো গল্পই প্রকাশিত হয়েছিল জাতীয় দৈনিকে।

ঢাকায় ফিরে এলাম। বইমেলায় যেতে শুরু করলাম। এর মধ্যে একদিন পাঠসূত্রের প্রকাশক, আমার পুরনো দিনের বন্ধু রাজীব নূর ফোন দিয়ে আমার কাছে একটা সায়েন্স ফিকশনের পাণ্ডুলিপি চেয়ে বসলেন। আমি তাঁকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছিলাম যে আমি সায়েন্স ফিকশন লেখক নই (কিংবা আমি সেই মোশতাক নই!) – গতায়াত শুধুই কবিতা আর গল্পে; তবে এই সত্য বোঝাতে হয়েছিল মুখোমুখি বসে। সেদিন রাজীব আমাকে তার প্রকাশনীর কয়েকটা বই উপহার দিয়েছিলেন, সাথে প্রেরণা নিয়ে ফিরেছিলাম দীর্ঘ দেড় যুগ পরে নতুন কবিতার বই প্রকাশের।

পড়া আর লেখা দুইই আবার গতি পেল। চট্টগ্রাম–জীবনে পুলক পাল বলতেন আপনার তো ‘ঝরনা আমার আঙুলে’! সেই প্রবাহ তো আর ফিরে আসেনি। তবে আমি যে পুনর্মুষিক হতে পেরেছিলাম তাতেই খুশি। অক্ষরবন্দী জীবনের এই ছোট্ট পর্বটি লেখার উদ্দেশ্যই হল রাজীব নূরের কাছে আমার প্রত্যাবর্তনের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন।

উপহার পাওয়া বইগুলো কয়েকটা ছিল এরকম- জাকির তালুকদারের অনূদিত গল্পের বই, আলফ্রেড খোকনের কবিতা ফাল্গুনের ঘটনাবলীর ইংরেজি অনুবাদ, মিনার মাহমুদের মনে পড়ে রুবী রায় গল্পগ্রন্থ  (সাপ্তাহিক বিচিত্রায় নামগল্পটি পড়েছিলাম), অলকা নন্দিতার কবিতা উজানি পাড়ার জুঁই, শেলী নাজের কবিতা চর্যার অবাধ্য হরিণী – আর কি কি বই ছিল এ মুহূর্তে মনে নাই তবে রাজীব আমাকে সুমন রহমানের কবিতার বই (সম্ভবত সিরামিকের নিজস্ব ঝগড়া)  দেখিয়ে বলেছিলেন- ‘ইনি একজন তারকা কবি,  কিন্তু কবি বিদেশে আছেন বলে বন্ধুরাও তার বই কিনছে না; বিক্রয় আশংকাজনক!’ আমি একটি রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হলাম। এর আগে, পাঠসূত্রের ঘরভর্তি মানুষ ও অন্যান্য গল্প (আহমাদ মোস্তফা কামাল) সেবার মেলা থেকে কিনেছিলাম।

পরের বইমেলায় আমার মেঘপুরাণ কবিতার বইটি বের হল। বিক্রি হয়েছিল সেই ‘তারকা কবি’র মতোই! পড়া আর লেখা দুইই আবার গতি পেল। চট্টগ্রাম–জীবনে পুলক পাল বলতেন আপনার তো ‘ঝরনা আমার আঙুলে’! সেই প্রবাহ তো আর ফিরে আসেনি। তবে আমি যে পুনর্মুষিক হতে পেরেছিলাম তাতেই খুশি। অক্ষরবন্দী জীবনের এই ছোট্ট পর্বটি লেখার উদ্দেশ্যই হল রাজীব নূরের কাছে আমার প্রত্যাবর্তনের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন।

অধিকন্তু ন দোষায়, এর পর পর প্রকাশিত হল ফরিদ কবির আর সাখাওয়াত টিপুর সাহিত্য মাসিক নতুনধারা। উত্তরাতে চাকুরির প্রমোশনের পরীক্ষা দিয়ে নিচে নেমে হকারের কাছে প্রথম সংখ্যাটি পেয়েছিলাম; পত্রিকাটা আমাকে দখল করেই নিল। প্রথম কৈশোরের দ্বিধায় লেখা পাঠাতে লাগলাম– ছাপাও হল কিছু কবিতা, গদ্য, অনুবাদ। এই হচ্ছে আমার ফিরে আসার গল্প।

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.