:
Days
:
Hours
:
Minutes
Seconds
Author Picture
মোশতাক আহমদ

কবি, গদ্যকার

কবিতাপাঠের গল্প
প্রচ্ছদ: রাজিব রায়

নারসিসাসের জল আয়না -১

কবিতাপাঠের গল্প

আমার আবৃত্তি করার এলেম নাই। অবশ্য এই ধ্রুব সত্যি কথাটা আমার জানাই হত না যদি না কোনো অনুষ্ঠানে যাবার সময় আমার স্ত্রী আমাকে পই পই করে বলে না দিতেন যে, ‘তুমি আবার নিজের কবিতা পড়তে যেও না যেন! যা কর্কশ গলা তোমার!’ কিন্তু নিজের কবিতা দশজনের সামনে পড়তে আমি খুব ভালবাসি। তাই যাবতীয় খামতি নিয়েও পড়ে যাচ্ছি।

জনসমক্ষে প্রথম নিজের কবিতা পড়েছিলাম ক্লাস নাইনে উঠে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের শহিদ মিনারে, প্রভাত ফেরির পর। আর সর্বশেষ নিজের কবিতা পড়েছি গত বছর ম্যাজিক লন্ঠনের আড্ডায়। কলেজ জীবনে অনেক কবিতা রেকর্ড করেছি টেপ রেকর্ডারে, আবহ সঙ্গীত জুড়ে দিয়ে। সেসব কাব্যফিতা আজ আর নাই। মাঝখানের চার দশকের কবিতাপাঠের গল্প নিয়ে এই লেখা।

একাশি সালের সেই একুশে ফেব্রুয়ারির সকালে কবিতা পাঠের জন্য কবিতা জমা দিতে হয়েছিল। আগের সন্ধ্যায় রফিক কায়সার স্যারের সবুজ বাতি পাওয়া কবিতাটি ফেরত পেলাম ডাইনিং হল প্রিফেক্ট কাজী আরিফ ভাইয়ের মারফত। মনোনীত কবিতাটি ছিল শামসুর রাহমানের ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে’ কবিতারই প্রতিধ্বনি, যা কিনা সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানী থেকে পড়েছিলাম যদ্দুর মনে পড়ে। আমি আগের বিকেলে বসে গেলাম মৌলিক একটি কবিতা লিখতে, যেখানে শৈশবের ‘ধূসর অতীতের ছোট বাবু’র মুখোমুখি হয়েছিলাম। তখনো ‘দুঃসময়ে মুখোমুখি’ কবিতাটি পড়িনি, যেখানে শামসুর রাহমান ‘বাচ্চু’র সাথে কথা বলছিলেন (বাচ্চু , কবিরই ডাকনাম)। সেদিন আমি ছাড়া বাকি তিন শতাধিক শ্রোতা ছিলেন পাঞ্জাবীতে কালো ব্যাজ পরিহিত। আমার পরনে ছিল খাকি, লাল ক্রস বেল্ট পরা;  কেননা আমি সেদিন ডিউটি ক্যাডেট ছিলাম!

এর পরে সোজা চট্টগাম মেডিকেল কলেজের ঐতিহাসিক মোজাম্মেল চত্বরে সাতাশির সাতই মার্চে পড়েছিলাম ছোট ছোট কয়েকটি ‘বঙ্গবন্ধু এলিজি’। সতীর্থরা মিছিল শেষে কবিতা শুনেছিলেন। এরশাদ আমল। কবিতা ছিল প্রতিবাদের হাতিয়ার। নব্বইয়ের পর থেকে কবিতা আবার নিভৃত পাঠের জায়গায় চলে এসেছে। একই বছর ক্যাম্পাসের ঈদ পুণর্মিলনীতে পাঠ করা প্রেমের কবিতার সিরিজ ‘বুদবুদ’ সহ আরো কয়েকটি কবিতা পড়ে আমি ক্যাম্পাসে কবি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠি। নির্মলেন্দু গুণের ‘আপনাদের কি এরকম হয়’ এর আদলে একটি আবৃত্তিযোগ্য কবিতাও তৈরি করেছিলাম পাঠের জন্য। প্রতি প্যারাগ্রাফ শেষেই শ্রোতারাও সাড়া দিচ্ছিলেন ‘হয়, হয়!’ বলে! সেদিন তপন চৌধুরী শুধু হারমোনিয়াম আর তবলা দিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত পলাশ আর শিমুল ফুটিয়ে গেছেন।

কলেজ জীবনে অনেক কবিতা রেকর্ড করেছি টেপ রেকর্ডারে, আবহ সঙ্গীত জুড়ে দিয়ে। সেসব কাব্যফিতা আজ আর নাই। মাঝখানের চার দশকের কবিতাপাঠের গল্প নিয়ে এই লেখা।

পরের মাসেই পহেলা বৈশাখে আমরা ‘ধ্বনি’ নামের একটি সর্বদলীয় (নির্দলীয় বলব না) সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে প্রথম বারের মত বড় আকারে নববর্ষের উৎসব করি। আয়োজনের মধ্যে ছিল অভিজাত ছাপাখানা আইনান থেকে বাকিতে ছাপা একটি মুদ্রিত কবিতাপত্র, তিন কবির (জিললুর রহমান, রাশেদ আনোয়ার আর আমি) সাক্ষাতকারসহ তিনটি দেয়ালিকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নতুন ছাত্র ছাত্রীদের (আমাদের পরের ব্যাচ) বরণ করে নেয়া এবং পান্তা ইলিশ! সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা তখনো ‘ফিলার’ । ডাকসাইটে শিল্পী নূতন, মিতা, ডালিয়া, কাঁকন, সৌরেন্দ্র, হিমেল, সুভাসদের গানের কোনো এক ফাঁকে পড়েছিলাম ‘চিবুক ছুঁয়ে বলেছিলাম’। আমার কবিতা তখন আবুল হাসানময়! সন্ধানীর নবীন বরণেও কবিতা পড়লাম। সেই মঞ্চে আমরা কয়েকজন বন্ধু মাথায় গামছা বেঁধে রুদ্রের ‘রাস্তার কবিতা’ নামের পুঁথি পাঠ করেছিলাম।

ঢাকায় তখন জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু হয়ে গেছে, সাতাশি থেকেই। চট্টগ্রামে প্রতিবাদী কবিতা উৎসব শুরু হল পরের বছর। ঢাকার বেশ কয়েকজন কবি ও আবৃত্তিকারও এসেছিলেন- হেলাল হাফিজ, বিমল গুহ, ইস্তেকবাল হোসেন, রুবী রহমান, লুতফুল হোসেন প্রমুখ। মুসলিম হলের সেই আয়োজন ছিল জমজমাট, জনাকীর্ণ। ক্যাম্পাসের বাইরে সেই প্রথম কবিতা পড়া। আগের দিন নাম লেখাতে গিয়ে দেখি দীর্ঘদেহী শিশির দত্ত গমগমে কন্ঠে হাঁকডাক করে সবাইকে কাজের তাড়া দিচ্ছিলেন, ‘কোথায় গেলে ওমর কায়সার!’ প্রথম সন্ধ্যায় অনেক কষ্ট করে ভিতরে ঢুকে হেলাল হাফিজের কষ্ট আর কেয়া চৌধুরীর আবৃত্তি (‘জোনাকি’ কবিতার কথা মনে আছে) শুনতে হয়েছিল। পরদিন সকালে বন্ধু এরশাদ আর রাজু আমার সংগী হল। আমি পড়েছিলাম ‘প্রেমের কবিতা নয়’– কবিতার এপিগ্রামে তখনও আবুল হাসানের লাইন– ‘যদি সে সুগন্ধি শিশি তাকে নিয়ে যাক অন্য প্রেমিক’। এরশাদ ছবি তুলেছিল আমার।

এরপর ক্যাম্পাসের নবীন বরণে কবিতা পড়েছি । ছাত্রজীবনের পরীক্ষার প্রস্তুতি আর অকৃতকার্যতা নিয়ে তারাপদ রায়ের ‘দারিদ্ররেখা’ কবিতার প্যারোডি পড়েছি আমাদের ব্যাচের সমাপনী উৎসবে। এ বছরের শেষে আমাদের ব্যাচের বৈশ্বিক পুনর্মিলনী; সেখানে বন্ধুদের কেউ কেউ কবিতাটি আবারো শুনতে চায়।

আমি নানা উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি। অনেক সময় ঢাকার বাইরে গিয়ে কিছু মিটিং, ট্রেনিং বা ওয়ার্কশপ করতে হয়। কখনো কখনো রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকে। তখন নিজের পছন্দসই কবিতা পড়ার সুযোগ হয়। আমি সবচেয়ে বেশি পড়েছি ‘সড়ক নম্বর দুঃখ/ বাড়ি নম্বর কষ্ট’ আর ‘ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি’ পর্বের কবিতা নদীহীন শহরের নদী। নদীহীন শহরের নদীতে এক ডজন শাড়ির নাম আছে। নারী সহকর্মীদের বিস্ময় উৎপাদনের জন্যেই কবিতাটি পড়ি। কিছু কিছু প্রশিক্ষণ সেশনে গেলে কবিতা পড়তে অনুরুদ্ধ হই। আগে অপ্রস্তুত হতাম। এখন ই-বুকের যুগ। সেই বইয়ের ই-বুক আছে আমার সব কটি বইয়ের। সেখান থেকেই কবিতা পড়ি।

অনেক বছর ঢাকার বাইরে কাজ করে এসে ঢাকায় থিতু হয়েছি। একদিন ‘নতুনধারা’ থেকে সাখাওয়াত টিপু ফোন দিয়ে আমন্ত্রণ জানালেন দশ কবির কবিতাপাঠ নিয়ে তাদের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। এর আগের অনুষ্ঠানে পাবলিক লাইব্রেরিতে শ্রোতা হিসেবে গিয়েছিলাম বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায়। সম্ভবত সে কারণে আয়োজকরা আমার কথা মনে করেছিলেন! বিভিন্ন দশকের নয় জন কবির সাথে আমি আমার তিনটি বই থেকে পাঁচটি কবিতা পড়লাম। এর বছর দুই বাদে আবারও নতুনধারার আমন্ত্রণ। সেদিন মূলত আড্ডার কথা ছিল। কবিতা পড়ার প্রস্তুত ছিল না। আমি নতুনধারার সদ্য প্রকাশিত (সম্ভবত শেষ সংখ্যা) সংখ্যা থেকে দুটো কবিতা পড়লাম। সে অনুষ্ঠানে বইমেলা নিয়ে কিছু গঠনমূলক আলোচনা হয়েছিল নাঈমুল ইসলাম খানের আগ্রহে।

কক্সবাজারে কর্মসূত্রে দু বছর থাকার সময় স্থানীয় কবিদের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছি। একবার একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে কবিতা পড়ব বলে গিয়েছি। কবিতার অনুষ্ঠান ভালই চলছিল। কবি অমিত চৌধুরী, সম্ভবত আমন্ত্রিত ছিলেন না, এলেন। তিনি ঠোঁটকাটা কবিতার জন্য বিশেষ খ্যাত। তাঁর আসার সাথে সাথেই বলা হল অনুষ্ঠানের মাইকে বিভ্রাট দেখা দিয়েছে; কবিতাপাঠ এখানেই স্থগিত! এই অভিজ্ঞতা অভিনব ছিল।

টেলিভিশনে মাসউদুল হকের কল্যাণে দুবার কবিতা পড়ার সুযোগ পাই। প্রথমবার এক জাতীয় শোক দিবসে কৈশোরে লেখা ‘দেয়ালের মুখ’ পাঠ করি। পরেরবার বিজয় দিবসে পড়া ‘বিজয়ের মঞ্চে স্বাধীন পূর্ণিমা’ ছিল দুটি কবিতার ফিউশন। সেবার আমি স্ত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে দিয়ে রামপুরা টিভি সেন্টারে গিয়েছিলাম। বাসায় ফেরার পথে গিরিশ গৈরিক, মাহবুব মিত্রদের সাথে হাতিরঝিলের ওয়াটার বাসে করে ফিরেছিলাম। ছবি তোলা হয়েছিল পিয়াস মজিদ, রাসেল রায়হানদের সাথে।

কক্সবাজারে কর্মসূত্রে দু বছর থাকার সময় স্থানীয় কবিদের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছি। একবার একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে কবিতা পড়ব বলে গিয়েছি। কবিতার অনুষ্ঠান ভালই চলছিল। কবি অমিত চৌধুরী, সম্ভবত আমন্ত্রিত ছিলেন না, এলেন। তিনি ঠোঁটকাটা কবিতার জন্য বিশেষ খ্যাত। তাঁর আসার সাথে সাথেই বলা হল অনুষ্ঠানের মাইকে বিভ্রাট দেখা দিয়েছে; কবিতাপাঠ এখানেই স্থগিত! এই অভিজ্ঞতা অভিনব ছিল। মানিক বৈরাগীর উদ্যোগে গরাণ সাহিত্য পরিষদ আমাকে বিদায় সংবর্ধনা দেয় পৌর মিলনায়তনে; সেখানে আমার বেশ কিছু কবিতা পাঠ করি, অন্যেরাও আমার কবিতা পড়েন। ২০১৪ সালে আমি কক্সবাজার সফরে যাই। একই সময়ে বন্ধু, আবৃত্তি শিল্পী তিতাস ও শায়লাও বেড়াতে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কক্সবাজারের বন্ধুরা ‘সমুদ্র তর্জমায় মাতি ফেনিল উচ্ছ্বাসে’ নামের একটি অনুষ্ঠানে আমাদের কথা ও কবিতার যুগলবন্দী করার সুযোগ করে দিয়েছিল। সেবার অনেক বছর পর তিতাসের সাথে দেখা। বিকেলে দুজন মিলে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমার ‘ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি’র পাণ্ডুলিপি থেকে তিতাস কি কি কবিতা পড়বে আর ফাঁকে ফাঁকে আমাকে কিভাবে প্রশ্ন করবে, সে সবের। শায়লা উপস্থাপনা করেছিল চমৎকার। তিতাস আবৃত্তি করার পর আমি নিজেও কয়েকটা কবিতা পড়েছিলাম।

দেশের বাইরে কবিতা পড়েছি কানাডায়। ২০১৬ সালের নভেম্বরের মাইনাস তাপমাত্রায় টরন্টো পৌঁছাবার পর পরই সকালবেলা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের পুনর্মিলনীতে আমার ‘তিন ভুবনের যাত্রী’র মোড়ক উন্মোচন হল, তারপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমার চারটি বই থেকে গোটাপাঁচেক কবিতা পড়েছি। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডা থেকে আসা বড় আর ছোট ভাই বোনেরা ‘বুকপকেটে পাথরকুচি’ কিনেছিলেন ২০ ডলার করে। দু’দিন পরের সন্ধ্যায় ড্যানফোর্থের বাঙালি পাড়ায় মারহাবা নামের এক গ্লোসারি শপে কবি মাসুদ খান আমার অপেক্ষায় ছিলেন। হাতে ডিম, হলুদ পাউরুটি- হয়ত পরদিনের প্রাতঃরাশের প্রস্তুতি। আমাকে বাঙালি রেস্তোরাঁয় ডিনার করাবেনই। তার আগে ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে আমাকে কবিতা পড়ে শোনাবার আদেশ দিলেন! আমি পড়ি আর উনি মাথা দোলান। ছন্দের অঙ্ক কষতে গেলে আমার কবিতার ফলাফল ১ কিংবা ০ না হয়ে ভগ্নাংশ হয়ে যায়; তাই কবির সামনে পড়ার সময় অধোবদন ছিলাম। পরের সপ্তাহে হ্যামিল্টনে এরশাদের বাড়িতে গভীর রাত পর্যন্ত ঘরোয়া অনুষ্ঠান। নূতনের গান, এরশাদের কৌতুক, সালাহউদ্দিন ভাইয়ের ঘোরের মধ্যে ‘আট বছর আগের একদিন’ আবৃত্তি– তার মধ্যে আমিও সাধ মিটিয়ে কয়েকটা কবিতা পড়ে ফেললাম।

ম্যাজিক লণ্ঠনের ৭০২ নম্বর সাপ্তাহিক কবিতার আড্ডাটি  ছিল ২০১৯ এর মধ্য জুলাইতে। বর্ষা-ডোবা নগরীতে বেশ কিছু মানুষ জুটে গিয়েছিলেন কবিতা শুনতে। আমি ছিলাম আড্ডার মধ্যমণি। এই আড্ডায় আমি আমার বিভিন্ন সময়ে লেখা প্রতিনিধিত্বমূলক কিছু কবিতা পড়ি-সড়ক নম্বর দুঃখ বাড়ি নম্বর কষ্ট, পঁচিশ বছর বয়স, মেঘপুরাণ,  ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি, বুকপকেটে পাথরকুচি আর অপ্রকাশিত ডুবোজাহাজের ডানা থেকে। শুরুতে আমাকে কবি রতন মাহমুদ পরিচয় করিয়ে দেন।

আমার কবিতাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, শেখ বাতেন, আলম তালুকদার, শফিক ইমতিয়াজ, ইউসুফ রেজা, শাহিদা ফেন্সি। এ যাবত আমার কবিতা নিয়ে শুনে এসেছি বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রশংসা কিংবা নিছক ‘বুঝি না’; আর দেখে এসেছি, মেনে নিয়েছি অনেকেরই নীরবতা। এই আড্ডার আলোচকগণ প্রথমবারের মতো আমার কবিতাগুলো নিয়ে পূর্ণাংগ আলোচনা করলেন। শফিক ইমতিয়াজের আলোচনায় কবি হিসেবে আমার প্রস্তুতি আর পাঠের কথা এসেছে, আমার কবিতার বিষয় আশয়ের কথা এসেছে, মীথ ব্যবহারের কথা এসেছে, ছন্দের কথা এসেছে, এসেছে সীমাবদ্ধতার কথাও। আনন্দিত হয়েছি আমার তরুণ বয়সের কবিতা ‘সড়ক নম্বর দুঃখ বাড়ি নম্বর কষ্ট’ নিয়ে আলম তালুকদার কিংবা রেজাউদ্দিন স্টালিনের মুগ্ধতায়। ইউসুফ রেজা বলেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ আর সবুজ হোটেলের সাহিত্য আড্ডায় আমার বিকাশের পর্ব নিয়ে। আফসোস হচ্ছে রেজাউদ্দীন স্টালিন, শফিক ইমতিয়াজ বা শেখ বাতেনের আলোচনাটির লিখিত ভাষ্য আর পাওয়া যাবে না যেখানে নাগরিক জীবনের যন্ত্রণা কিংবা বহির্জগতের সাথে মিথস্ক্রিয়া– এই অনুষঙ্গগুলোর অভাবে আজকের কবিতা কীভাবে পাঠকবিমুখ হয়ে যাচ্ছে তা মনোজ্ঞভাবে তুলে এনেছিলেন। রেজাউদ্দীন স্টালিন এ প্রসঙ্গে যথার্থই বলেছে, ‘কবিতায় বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে সামাজিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলতে  হবে’। শেখ বাতেনের কথাটিও প্রণিধানযোগ্য- ‘আমরা পাহাড়ে যাই, পাহাড়ের নান্দনিকতা নিয়ে ফিরে আসি, কিন্তু পাহাড়ের  যন্ত্রণাগুলো উঠে আসে না।’ অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আমার বক্তব্যে আমি বলেছি কবিজীবনে তিনটি পর্যায়ে তিনটি পাথেয়র উপর ভিত্তি করেই আমি লিখে যাচ্ছি; এক, শামসুর রাহমানের ‘সংহত কর বাক, থামাও প্রগলভতা; দুই, জীবনানন্দ দাশের ‘উপমাই কবিতা’; তিন, উত্তর আধুনিকতার সূত্রগুলো থেকে ‘অন্তর্বয়ন’ ব্যবহার করা। আমার এই কবিতাভাবনা নিয়ে বিস্তারিত বলার ইচ্ছা আছে।

নিজের কথা নিজেই লিখতে শুরু করলাম। অন্যে লিখলে ফাটিয়ে ফেলতে পারে!

এরপরে পড়ুন-  নারসিসাসের জল আয়না -২

Meghchil   is the leading literary portal in the Bengali readers. It uses cookies. Please refer to the Terms & Privacy Policy for details.